দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুর্গাপূজা উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এই শুভেচ্ছা জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এই দেশ আমাদের সবার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশ সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার ভাগ্য উন্নয়ন এবং সমান অধিকার সুনিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের সব নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
আন্দোলন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজধানীর বিভিন্ন থানা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় যানবাহন। ফলে অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কাজ।
এবার পুলিশি কাজে গতিশীলতা ফেরাতে ৫০টি গাড়ি যুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (লজিস্টিকস) হাসান মোহাম্মদ শওকত আলী।
বুধবার (৯ অক্টোবর) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে আয়োজিত থানার সক্ষমতা বাড়াতে নতুন গাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি। এসময় নতুন ১০টি গাড়ি হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (লজিস্টিকস) হাসান মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন, আপনারা সকলেই অবগত আছেন। পুলিশি কাজে যানবাহন একটি অন্যতম উপকরণ। অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের যানবাহন একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। এটিকে সামনে রেখেই পুলিশ কমিশনার মহোদয় আমাদের গাড়ির বহরে আরও ৫০টি গাড়ি যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই ৫০টি গাড়ির অংশ হিসেবে আজকে আমাদের গাড়ির বহরে ১০টি গাড়ি যুক্ত করবো। পর্যায়ক্রমে আরও ৪০টি গাড়ি যোগ হবে।
এই গাড়িগুলো আমাদের যে ৫০টি থানা রয়েছে সেই থানাগুলোতে বিতরণ করবো। অপরাধ দমন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসব গাড়িগুলো ব্যবহৃত হবে। প্রাথমিকভাবে এই ১০টি গাড়ি আমরা যেসব থানায় হস্তান্তর করবো সেগুলো হচ্ছে, উত্তরা পূর্ব থানা, গুলশান, তেজগাঁও, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মতিঝিল এবং নিউ মার্কেট থানা। প্রাথমিকভাবে এই দশটি গাড়ি এই থানাগুলোতে বিতরণ করা হবে। আমরা আশা করছি এই গাড়িগুলো যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে থানার কর্মকাণ্ড আরও গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখবে।
আন্দোলনের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তিনি বলেন, আমাদের ২২টি থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮৬টি, এর মধ্যে ৯৭টি গাড়ি পুড়ে গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে হিসাব করেছি আমাদের প্রায় ৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আমাদের যে সমস্ত লজিস্টিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা ইতিমধ্যে প্রায় রেডি করে ফেলেছি সবকিছু। পর্যায়ক্রমে থানাগুলোতে আমরা সেগুলো প্রেরণ করছি।
গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে চারটি কারখানায় কর্মবিরতি পালন করছেন শিল্প শ্রমিকরা। হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট ডিউটিসহ কয়েক মাসের বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে জেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক, তেলিরচালা এলাকার পূর্বানী, লগোজ, এটিএফ অ্যাপারেলস ও চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ বিগত কয়েক মাসের বেতন দিচ্ছেনা। এর আগে আন্দোলন হলে কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু বেতন সময় মতো পরিশোধ করেননি। এছাড়াও হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট ডিউটির বিলসহ বিভিন্ন ভাতা কারণ ছাড়াই আটকে রাখছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার মালিকপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা সমাধান করছে না।
নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিক জুলেখা বেগম জানান, গত দুই মাসের বেতন পাইনি। পরিবার নিয়ে এখন চলা মুশকিল হয়ে গেছে। চাকরি ছেড়ে যে দেশে চলে যাব তারও উপায় নাই।
শ্রমিক শরিফুল ইসলাম জানান, আমাদের পাওনা পরিশোধ না করে মালিকপক্ষ নিরুদ্দেশ। আমরা কিভাবে পরিবার নিয়ে চলব। কিভাবে জীবন কাটাব তারা কি তা দেখে। আমাদের বেতন পরিশোধ না করে মালিক তার কারখানা চালাতে পারবে না।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ ২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, গাজীপুরে চার কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে। তবে কোথাও কোন সড়ক অবরোধ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কারখানাগুলোতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ রয়েছে।
রাজধানীর গুলিস্তান হয়ে মোহাম্মদপুরের দিকে যাচ্ছিলো মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাস। পল্টন মোড়ের কাছে সচিবালয় পার হয়ে একটু সামনে আগাতেই পিছনের বাম্পারের এক পাশ খুলে পড়ে যায় রাস্তায়। অন্য পাশটি লেগে থাকায় অনেকটা আধ-ঝুলা বাম্পার নিয়েই চলছিলো গাড়িটি। পিছন থেকে ডাকাডাকিতে সংবিৎ ফিরে পায় চালক। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে নেমে আসে চালক ও সহকারী, জিআই তার দিয়ে ভাঙা অংশটি বেঁধে আবারও রওনা হয় গন্তব্যের পথে।
এ তো গেলো শুধু একটি বাসের কথা। রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে চলাচল করা অধিকাংশ সিটি বাসের দশা এই মালঞ্চের মতই। এক বাস অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে উঠে যায় বডির রঙ, ভেঙে যায় লুকিং গ্লাস। তবে নির্বিকার গাড়ির চালক, মালিক থেকে যাদের তদারকি করবার কথা সবাই।
এসব লক্কড়-ঝক্কড় রঙচটা বাসে অনেকক্ষেত্রেই থাকে না ইন্ডিকেটর লাইটও। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে দেখা যায় হেডলাইটসহ গাড়ির বিভিন্ন অংশ। ভাঙা জানালার কাচ, ভাঙা সিট, থাকে না কাভারও। তবুও বীরদর্পে চলে সড়কে। এসব অনিয়ম খালি চোখে দেখা গেলেও আইনের চোখ বাঁধা, তাই ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেও নেই আইনের প্রয়োগ।
সম্প্রতি এসব লক্কড়-ঝক্কড় বাস, ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাস্তা থেকে প্রত্যাহার ও পুরোনো ডিজেল চালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নিঃসরণ পরীক্ষা চালুর অনুরোধ জানিয়ে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গত রোববার বিআরটিএকে অনুরোধ জানিয়ে এই চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়টি। তবে এরপর দুই দিন পার হলেও কিছুই না জানার কথা জানান বিআরটিএ রোড সেফটি পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী।
বার্তা২৪.কম থেকে এই চিঠির বিষয়টি জানিয়ে পদক্ষেপের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কবে চিঠি দিয়েছে? আমি এখনো চিঠিটি দেখিনি। তবে ২০ বছরের পুরনো গাড়িকে বিআরটিএ থেকে কোন নবায়ন করা হয় না। এটা আমাদের অনেক আগের সিদ্ধান্ত। অনেক আগে থেকেই আমরা আর ২০ বছরের পুরনো গাড়ির লাইসেন্স নবায়ন করছি না।
তবে বিআরটিএ এসব পুরনো গাড়ির লাইসেন্স নবায়ন না করলেও সড়কে বন্ধ হয়নি চলাচল। নানাজনকে নানাভাবে ম্যানেজ করেই সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব গাড়ি। সড়কে শৃঙ্খলার অভাবে এক কোম্পানির গাড়ির সঙ্গে চলে অন্য গাড়ির প্রতিযোগিতা। এমন বিশৃঙ্খলায় রাস্তায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাসের হেলপাররাও।
এনিয়ে গত আওয়ামী লীগ সরকার বার বার নানা উদ্যোগের কথা জানালেও সড়কে তা কোন কাজে আসেনি। বহুবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে লক্কড়-ঝক্কড় এসব বাস সরিয়ে ফেলার, আছে হাইকোর্টের রায়ও কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এখনো বহাল তবিয়তে আছে এসব বাস, মিনিবাস।
গত বছরের অক্টোবরে সারা দেশে ৫ লাখেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন গাড়ি রয়েছে বলে জানিয়েছিলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিআরটিএ হিসাবে সারা দেশে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৬ ও ঢাকায় ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৪৫টি।
