তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। বুধবার (৯ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সাংবাদিকদের নিকট প্রত্যাশা ও করণীয়’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে সভায় বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, লীড পলিসি এ্যাডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, গ্লোবাল টিভির চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শামীম মেহেদী, প্রথম আলোর যুগ্ম–সম্পাদক সোহরাব হাসান, শাহনাজ বেগম পলি, নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা—এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ঢাকা ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম।
এছাড়াও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৭১ টিভির স্পেশাল করস্পনডেন্স সুশান্ত কে সিনহা। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজারস মোঃ আব্দুস সালাম মিয়া, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের কমিউনিকেশনস ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা।
তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশলে বিভ্রান্ত না হওয়ার কথা জানান সুশান্ত কে সিনহা। তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর সংশোধনী আনার যে উদ্যোগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত এবং জনবান্ধব উদ্যোগ। তবে বেশ কিছু ধাপ পার হলেও আইনটিকে চূড়ান্ত রূপ পেতে হলে আরো কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এখনও এটি পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানা রকম বাধা আসার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশল ও অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভ্রান্তি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদেরকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।
রাশেদ রাব্বি বলেন, তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আয় আসে তার চেয়ে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় ৩৪ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আয় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা এবং চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা (ক্যান্সার সার্ভে-২০১৮)। সুতরাং মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা।
শামীম মেহেদী বলেন, তরুণরা ই-সিগারেটের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড: গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের কারণে মুত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী তামাক। তামাকের কারণে ফুসফুস ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক অন টোব্যাকো কন্ট্রোল—এফসিটিসি’তে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হলেও ধুমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ এবং শক্তিশালী করা অতি জরুরি। যা তামাকমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে।