প্রতিবন্ধী আল-আমিনের কাঁধে সংসারের বোঝা!

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ২৬ বছর বয়সী মো. আল-আমিন। দুই পা বাকা হওয়ায় চলাফেরা করেন লাঠিতে ভর দিয়ে। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে গত ৮ বছর ধরে লাঠিতে ভর দিয়ে চা বিক্রি করে সংসারের ঘানি টেনে চলেছেন তিনি। কিন্তু চা বিক্রির স্বল্প আয় দিয়েই চলছে সংসার ও ছোট বোনের পড়াশোনা।

আল-আমিনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সিধলা ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. শাহাজাহান পেশায় দিনমজুর। মা আলপিনা খাতুন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে আল-আমিন সবার বড়। দুই ভাই রুহুল আমিন ও নূরুল আমিন ঢাকায় থাকে, পরিবারের তেমন খোঁজ নেয় না। দুই বোনের মধ্যে খাদিজা আক্তার উচ্চ মাধ্যমিক ও সূজনা আক্তার প্রথম শ্রেণিতে পড়েন। তবে অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম তাদের।

বিজ্ঞাপন

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জন্ম থেকেই আল-আমিনের দুই পা বাকা ছিল। টাকার অভাবে পরিবার তার ভালো চিকিৎসা করাতে পারেনি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে লাঠিতে ভর দিয়ে চলফেরা শুরু করেন তিনি। বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও অভাবের তাড়নায়ও পড়াশোনার ইতি ঘটে পঞ্চম শ্রেণিতেই।

আল-আমিনের বাবা মো. শাহজাহান দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। কিন্ত বয়স বাড়ার সাথে কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ায় সংসারের টানাপোড়েন দেখা দেয়।

সংসারের হাল ধরতে ২০১৬ সালে বালিয়াপাড়া বাজারে চায়ের দোকান খোলেন আল-আমিন। নিজেই চা তৈরির পাশাপাশি লাঠিতে ভর দিয়ে চা পরিবেশন করেন।

আল-আমিন বলেন, প্রতিবন্ধী হয়ে সংসারের বোঝা হতে চাইনি। কর্ম করে নিজেই পুরো সংসার টেনে চলছি গত ৮ বছর ধরে। প্রতিদিন দোকানে পাঁচশ/ছয়শ টাকার বেশি বেচাকেনা হয়। দোকানের লাভের টাকা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে সংসার ও ছোটবোনের পড়াশোনার খরচ যোগানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল-আমিনের পরিবারের সহায় সম্বল বলতে ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নেই। সেখানে একটি জরাজীর্ণ ঘরে তাদের পরিবারের বসবাস। টাকার অভাবে ঘর সংস্কার করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আল-আমিনের আলপিনা খাতুন।

আল-আমিনের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া ছোট বোন খাদিজা আক্তার বলেন, আমি পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে চাই। আমাদের দুই বোনের পড়াশোনার খরচ আল-আমিন ভাই চালাতো। কিন্ত প্রতিবন্ধী ভাইয়ের আয়ে এখন আমাদের সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এখন পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হবে মনে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসিম বলেন, আল-আমিন প্রতিবন্ধী হলেও সংসারের বোঝা হয়নি। চা বিক্রি করে পুরো সংসার টেনে চলছেন। তার পরিবারের ঘর সংস্কার ও বোনের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য বিত্তবান ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ বলেন, আল-আমিন প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তিনি সংসারের বোঝা না হয়ে সংসারের হাল ধরেছেন। এটা একটা উদহারণ। আমরা আল-আমিনের পরিবারের ঘর মেরামত ও তার ছোট বোনের পড়াশোনায় সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। প্রতিবন্ধী হিসেবে আল-আমিন যেন সরকারের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পায় সেই বিষয়ে আমরা খোঁজ রাখবো।