এ ব্যাপারে গত আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি উঠিয়ে নেয়ার জন্য মালিকদের প্রথমে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিলেন। পরবর্তী অল্প সময়ের অজুহাতে তা বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করেন। তবে তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি, সড়ক থেকে ওঠেনি এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে এক মতবিনিময় সভায় বাস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাজধানীর সড়কের যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ড্রাইভার ও বাস শ্রমিকদের এসব বিষয়ে আরও সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করার কথা জানিয়ে আরও বেশি মনিটরিং ও জবাবদিহির আওতায় আনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ডিটিসিএর সভাকক্ষে আয়োজিত ‘গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায়ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা বাস্তবায়নে কাজ করার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার।
সেদিন তিনি সকল অংশীদারদের পরামর্শ অনুযায়ী অতি দ্রুত বাসের রুট পারমিট চালু করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়মিত সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা করা, ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ করা, ই-টিকিট চালু করা এবং ধীরে ধীরে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে অটোমেশনে রূপান্তর করার ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
তবে এতো এতো কাগুজে সিদ্ধান্তের কোন সুফল পাচ্ছে না এসব গণপরিবহনে চড়া সাধারণ মানুষ। গত দুই মাসে রাজধানীতে বেড়েছে যানজট, অনিয়ম-বিশৃঙ্খলায় ত্রাহি অবস্থা গণপরিবহনে চড়া এসব মানুষের। আওয়ামী লীগ সরকার পতনে সড়ক হয়ে পড়েছিলো ট্রাফিক পুলিশ বিহীন। এখন ট্রাফিক পুলিশ ফিরে আসলেও পুরোপুরি সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশের এই ইউনিটটিকে।
এনিয়ে কথা হয় আবু সাইদ নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। গুলিস্তান থেকে মিরপুর যাবার উদ্দেশ্যে উঠেছিলেন শিকড় পরিবহন নামের একটি বাসে। বাসের সিটগুলো এতোটাই চাপা যে, বাধ্য হয়ে পা সিটের সামনে থেকে বের করে দুই সারি আসনের মাঝখানের চলাচলের জায়গায় কিছুটা বাঁকা করে রাখেন। তবে শান্তি নেই সেখানেও, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামায় একটু পরপরই পা চাপিয়ে রাখতে হচ্ছিলো সিটের সঙ্গে।
আবু সাইদ বলেন, বাসের অবস্থা তো খুবই খারাপ। আমরা খালি চোখেই দেখতেছি, এটি রাস্তায় চলাচল করতে পারে না। এর ফিটনেস থাকার কথা না, কিন্তু পুলিশের সামনেই তো চলতেছে। কেউ তো কিছু বলছে না। জরিমানাও করছে না। তাহলে তো চলবেই। আর আমাদের তো গন্তব্যে যাওয়া লাগবে সুতরাং গাড়ি যত খারাপই হক গাড়িতে উঠা ছাড়া তো আর কোন পথ নেই।
ফার্মগেট থেকে একই বাসে মিরপুর কাজিপাড়া যাবার উদ্দেশ্যে উঠেন ছামিউল হক নামের এক শিক্ষার্থী। পড়াশোনা করেন সরকারি বিজ্ঞান কলেজে। তাই এই রাস্তায় যাতায়াত তার প্রতিদিনের। কাজিপাড়া থেকে মেট্রোরেলে ফার্মগেটে আসতে পারলেও হাঁটতে হয় অনেকটা পথ তাই বাসেই করেন যাতায়াত।
ছামিউল বলেন, বাসে উঠতে গেলে সমস্যা নেই। আপনি যেখানেই হাত উঠাবেন বাস থামিয়ে আপনাকে উঠাবে কিন্তু নামাতে গেলেই ওদের শুরু হয় যত সমস্যা। গাড়ি অনেকটা স্পিডে রেখেই কোন রকম ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার অবস্থা হয়। আবার এতো যাত্রী উঠায় যে, পিছন দিক থেকে কেউ আসতে আসতেই দেখা যাচ্ছে গাড়ি অনেক সামনে চলে গেছে।
