বজ্রপাতে চলতি বছর কুষ্টিয়াতে সাতজন ও মেহেরপুরে ছয় জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। নিহতদের অধিকাংশই কৃষক।
২০১৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত একই কারণে কুষ্টিয়ায় মারা যায় তিন ও মেহেরপুরে দুইজন।
বজ্রপাতে আতঙ্কে থাকতে হয় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহের মতো জেলাগুলোকে। এ বছর দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের কৃষকদেরও কাটাতে হয়েছে বজ্রপাত আতঙ্কে।
দেশে বজ্রপাতে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটলেও সম্প্রতি পশ্চিমাঞ্চলেও তা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বায়ুদূষণের কারণে বজ্রপাতের আওতা বাড়ছে। আর এই বজ্রপাতের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে দেশের কৃষক। কারণ নিহতের ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত।
পিয়ার-রিভিউ জার্নাল হেলিয়ন এ প্রকাশিত গবেষণা 'বাংলাদেশে বজ্রপাত পরিস্থিতির ওপর জিআইএস-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণ' এ বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতের ফলে ২ হাজার ১৪২ জন মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলা সুনামগঞ্জ, ওই সময়ে সেখানে মারা যায় ১৪০ জন। এরপরই আছে হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার মতো এলাকা।
বজ্রপাতের ধরণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, বায়ুদূষণ ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতের পরিমাণ ও আওতা বাড়ছে। এ কারণেই কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর অঞ্চলে এমন অবস্থা হচ্ছে বলে ধারণা তাদের। ইটভাটা ও বনভূমি উজার হওয়ার প্রভাব পড়ছে এসব এলাকায়।
দেশের বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বজ্রপাতে ২৯৭ জন নিহত হয়। যার ১৫২ জনই কৃষক। নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। দুই জেলাতেই ১৩ জন করে নিহত হয়েছেন।
এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত কুষ্টিয়াতেই নিহত হয়েছেন সাতজন। তাদের ছয়জনই কৃষক। মেহেরপুরে মারা গেছেন ছয়জন, তাদের তিনজনই কৃষক। গত ৯ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। যার চারজনই কৃষক। ওই ঘটনায় আহত হন চারজন।
এদিকে গত ১১ অক্টোবর মেহেরপুরে বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়। সদর উপজেলার দফরপুর ও সোনাপুর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।
শহর এলাকাতেও বজ্রপাত হচ্ছে। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে খোলা মাঠ বেশি থাকায় সেখানে ঝুঁকি বেশি। কৃষকরা মাঠে কাজ করেন। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, বজ্রপাতে নিহত হওয়া মানুষদের ৭২ শতাংশই কৃষক।
কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর এলাকায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ইটভাটা। এসব ইটভাটার জন্য নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছপালা। কুষ্টিয়ায় চলছে দুই শতাধিক ইটভাটা। অথচ বৈধ ছাড়পত্র আছে মাত্র ২২ টির। আবাসিক এলাকা তো বটেই ফসলি জমিতেও গড়ে উঠছে ইটভাটা।
মেহেরপুরে চালু আছে ১০৪টি ইটভাটা। যার মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র আছে মাত্র একটির। জরিমানা হলেও বন্ধ হয়নি এসব ইটভাটার কার্যক্রম।
এ ব্যাপারে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, ‘বজ্রপাতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও সবচেয়ে বেশি মারা গেছে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত খেটে খাওয়া মানুষ। বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় একাধিক মন্ত্রণালয় বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা শুনে আসছি। কিন্তু সেগুলোর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। শুধু সচেতনতার অভাবেই বহু মানুষের প্রাণ হানি ঘটছে। কিন্তু সরকারে পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকরী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।’
রাশিম মোল্লা জানান, পাঠ্যপুস্তকে বজ্রপাত সচেতনতার অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তিনি আরও জানান, ১৫ মিনিট আগেই বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানা যায়। তা জানানোর ব্যবস্থা করা, কৃষক ও জনসাধারণের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। মাঠে মাঠে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন এবং আহতদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।