বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালু করা হবে: শিল্প উপদেষ্টা
জাতীয়
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত খাতের বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালু করা হবে। বন্ধ চিনিকলগুলো কিভাবে চালু করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একটি টাস্কফোর্স কমিটি।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধনে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
নাটোরের নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুই লাখ টন আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে ১৫ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ চিনিকলটি আখ মাড়াই শুরু করেছে।
‘এ কমিটি বন্ধ চিনিকলগুলো চালু করার প্রতিবন্ধকগুলো পর্যবেক্ষণ করছে’ উল্লেখ করে আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘জনগণ পাশে থাকলে সমন্বিত শক্তির উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে, সাহসিকতার সঙ্গে এ বিষয়ে সফল হতে চাই। সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কাজ করছি।’
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের পিছিয়ে পড়া এলাকায় কলকারখানা কম থাকায় জীবন-জীবিকার পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামগ্রিকভাবে আমরা উদ্যোগ নিতে চাই। আমরা যদি সামগ্রিকভাবে চেষ্টা করি, নিশ্চয়ই আমরা পরিবর্তনের ধারা শুরু করে যেতে পারব। রাষ্ট্র পরিচালনায় এরপরে যারা আসবেন, তারা এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের আখ মাড়াই কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) পরিচালক এটিএম কামরুল ইসলাম, নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হোসাইন, আখচাষী হাসান রাজা প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্ল্যা জানান, চলতি মৌসুমে দুই লাখ টন আখ মাড়াই করে ১৫ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১১৭ আখ মাড়াই দিবসে চিনি আহরণের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
কর্ণফুলী টানেল আমাদের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন ব্যবসায়ী বা পেশিশক্তির কাছে দায়বদ্ধতা নেই। এ সরকারের দায়বদ্ধতা আছে জুলাই অভ্যূত্থানে ১ হাজারের বেশি শহিদ, ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়ে যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, ও অগণিত ছাত্র-জনতার প্রতি। এ দায়বদ্ধতা থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন নির্বাচিত সরকার নয়। এ সরকার কোন ক্ষমতা গ্রহণ করেনি, শুধুমাত্র ছাত্র-জনতার অনুরোধে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দয়িত্ব গ্রহণ করলে সে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবসময় সর্তক থাকতে হয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ দায়িত্বকে আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তা রক্ষার্থে সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। সাধারণ জনগণ আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে আমরা দেশের সম্পদকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করি। কিছুদিন আগে বাড্ডায় এক মহিলা অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় গাড়ির আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা খবর পেয়ে সড়ক বিভাগের সহকর্মীদের নিয়ে সেখানে যায় এবং বাস চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। মানুষের জীবনের কোন ক্ষতিপূরণ হয় না তবুও আমরা দায়বদ্ধতা থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ দিই।
তিনি আরো বলেন, কর্ণফুলী টানেল আমাদের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। সেটার পাশ দিয়ে আসার সময় দেখলাম সেখানে কোন গাড়ি নেই। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর করে তার সাথে সংযোগ সড়ক হয়ে একটা ইকোনমিক জোন তৈরি করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন দেখেন সেখানে একটা বিদ্যুৎ প্রকল্প হয়েছে আর এখানে একটা টানেল তৈরি করা হয়েছে যা অপরিকল্পিত পরিকল্পনার একটা অংশ। ফলে দেশ এখন টানেলের লোকসান বয়ে বেড়াচ্ছে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, বাপেক্সের এক-একটি গাড়ির দাম ৫ কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আবার জ্বালানি খাতে সরকারকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভতর্‚কি দিতে হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা রেল সংযোগ করা হয়েছে যার বার্ষিক রাজস্ব আয়ের কথা ছিল ১৪শ কোটি টাকা। কিন্তু ৬ মাস পরে গিয়ে জানতে পারলাম মাত্র ৩৭ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছে। এগুলো উন্নয়নের নামে অপচয় করা হয়েছে। আমি কর্মকর্তাদের সাথে বসেছি যাতে অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে দেশের টাকা অপচয় করা না হয়। কারণ অপচয় করার মত অবস্থা এখন আমাদের নেই।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম'র সভাপতিত্বে সিটি মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, ডিআইজি মোঃ আহসান হাবীব পলাশ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন চেয়ারম্যান মোঃ আমিন উল আহসান, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’'র প্রতিনিধি মেজর মাহমুদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তিনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিডেট এর প্ল্যান্ট পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। সে বিষয়ে তিনি বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি তেল শোধানাগার ১৯৬৮ সালে নির্মিত হয়। বর্তমানে এটা খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। যেকোন মুহূর্তে এটা ভেঙ্গে যেতে পারে। দ্বিতীয় আরেকটা রিফাইনারি তেল শোধানাগার তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং অতিদ্রুত নিমার্ণ কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর লগি-বৈঠার তান্ডবের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে পথহারা হয়েছিল, ৫ আগষ্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আবার পথ ফিরে পেয়েছে।