যত্রতত্র গাড়ি থামানো, গাড়ির কোন ফিটনেস নাই তারপরেও গাড়ি চালাচ্ছেন কিভাবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে এক চালক বলেন, আমাদের মালিক গাড়ি দেয়, আমরা মালিকের গাড়ি চালাই। গাড়ির ফিটনেস, পুলিশ না ধরা এইসব মালিকরাই ম্যানেজ করে। আর এই কদিন তো রাস্তায় কেউ ধরেও নাই। তাই গাড়ি চালাইতে কোন সমস্যা হয় নাই।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির তথ্য সম্পাদক কাজী জোবায়ের মাসুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, সরকার যদি আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয়, বাস উঠিয়ে দিতে বলে তাহলে আমরা অবশ্যই বাসগুলো সরিয়ে নেবো।
এনিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখন পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়েছে এটি অবশ্যই ভাল। তবে এটার বাস্তবায়ন কতটা হবে সেটাই দেখার বিষয়। আমরা ২০০০ সাল থেকে এসব নানা সরকারি সিদ্ধান্ত দেখে আসছি কিন্তু বাস্তবে কোন কার্যকারিতা থাকে না। বাস্তবে কার্যকর হলে তো ভাল।
তবে বাস উঠানোর আগে বিকল্প ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ঢাকা শহরে যে পরিমাণ ঘনবসতি তাতে করে আপনি যদি রাস্তা থেকে কোন বাস উঠাতে চান তাহলে অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থাও করতে হবে। একটা বাস রাস্তা থেকে উঠালে আরেকটি বাস আপনাকে নামাতে হবে। না হয় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়বে।
নোয়াখালীর কবিরহাটে বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম (৭৫) হত্যাকাণ্ডের তিন মাস পর সন্দেহভাজন প্রধান দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১।
গ্রেফতার আনোয়ার হোসেন সুমন (৩৫) কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আবু ছালেমের ছেলে ও সালাউদ্দিন বেলাল (৩৬) একই ইউনিয়নের মৃত আমিনুল হকের ছেলে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালীর কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোর্শেদ। এর আগে, একই দিন সন্ধ্যায় উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নের কাবলীর মোকাম বাজার এলাকা দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ২৯ জুন শনিবার ভোরে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চায়ের বাড়ির পুকুর পাড় থেকে ফিরোজা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ভিকটিম ওই ওয়ার্ডের পঞ্চায়ের বাড়ির মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফিরোজা বেগম স্বামীর ঘরে একা থাকতেন। প্রতিদিনের ন্যায় ফিরোজা বেগম নিজ শয়ন কক্ষে একা ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে তার বড় ছেলে রফিক উল্যাহ ঘুম থেকে উঠলে মায়ের ঘরের দুটি দরজা খোলা দেখেন। পরে তাকে তার এক ভাগনে জানান তার মায়ের বসত ঘরের সিঁধ কাটা রয়েছে। পরবর্তীতে বসত ঘর সংলগ্ন পুকুর পাড়ে ভিকটিমের পা বাঁধা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে ভিকটিমের এক নাতি তার বড় ছেলে রফিক উল্যাহকে বিষয়টি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত বৃদ্ধা সব সময় হাতে দুটি স্বর্ণের বালা, গলায় হার, কানে দুল ও হাতে দুটি স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতেন। নিহতের স্বজনদের দাবি কানের একটি দুল কান থেকে নেওয়ার সময় তার কানেও রক্তাক্ত জখম হয়। মরদেহের সাথে বৃদ্ধার ব্যবহৃত কোনো স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়নি। দুর্বৃত্তরা বৃদ্ধাকে হত্যা করে স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। স্বর্ণের লোভেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
র্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালীর কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোর্শেদ আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি একটি হত্যাকাণ্ড বলে প্রতীয়মান হয়। ভিকটিমের মেজো ছেলে বাদী হয়ে কবিরহাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে র্যাব এই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামি শনাক্তে তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র্যাবের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই সন্দেহভাজন আসামিকে গ্রেফতার করে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কবিরহাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।