শ্রমিক বিক্ষোভ
২৩ ঘণ্টা ধরে অচল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, তীব্র জনদুর্ভোগ
গাজীপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় ৩ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে টানা ২৩ ঘণ্টা ধরে অচল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এতে ১২ কিলোমিটার জুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ পথে চলাচলরত যানবাহন ও যাত্রীরা। শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করতে দফায় দফায় তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে প্রতিবারই আলোচনা ব্যর্থ হয়ে তীব্র হয়ে উঠছে আন্দোলন।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া এলাকা ঘুরে দেখে যায়, মহাসড়কের দু'পাশে ১২ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের জটলা বেধে আছে। এর ফলে বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনের মালামাল নষ্ট হচ্ছে বলে জানান পরিবহন চালকরা। টানা ২৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকায় এ পথে জরুরি রোগী পরিবহন থেকে শুরু করে বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
শ্রমিক আন্দোলনে আসা নারী শ্রমিক রেহানা বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, দেহের ঘাম ঝড়িয়ে কাম করছি। মালিক তিন মাসের বেতন না দিয়ে আমাগো উপর কোন অত্যাচার চালাইতাছে। আমরা আমাগো বেতন বুইঝা না পাওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়মু না।
কারখানার আরেক শ্রমিক আনোয়ার মিয়া বলেন, গত মাসে বেতন দেয়ার কথা বইলা আরও এক মাস কাজ করাইছে। আমাগো কি বউ পোলাপাইন নাই। আমাগো কি পেট নাই। ৩ মাসের বাসা ভাড়া বাকি, ঘরে খাওন নাই। এইগুলা দেখবো কেডা। দুইদিন পর তো বাড়িওয়ালায় লাথি দিয়া বাহির কইরা দিব বাড়ি থাইকা।
গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় পরিবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মোজাম্মেল হক বলেন, বউ বাচ্চা নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবো। ২ কিলোমিটার হেঁটে আসছি। এখানে এসে দেখি সড়ক বন্ধ। তাই নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এদিকে আন্দোলনে আটকা পড়া কয়েক হাজার যানবাহনের চালকরা তীব্র ভোগান্তিতে সময় পার করছেন। যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো গতকাল থেকেই আটকা পড়ে আছে।
এ পথে আটকা পড়া আলম এশিয়া পরিবহনের চালক আফজাল মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাবার পথে গতকাল সকাল ১১টার দিকে এখানে আটকেছি। গাড়ি ভর্তি যাত্রী ছিল। কয়েক ঘণ্টা বসে থেকে যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেটে চলে গেছে। তারপর থেকে সারাদিন সারারাত এখানেই আটকে আছি।
এদিকে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দল গতকাল থেকেই ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হচ্ছেন। শ্রমিকরা বলছেন দাবি আদায় ও বকেয়া বেতন না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে তারা পিছু পা হবেন না।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, গাজীপুরের মালেকের বাড়ী, বোর্ডবাজার এলাকায় শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তারা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দু'পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।
এর আগে গত শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ী এলাকার টি এন জে অ্যাপারেলস্ লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একই সময়ে মহানগরীর বোর্ডবাজার এলাকায় এসএমএস ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড কারখানা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
এসময় দুটি কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করেন। ওইদিন দিনভর আন্দোলনের পরেও সন্ধ্যার দিকে কিছুটা শিথিল হলেও রাতে আবারও সড়কে শক্ত অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।