পলি হাউজে চারা উৎপাদনে সফল নরসিংদীর জাকারিয়া
কোন প্রকার মাটি ছাড়াই পলি হাউজে সবজি চারা উৎপাদন করে প্রথমবারেই সফলতার মুখ দেখেন নরসিংদীর জাকারিয়া খান নামে এক স্কুল শিক্ষক। এতে খুশি উদ্যোক্তা ও কৃষকরা। আর কৃষি বিভাগ বলছে, এই চারা কৃষকদের সফলতা বয়ে আনবে। তাই এর জন্য উদবুদ্ধ করা হবে।
নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার চরনগরদী গ্রামের খোরশেদ খানের ছেলে জাকারিয়া খান জাকির। পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি আগে একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। পাশাপাশি নিজ এলাকায় গড়ে তুলেন একটি শিশু শিক্ষালয়। এর ফাঁকে ফাঁকে বাবা খোরশেদ খানের কৃষিকাজে সহায়তাও করেন তিনি। এসময় একাধিকবার বীজ নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। ফলে কৃষি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন জাকির। তাই প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে প্রথমে নিজেরা সবজি চারা বীজ সংগ্রহ করে তা রোপণ করেন। তাতে সফলতা দেখে কৃষি কাজে বাবার সাথে পুরোদমে মনোযোগ দেন জাকির।
এছাড়া আশপাশের কৃষকদেরও বীজ প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে ছোট আকারে গড়ে তোলেন বীজতলা। এরই অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো পলি হাউজ পদ্ধতিতে উৎপাদন শুরু করেন বিভিন্ন সবজির চারা। আর তাতেই সফলতার মুখ দেখেন জাকির। এখন তিনি মনোনিবেশ করেছেন আধুনিক পদ্ধতিতে বীজতলা ও কৃষি কাজে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন কোকোপিট। বিভিন্ন জনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানী করেন উন্নতমানের বিভিন্ন জাতের বীজ।
মাটি থেকে ২৭ ইঞ্চি উপরে মাচায় প্লাস্টিকের শিটে কোকোপিট দিয়ে উৎপাদন করা হয় উন্নত জাতের কৃষি ফসলের চারা। এরমধ্যে মরিচ, টমেটো, পেঁপে, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লম্বা বেগুনসহ আরো অনেক সবজির চারা। কোনো প্রকার মাটি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই তৈরি এসব চারাতে অল্প সময়েই ফলন ধরে, মারা যাওয়ার ঝুঁকি কম এবং প্রচলিত ফলনের তুলনায় অতিরিক্ত ফলন ধরে। প্রতিটি চারা প্রকারভেদে ৩ থেকে সারে তিন টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বীজতলা দেখতে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। এই বাগানে ঝুকি কম ও ফলন বেশী হবে বলে দাবি করে প্রথম বারেই দ্বিতীয় ধাপের চারা উৎপাদন করতে পেরে খুশি উৎপাদনকারী।
কৃষক খোরশেদ খান জানান, প্রথমে নিজেরা সবজি করার জন্য পর পর দুই তিনবার বীজের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যার ফলে সবজি চাষ অনেকটা ছেড়ে দেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। কিন্তু আমার ছেলে জাকারিয়া জাকির এতে হাল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে সে আমাকে সাহস দেয়। এরফলে সে আমাকে সাহায্য শুরু করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভালো ও মানসম্মত বীজ পাওয়াসহ বিভিন্ন কারিকুলাম দেখে পুনরায় এ কাজ শুরু করি। এখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়না।
কৃষক খোরশেদ খানের ছেলে নতুন উদ্যোক্তা জাকারিয়া খান জাকির জানান, আমার বাবা পূর্ব থেকেই কৃষি কাজ করতেন। সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে সবজির বীজ নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই তিনি অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ায় আমি বাবার এই হতাশাকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ভালো ও মান সম্মত বীজের সন্ধান ও আধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের কৌশল শিক্ষা গ্রহণ করি। এরপর থেকে নিজেরাই নিজেদের চারা উৎপাদন করে আশপাশের কৃষকদের মাঝেও বিক্রি করতে পারছি। এখন আমি বাণিজ্যিকভাবেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত ও মানসম্মত চারা উৎপাদন করছি। ভবিষ্যতে এর সম্প্রসারণের চিন্তুা রয়েছে।
পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পলাশ আয়েশা আক্তার জানান, কোকোপিট পদ্ধতির চারা দামে কিছুটা বেশি হলেও মারা যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে, ফলনে বেশী ও দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলন ধরে। তাই এই চারা ব্যবহারের জন্য কৃষকদের উদবুদ্ধ করবেন।
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে বীজ নিয়ে প্রতারণা থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে জাকির খানের এই মহতি উদ্যোগ স্থানীয়দের প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।