তিনি ১৩ নভেম্বর, যুক্তরাজ্য সফরের অংশ হিসেবে ওল্ডহামের গ্রান্ড ভেন্যু বাংকুয়েটিং এ "Coalition for Peace and Justice in Bangladesh" ওল্ডহাম শাখার উদ্যোগে প্রবাসী শুভাকাংখীদের নিয়ে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মাওলানা নোমান আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং সৈয়দ বদরুল আলম, নুরুল আমিন তারেক ও সারোয়ার হোসাইন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ গঠনে ভুমিকা রাখতে হবে। পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী যারা গণহত্যা এবং জুলুম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার এ সরকারকে শুরু করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ১১জন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ জনকে ফাঁসি এবং ৬ জনকে জেলখানার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করতে সবার প্রতি আহবান জানান এবং এমন কোন কাজ যদি দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্থের কারণ হয়, দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সংশোধনের উদ্দেশ্যে উত্তম পরামর্শ দিতে উপস্থিত সবাইকে অনুরোধ করেন।
এছাড়াও তিনি পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করার পাশাপাশি যে দেশে বসবাস করছেন সে দেশকে সম্মান, দেশের আইন, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় অবদান এবং সামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহন করার উদাত্ত আহবান জানান।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে নেপাল। এরমাধ্যমে ভারতের পর তৃতীয় কোনো দেশে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ রপ্তানি করল হিমালয়ের দেশটি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠাবে দেশটি।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানো শুরু করে নেপাল। এর আগে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তিন দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
নেপাল সরকার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা মো. ফওজুল কবির খান, ভারতের বিদ্যুৎ এবং গৃহায়ণ এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রী মনোহর লাল এবং নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ মন্ত্রী দীপক খাদকা যৌথভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ উদ্বোধন করেন।
নয়াদিল্লির এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ‘ঐতিহাসিক’ মুহূর্তটি প্রথম ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ, যা ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে।’ এতে বিদ্যুৎ খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়বে বলে আশা করছে তারা।
নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র চন্দন কুমার ঘোষ চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়াকে বলেন, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালে বাংলাদেশের কাছে নেপাল মাত্র একদিন বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। এরপর ২০২৫ সালের ১৫ জুন থেকে আবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।
যেহেতু বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সরাসরি বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। তাই ভারতের সঞ্চালন লাইন হয়ে এই বিদ্যুৎ আসছে। তবে ভারতের গ্রিডের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রিডের সংযোগে খুব বেশি বাড়তি ক্যাপাসিটি না থাকায় নেপাল মাত্র ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠাতে পারবে। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি সঞ্চালন লাইনের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা হয় তাহলে নেপাল আরও বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ পাঠাতে পারবে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র চন্দন কুমার ঘোষ।
চলতি বছরের মে-জুনে নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহল প্রচণ্ড ভারত সফরের বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে ৩ অক্টোবর এ চুক্তি সই হয়।
দেশটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠাবে তাদের দুটি কেন্দ্র থেকে। এরমধ্য ২৫ মেগাওয়াট ত্রিশূলি আর ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে চিলমি হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্ট থেকে।
চুক্তি অনুযায়ী, নেপাল প্রতি বছর ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের ভেতরের সঞ্চালন লাইন দিয়ে বাংলাদেশে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ রফতানি করবে। ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬ দশমিক ৪ সেন্ট (১০০ সেন্টে ১ ডলার)। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে সাত টাকা।
