আত্মগোপনে মোহাম্মদপুরের ছিনতাই চক্রের মূলহোতারা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সক্রিয় হয়ে ওঠেছিল অপরাধীরা। ছিনতাই, ডাকাতি ও অস্ত্রের ঝনঝনানিতে অশান্ত মোহাম্মদপুরে সাড়াশি অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত তিন দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে শতাধিকের বেশি অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের খবরে মোহাম্মদপুর ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন ছিনতাই চক্রের মূলহোতারা। তবে এখনো ছিনতকারীদের আতঙ্কে স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরে দিনে-দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতের আঁধারে কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীদের অস্ত্রের মহড়ায় ভীতসন্ত্রস্ত বাসিন্দারা। প্রতিদিনই অলিতে গলিতে অস্ত্রের মুখে সাধারণ মানুষের মূল্যবান সামগ্রী ও অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায় অপরাধীরা।

বিজ্ঞাপন

গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত মোহাম্মদপুরে প্রতিপক্ষের হামলা ও গুলিতে শিশুসহ ১০ জনের প্রাণ গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মোহাম্মদপুরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিক অভিযান চলবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকের স্পট বন্ধ না হয় ততক্ষণ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের খবরে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে মোহাম্মদপুরের ছিনতাই চক্রের মূল হোতারা। যাদের মধ্যে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তা, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা ও বসিলা এলাকার ছিনতাই চক্রের মূলহোতা রাসেল ওরফে ভাত রাসেল। নবদয়, ঢাকা উদ্যান, নবীনগর, আদাবর এলাকার আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত কব্জিকাটা গ্রুপের মূলহোতা আনোয়ার, ইউনুস, রাফাত, আহমেদ, তুষার,বেল্লাল ওরফে ভাইগ্না বেল্লাল, নাঈম ওরফে ভাইগ্না নাঈম, রাফি, মোহন।

গত ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ঘোষণা দিয়ে বেল্লাল নামের এত যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে কব্জিকাটা গ্রুপের সদস্যরা। এই চক্রটি মোহাম্মদপুরজুড়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখল ও হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। জানা গেছে, কব্জিকাটা গ্রুপ এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী বাদলের ছত্রছায়ায় থাকলেও বর্তমানে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার আর্শিবাদে টিকে আছে। তাদের রক্ষায় ইতোমধ্যে নিজেই মাঠে নেমেছেন বিএনপির এই নেতা। সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী ওই বিএনপি নেতার হয়ে কব্জিকাটা গ্রুপের আনোয়ার তার হয়ে প্রতিপক্ষ মোকাবিলায় কাজ করবে। তাই বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে আনোয়ার ও তার চক্রের সদস্যদের রক্ষায় নিজের বাড়িতে স্থান দিয়েছেন।

তবে মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকায় এখনো সক্রিয় স্থানীয় অসামাজিক কার্যক্রমের মূলহোতা শাহাবুদ্দিন শাবু ও তার দুই ছেলে সজিব-সোহান। তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ছিনতাই করে আসছে।

মোহাম্মদপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর থেকে মোহাম্মদপুরে শুরু হওয়া যৌথ বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত শতাধিক ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মাদকের স্পট দখল নিয়ে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে চলা গোলাগুলির ঘটনায় দুটি বিদেশি পিস্তল ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ মাদক ব্যবসায়ীকে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখান হাসান বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সব অপরাধী গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।

গত চার দিনে শতাধিক ছিনতাইকারী গ্রেফতার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতার ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানায় চলতি মাসে ৬৩টি ছিনতাই মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।