গণতন্ত্র হচ্ছে ভিন্নমত তৈরির পথ: আলী রীয়াজ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ

সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ

গণতন্ত্র ভিন্নমত তৈরির পথ বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকালে বাংলা একাডেমিতে ব্রেইন ও আদর্শ প্রকাশনি আয়োজিত ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা, আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র হচ্ছে ভিন্নমত তৈরির পথ। ভিন্নমত নিয়েও এক সাথে থাকার নামই গণতন্ত্র। আমরা কিছু বিষয়ে একমত হব, তবে বহু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করবো।

সংস্কার দিয়ে কোনো কিছু পরিবর্তন সম্ভব না- অনেকের এমন মনোভাবের বিষয়ে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, প্রতিষ্ঠান নিজে যেমন ভেঙে পড়ে না তেমনি তৈরিও হয় না, তবে আপনি-আমি তৈরি করতে পারি।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, প্রতিষ্ঠান শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান না, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না, রাষ্ট্র হয় না। যদি গণতন্ত্রের কথা বলেন তাহলে বহুদলের কথা বলতে হবে।

আওয়ামী লীগ একটা বড় দল ছিল, এতো বড় একটা গণঅভ্যুত্থান যে হলো, এত রক্ত ঝড়ল- তাদের একটা ব্যক্তি দুঃখ প্রকাশ করে নাই। কি ভয়াবহ অবস্থা বলেও যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, এতো বড় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন সেখানে দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যে এমন কোনো পরিবর্তন দেখেছেন, যে তারা নিজেরা পরিবর্তিত হতে চাচ্ছে? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আপনি রাষ্ট্র সংস্কার করবেন, সংবিধান সংস্কার করবেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করবেন কি করবেন না সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি রাজনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তার প্রথম পদক্ষেপই না নেয়- তাহলে কি আশা করবেন?

 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখম চাচ্ছে কোনো রকম যেনো একটা নির্বাচন দিয়ে দেয়া হউক। কিন্তু আন্দোলনে তো মানুষ এটা চায়নি। প্রথম ১৫ দিন রাজনৈতিক দলগুলোও সেখানে ছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মুখে এক কথা আর মনে আরেক কথা।

তিনি বলেন, আমি ছাত্র, আমার বয়স কম, আমি না হয় কম বুঝি। কিন্তু আমার কম বুঝা দিয়ে কিভাবে আপনি আপনার নিজের ফায়দা লুটেন।

রাজনীতি বিশ্লেষক সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, হাসিনার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পুলিশের যে জায়গাগুলোতে পরিবর্তন হবার দরকার। সেখানে ছিটেফোঁটাও পরিবর্তন হয়নি। আওয়ামী লীগ তার সবচেয়ে নৃশংস ছাত্রলীগ নেতাকে বসিয়েছে পুলিশের তদন্তের জায়গায়। কিন্তু এখনো সেখানে তারা বসে আছে।

সাংবাদিক সাহেদ আলম বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলছি। আবার কেউ কেউ বিএনপির স্বীকৃতির কথাও বলছি, কেউ কেউ সমালোচনার কথা বলছি। তবে আমাদের একটা বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেনো আমরা আওয়ামী লীগের মতো এক মতবাদে সবাইকে যেনো নিয়ে আসতে না চাই। সবার নিজস্ব মতবাদ থাকবে, চিন্তা থাকবে আবার ঐক্যবদ্ধভাবেও থাকবো।

সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন তাদের নিয়োগকর্তা ছাত্ররা। এখন সে ছাত্ররা এসে আবার সরকারের সমালোচনা করছে। আমরা আগে দেখতাম অনেক মন্ত্রী এসে বিপ্লবী বক্তব্য দেয় যেনো তাকে কেউ এসে কিছু বলতে না পারে। এটা তো আমাদের কথা হবার কথা। ছাত্ররা তো চাইলেই জানতে পারে তাহলে তারা কেন এই প্রশ্ন উঠায়? তাহলে আমরা কোথায় যাবো?

তিনি বলেন, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ৫২ বছর যে বক্তব্য দিছে আপনারাও সে বক্তব্য দিচ্ছেন, বাহবা কুড়াচ্ছেন তাহলে পার্থক্য কোথায়? আমরা তো পার্থক্য চাই।

রাজনীতি বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, অতি উচ্চাশার দরকার নেই। একটা দেশের সব পরিবর্তন হয়ে যাবে সে চিন্তাটা বাদ দিয়ে বাস্তবিক চিন্তা করতে হবে। তাতে যদি একটি মোটামুটি কার্যকর গণতন্ত্রও পাই তাতেও আমি খুশি।