‘ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকায় যেতে বিজিবির ওপরও চাপ ছিল’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকায় যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ওপরও চাপ ছিল বলে দাবি করেছেন বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিজিবি সদর দফতরের আয়োজিত সার্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আন্দোলনে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে তেমন কেন বিজিবি পারছে না- এরকম জবাব আমাকে দিতে হয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আমি এখানে থাকতাম কিনা নিশ্চতা করে বলতে পারছি না। সরকারি বাহিনীর প্রধান হয়ে সরাসরি আদেশ অমান্য করা দুষ্কর। পরিস্থিতি আপনারা জানেন। আমি যদি তখন সরকারের অর্ডার অমান্য করি তাহলে কি আমি কর্মস্থলে ফেরত আসতে পারবো কি-না তার গ্যারান্টি আপনি বা আমি কেউ দিতে পারতাম? তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডিনাই করেছি। আবারও বলছি, পরিস্থিতি পরিবর্তিত না হলে আমি এখানে (বিজিবি) থাকতে পারতাম কি-না তার নিশ্চয়তা দিতে পারতাম না।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অনেকে বিজিবি’র গেটে মিষ্টি নিয়ে আসছে। বিজিবি যদি এপিসির ওপরে অস্ত্র ছিল না। নরমালি কিন্তু এলএমপি বা মেশিনগান থাকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক আহত। আহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে আমরা অনেককে বিজিবি হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের এখনো আটজন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের যাবতীয় খরচ বিজিবি দিচ্ছে।

বিজিবি ডিজি বলেন, জুলাই মাসের শেষের দিকে যখন গণগ্রেফতার কার্যক্রম শুরু হলো তখন নির্দেশনা ছিল গ্রেফতার কার্যক্রমে অংশ নিতে। কিন্তু বিজিবি এক জনকেও গ্রেফতার করেনি। আমি বলেছি, গ্রেফতার কার্যক্রমের জন্য বিজিবি প্রশিক্ষিত ও প্রস্তুত না।

তিনি বলেন, র‍্যাবের মতো বিজিবিকেও ছাত্র আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। আন্দোলনের মধ্যে বিজিবির হেলিকপ্টার একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এসব বলার বা পরিষ্কার করার সুযোগ তখন হয়নি। আমরা তখন কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছি, কি রকম প্রেসার ছিল তা আমাদের কমান্ডাররা জানেন।

বিজিবি ডিজি বলেন, এরপরও একটা দুটো ঘটনা ঘটেছে। একজন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার অফিসার গুলি করছে। ওই ঘটনায় বিজিবি থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। তাকে শুধু ওএসডি করা হয়নি, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক সুপারিশ করে লে. কর্নেল পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তাকে বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যেন সেনাবাহিনীর অধীনে কার্যকর হয়। তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, তার সঙ্গে একজন মেজর ছিলেন। যদিও তিনি গুলি করেননি। তবে তিনি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তাকেও আমরা কিছুটা শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছি।

বিজিবি ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী দাবি করে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে এমন অনেক জায়গায় বিজিবি মোতায়েনই করা হয়নি, কিন্তু বিজিবি’র কথা বলা হয়েছে। একজন রিকশাচালক বলছেন, তার ছেলে বিজিবির গুলিতে মারা গেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে তাকে অনুদান দিয়েছি, জানতে চেয়েছি যে তিনি নিজে দেখেছেন কিনা? তিনি বলেছেন, আমি তো দেখিনি।

তিনি আরও বলেন, কখনো যদি প্রমাণিত হয় যে, আন্দোলনে বিজিবির হাতে কিছু ঘটেছে বা কেউ মারা গেছে তাহলে তার সুবিচার নিশ্চিতে যা করা দরকার তা করা হবে। এটা শুধু আপনাদেরই বলছি না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিশনকেও আমরা একই কথা বলেছি।

৫ আগস্টে বিজিবিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ঢাকার ১৪টি এন্ট্রি (প্রবেশপথ) পয়েন্টে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। যাতে করে বাইরে থেকে ছাত্র-জনতা ঢাকায় প্রবেশ না পারে। কারণ সেদিন গণভবন ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। আদেশ একটা জায়গা থেকে পাইনি, দেশের সর্বোচ্চ জায়গা, মন্ত্রী, সিনিয়র ব্যক্তি নাম বলছি না, তারা আমাদের প্রেসারের মধ্যে রেখে ১৪টি জায়গায় পাঠায়। টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, পোস্তগোলা, আশুলিয়াসহ ১৪টা জায়গায় ৮০/৯০ জনকে মোতায়েন করা হয়।

৫ আগস্ট দুপুরে জানতে পারি, প্রত্যেকটি এন্ট্রি পয়েন্টে ১০ থেকে ১৫ হাজার করে ছাত্র-জনতা আসছে। আমি বলেছি সরে যাও। কারণ ছাত্র-জনতাকে গার্ড করার প্রয়োজন নেই। সেটা করতে গেলে হতাহতের সংখ্যা বাড়বে। এভাবেই আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। এখন বিজিবি পূজার নিরাপত্তায়, যৌথ বাহিনীর সঙ্গে অভিযানে কাজ করছে। এর বাইরে গাজীপুরের ৯ পদাতিক ডিভিশন আশুলিয়া শিল্প এলাকার নিরাপত্তায় কাজ করছে, বলেন তিনি।

এখন কেন বলছেন বিগত সরকারের সময় আপনাদের চাপ দিয়ে কাজ করানো হয়েছে? সে সময় কি আপনারা সরকারকে বলেছিলেন ছাত্র আন্দোলন দমন বা প্রতিহতে কাজ করতে পারবেন না? জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সরাসরি এ ধরণের কথা একটা বাহিনীর প্রধান হয়ে বলা দুষ্কর। সরাসরি বলতে গেলে বিভিন্ন পরিস্থিতি আপনারা জানেন। আমি যদি এ ধরণের অর্ডার ডিনাই বা অমান্য করি তাহলে কি আমি আমার কর্মস্থলে ফেরত আসতে পারবো কি-না তার গ্যারান্টি কি আপনি বা আমি কেউ দিতে পারতাম। তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডিনাই করেছি। যেমন গণগ্রেফতারে আমরা যাইনি।