পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ইউপিডিএফ’র ৭ দফা দাবি
পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম এবং জনগণের অধিকার, মর্যাদা ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৭ দফা দাবি প্রস্তাবনা করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল হক।
তিনি বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে জাতিগত নিপীড়ন চলছে৷ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। উপদেষ্টারা পাহাড়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেনি তারা দায়সারাভাবে ডিসি অফিসে গিয়ে প্রশাসন, সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলে চলে এসেছেন, সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেননি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও পাহাড়ী অঞ্চলে এই চুক্তি কোন শান্তি আনতে পারেনি। এ চুক্তির সামগ্রিক পর্যালোচনা করা উচিত। পাহাড়ের সমস্যা রাজনৈতিক এটা রাজনৈতিক ভাবেই সমাধান করতে হবে, সামরিক ভাবে এর সমাধান করা যাবেনা।
এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পাহাড় নিরাপদ না হলে সমতল ও নিরাপদ হবে না। তাই পাহাড়ে ঘটিত সমস্যা সমাধানে সরকার কে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।
এসময় সংগঠনের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম ও জনগণের অধিকার, মর্যাদা ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-
অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করতে হবে এবং বেসামরিকায়ন করে সেখানে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সকল দল ও সংগঠন স্বাধীনভাবে তাদের গণতান্ত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে;
স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদানপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে সংস্কার করতে হবে, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ তাদের নিজেদের স্বতন্ত্র জাতীয় পরিচয়, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়;
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা ও সেটলার পুনর্বাসনকে একত্রে বিবেচনাপূর্বক একে একটি সামগ্রিক রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং রাজনৈতিকভাবে তার সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে; এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে পাহাড়িদের কাছ থেকে বেদখলকৃত জমি ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সেটলারদেরকে জমি বা জীবিকাসহ অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে;
জাতীয় সংবিধানে পাহাড়িদের জাতিসত্তা ও ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং জাতীয় সংসদে সাধারণ আসন ছাড়াও তাদের জন্য একটি নারী আসনসহ ৪টি আসন সংরক্ষণ করতে হবে;
ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলসহ স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবত পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ ও কল্পনা চাকমার অপহরণ ও গুমসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত ও বিচার করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের সহায়তায় ও অংশগ্রহণে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হামলার ঘটনারও অনুরূপভাবে তদন্ত ও বিচার করতে হবে;
তথাকথিত সীমান্ত সড়ক ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিনষ্টকারী সকল সরকারী ও বেসরকারী প্রকল্প বাতিল করতে হবে; সরকারী চাকুরীতে ও সকল সরকারী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে পাহাড়িদের জন্য ৫% কোটা পুনর্বহাল করতে হবে;
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সভাপতি মাইকেল চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সালমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সীমা দত্ত, আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। ড. হারানোর রশিদ, অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের সভাপতি ফয়জুল হাকিম লালাসহ আরও অনেকে।