আমি এই বয়সে আন্ধা হইলে আমার পোলা দুইডা মানুষ হবে ক্যামনে?

  • গুলশান জাহান সারিকা, স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

বগুড়ার নাড়ুলী মধ্যপাড়া গ্রামের টেকনিশিয়ান মোহাম্মাদ শামীম। মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন শিটের। আয় দিয়েই চলত বাবা, মা, ছোট ভাই, স্ত্রী ও দুই সন্তানের পরিবার। অভাব অনটনের মাঝেও ছিল সুখের সংসার।

তবে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাঝেই কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। বগুড়ার সাতমাথা এলাকার পথে আটকা পড়েন শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘাতে। এসময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন মোহাম্মাদ শামীম। গুলি এসে লাগে ডান চোখে, লুটিয়ে পড়েন তিনি। আন্দোলনরতদের কয়েকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান শামীমকে। তবে মেলেনি ভালো চিকিৎসা।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে চোখের ভিতরে গুলি থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শামীমকে রেফার করা হয় ঢাকা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে। সেখানে পর পর দুটি অস্ত্রোপচার করেও বের করা যায়নি ডান চোখের গুলি। অপর চোখেও প্রভাব পড়েছে গুলির। এতে দিন দিন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে শামীমের সবকিছু। পাঁচ সদস্যের যৌথ পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি তিনি, এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছে শামীমের গোটা পরিবার।

শামীম জানান, বগুড়া জেলার সাতমাথা এলাকায় ৪ আগস্ট হঠাৎ ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালানো শুরু করে সে সময় তার শরীরে প্রায় ৩০টার মতো ছররা গুলি লাগে। বাম চোখে ঠিক পাশে একটি গুলি লাগলেও আরেকটি গুলি লাগে ডান চোখের ভেতরেই। পরপর দুটি অপারেশন করেও বের করা যায়নি। ডাক্তার বলেছেন, গুলি বের করতে গেলে চোখ একেবারে বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

অশ্রুসজল চোখে শামীম বলেন, 'ডাক্তার বলছেন দেখলেও দেখতে পারেন, না দেখতেও পারেন, আল্লাহ ভরসা। ডান চোখে গুলি লেগে অন্ধ, বাঁ চোখেও ঝাপসা দেখি। এখন আমার পরিবার চলবো ক্যামনে? বর্তমান আমার ইনকাম সোর্স সবদিক দিয়ে বন্ধ। আমি এই বয়সে আন্ধা হইলে আমার পোলা দুইডা মানুষ হবে ক্যামনে? ওগোরে দেখবো কেডাই? আমি একা ইনকাম করে ওগোরে চালাই। আমার বাপে বৃদ্ধ। তিনডা বোন বিয়া দিছি। এখন আমার পরিবাররে দেখার কেউ নেই।' 

চক্ষু হাসপাতালে ২৫ দিন ধরে দেখাশোনা করছেন তার বোনের ছেলে। তিনি বলেন, 'সরকারের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া যে চোখ হারিয়ে গেছে তা আর ফেরত পাওয়া সম্ভব না; এক চোখে ঝাপসা দেখে কাজ করে খেতেও পারবে না। চিকিৎসা করে যদি চোখটা ঠিক করা যায়, আর না গেলে পরিবার চলার মতো যেন সহায়তা করা হয়; না হলে বৃদ্ধ বাবা-মা-ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়বে পুরো পরিবার।' 

এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন তারা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, কোন সমস্যা মনে করলে সাথে সাথে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এ বর্তমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত প্রায় ৪০ জন এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের বেশিরভাগই এক চোখে গুলিবিদ্ধ বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।