নেপাল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তারা অতিরিক্ত জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে বলে এগুলো রপ্তানি করতে পারে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের উৎসব। শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার মৌসুম। দলবদ্ধভাবে এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মাঠে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। কেউ ধান কেটে জমি খালি করছেন, আবার কেউ মাড়াই শেষে ধান বস্তায় ভরে বাড়িতে তুলছেন। বাম্পার ফলনের আনন্দে কৃষকরা নতুন স্বপ্ন বুনছেন।
এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা, যা কৃষকদের মনে বাড়তি উৎসাহ যোগাচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের প্রথমদিকে আবহাওয়ার অনিয়মিত পরিস্থিতি ও খরার কারণে আমন উৎপাদন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির অনুকূলতায় সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে রাজশাহী জেলায় আমনের বাম্পার ফলনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এ সফলতার পেছনে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি, কৃষি বিভাগের সঠিক নির্দেশনা, এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাঝেও কৃষকদের প্রচেষ্টা ও ধৈর্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এই অতিরিক্ত আবাদ এবং পরিবেশের সহায়ক পরিস্থিতির কারণে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তারা জানিয়েছেন যে কৃষকরা বর্তমানে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এবং ইতিমধ্যেই বাজারে ধানের ভালো মূল্য পাওয়ায় তাদের মাঝে সন্তোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কৃষি অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমি। তবে বাস্তবে চাষ হয়েছে ৮৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে। এ আবাদ থেকে ৩ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবাদের ৩০ শতাংশ জমি থেকে ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৯২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এই তথ্যের ভিত্তিতে এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা যেমন ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে, তেমনি উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমনের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৭৫৯ হেক্টর জমি, যার মধ্যে আবাদ হয়েছিল ৮৩ হাজার ১৭৭ হেক্টরে। ঐ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৬২ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছিল, এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়েছিল। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছর ধরে আমন উৎপাদনে রাজশাহী জেলার কৃষকরা সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তবে পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় এবার আমনের আবাদ ও উৎপাদনে বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার গোদাগাড়ী, পবা, এবং দূর্গাপুর উপজেলায় ধান কাটার চিত্র বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এখানে উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকরা তাদের ফসল কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন এবং কেউ কেউ মাঠের পাশেই মাড়াইয়ের কাজ করছেন। ধান মাড়াইয়ের সময়ও স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সহযোগিতার এক আবহ সৃষ্টি হয়েছে, যা কৃষি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা যায়। কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। কারণ মৌসুমের শুরুতে বাজারে ধানের ভালো দাম পেয়েছিলেন তারা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের আমন মৌসুমে শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং পরে অতিবর্ষণের কারণে কিছু কিছু জমিতে ধানের ক্ষতি হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেক জমিতে ডুবে যাওয়ার ফলে ফলন কম হয়েছে, তবে এতে পুরো চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক আফজাল হোসেন জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। পানির খরচ কিছুটা বেশি হলেও ফলন আশানুরূপ হচ্ছে। প্রতিটি বিঘায় ২২ মণের বেশি ধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
দূর্গাপুর উপজেলার কৃষক শহীদুল ইসলাম জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন এবং মোটামুটি ভালো ফলন পেয়েছেন। বন্যার সময় কিছু জমি ডুবে গিয়েছিল, তবে বাকি জমিতে ভালো ফসল হয়েছে। তিনি আশাবাদী যে এ মৌসুমে তিনি লাভবান হবেন।
পবা উপজেলার কৃষক বারিউল হক বলেন, এবার আমন ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাম্পার ফলন পেয়েছি। আমার তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি, আর প্রত্যেক বিঘায় ২০ মণের বেশি ফলন হয়েছে। ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি, এবার খরচ তোলার পর হাতে ভালো পরিমাণ টাকা থাকবে। এই ফলন আমাদের পরিবারের জন্য অনেক স্বস্তি এনে দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোসা. উম্মে ছালমা জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে এবং ফলন ভালো হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হওয়ায় আশা করছি যে এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।