‘গর্ভের সন্তান নষ্ট না করলে ঠাঁই হবে না স্বামীর ঘরে’

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঠাই হবে না স্বামীর ঘরে/ছবি: সংগৃহীত

ঠাই হবে না স্বামীর ঘরে/ছবি: সংগৃহীত

স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে এক স্কুলছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এক নির্মাণ শ্রমিকের। এরপর তাদের সেই সম্পর্ক গড়ায় বিয়েতে। বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই কাটছিল। এরই মাঝে অন্তঃসত্ত্বা হন স্কুলছাত্রী। আর এতেই বেকে বসেন নির্মাণ শ্রমিক স্বামী। বলে দেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট না করলে স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই মিলবে না। এই অবস্থায় প্রতিকার চেয়ে মেয়ের বাবা জামাতার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে অচিন্তপুর ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামে। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর নাম পপি আক্তার। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর দুলাল মিয়ার মেয়ে। পপি আক্তারের স্বামী মামুন মিয়া একই গ্রামের প্রতিবেশী নয়ন মিয়ার ছেলে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, পপি আক্তার অচিন্তপুর ইউনিয়নের একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে নির্মাণ শ্রমিক মামুন মিয়া তাকে উত্ত্যক্ত করতো। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ১২ এপ্রিল ময়মনসিংহ নোটারি পাবলিক বিবাহ সংক্রান্ত এফিডেভিট করেন। এরপর হুজুর ডেকে শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন পপি ও মামুন। এরপর ভাড়া বাসায় দুজনে একত্রে বসবাস শুরু করেন। এরমধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন পপি। গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রসনোগ্রাম করানোর পর জানা যায় পপি গর্ভের সন্তানের বয়স ১৮ সপ্তাহ।

পপি আক্তার বলেন, গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে গত প্রায় চারমাস ধরে আমি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছি। গর্ভের সন্তানের কথা জানার পর থেকেই আমার স্বামী টালবাহানা শুরু করেছে। এখন বলছে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে। সন্তান নষ্ট না করলে সে বাড়িতে আসবে না। আমাকেও তাদের বাড়িতে নিবে না। আমি সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত একমাস ধরে স্বামী যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে।

পপি আক্তারের বাবা দুলাল মিয়া জানান, আমার মেয়েকে যেহেতু বিয়ে করেছে, তাকে স্বামীর সংসারে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু ওদের পরিবার আমার মেয়েকে মেনে নিচ্ছে না। আমার মেয়ের গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য জামাতা চাপ দিচ্ছে। তাই প্রতিকার চেয়ে গত ১৫ অক্টোবর ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন মিয়া বলেন, একটা এক্সিডেন্টের মাধ্যমে তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। বলতে পারেন, এরপরে পরিবার থেকে আমাকে এক প্রকার ত্যাজ্যপুত্র করেছে। তবে পপি আক্তার আমার বিবাহিত স্ত্রী। তার পেটের সন্তান তো আমার সন্তান। তাকে মেরে ফেলতে বলব কেন? সে গর্ভবতী, সংসারের কাজ-কর্ম করতে পারবে না, তাই সে তার ইচ্ছায় ওর বাবার বাড়িতে গেছে। আমি তাকে আসতে বলছি, সে বলছে বাবার বাড়িতে থাকবে। এখন বিভিন্ন জায়গা নানা অভিযোগ দিচ্ছে।


এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাকিল আহমেদ বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।