গাইবান্ধায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক জাভেদ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক জাভেদ

গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক জাভেদ

শরীরের ১৬টি ক্ষতচিহ্ন সাক্ষ্য দিচ্ছে যন্ত্রণার ভয়াবহতা। ছররা গুলির আঘাত খানিকটা সেরে উঠলেও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ডান হাতে লাগা একটি বুলেট। বুলেটটি হাতের মাংস ভেদ করে পৌঁছেছে হার পর্যন্ত। দুইবার অস্ত্রপাচারের পরেও স্বাভাবিক না হয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে হাতটি। গুলিবিদ্ধ ডান হাতটি স্বাভাবিক হয়ে ফিরতে আরও অনেক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে ডান হাত স্বাভাবিক হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন জাভেদের স্বজন ও পরিবার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে এমন দুর্বিষহ জীবন পার করছেন গাইবান্ধার সাংবাদিক জাভেদ হোসেন। তিনি অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা টাইমসের গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি ও গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের (কাচারিবাজার) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিজ্ঞাপন

গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলনে গাইবান্ধার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন শতাধিক ছাত্র-জনতাসহ জেলার তিন সাংবাদিক। জাভেদ হোসেন ছাড়াও অপর দুই সাংবাদিক হলেন অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকাপোস্টের গাইবান্ধা প্রতিনিধি রিপন আকন্দ ও বার্তা বাজারের গাইবান্ধা প্রতিনিধি সুমন মিয়া। তাদের মধ্যে রিপন আকন্দের শরীর দুটি এবং সুমন মিয়ার শরীরে পাঁচটি গুলি লাগে।

তবে সেদিনের ঘটনার পরপরই সাংবাদিক জাভেদ হোসেনের বুক, পেট ও ঘাড় থেকে বের করা হয় ১৪টি ছররা গুলি। পরে শরীরে আরও গুলি আছে কি-না নিশ্চিত হতে এক্স-রে করা হয়। এক্সরে রিপোর্টে দেখা যায়, ডান হাতে রয়েছে আরও দুটি গুলি। এক সপ্তাহ পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সাংবাদিক জাভেদের ডান হাতের কব্জি থেকে অবশিষ্ট দুটি গুলি বের করা হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারে গুলি বের করা হলেও আজও স্বাভাবিক হতে পারেননি জাভেদ হোসেন। ক্ষত শুকালেও তীব্র ব্যথার যন্ত্রণায় কাতর তিনি।

বিজ্ঞাপন

আহত সাংবাদিক জাভেদ হোসেন জানান, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে শরীরে ১৬টি ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হই। গুলিগুলোর যন্ত্রণা কেটে উঠলেও গুলিবিদ্ধ ডান হাতের ত্রুটি কেটে উঠতে পারিনি চারমাসেও।

তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ হাতের চিকিৎসায় ইতোমধ্যে দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। রংপুরের একাধিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি। তাদের পরামর্শেই গাইবান্ধার বেসরকারি এনজিওর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এসকেএস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নিয়মিত থেরাপি নিচ্ছি। এই হাত দিয়ে ভারী কোনো কাজ করতে পারি না। কবে ভালো হবে, আদু ভালো হবে কি না তা অনিশ্চিত।

আক্ষেপ করে জাভেদ হোসেন বলেন, আমরা পাওয়ার আশায় কিছু করি না। সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে তিন সাংবাদিক আহত হয়েছি। তার মধ্যে মারাত্মক আহত হয়েছি আমি। একাধিক স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। এমনকি এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান দেখতেও আসেনি।

সাংবাদিকের স্ত্রী ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজাদি হাবিবা সুলতানা বলেন, সারাদিন যেভাবেই কাটুক, রাতে তিনি (জাভেদ হোসেন) ঘুমাতে পারেন না। হাতের যন্ত্রণায় নির্ঘুম রাত কাটে তার। এসময় কান্নাজড়িত গলায় তিনি বলেন, জানি না শেষ পর্যন্ত হাতটার কি হবে? দুটি কন্যা সন্তানের মুখের দিকে তাকালে বুকটা ভেঙে যায়। সেদিন তো আরও অনেক কিছুই হতে পারতো!

গাইবান্ধা এসকেএস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি সেন্টারের চিকিৎসক ডা. সেলিম হোসেন বলেন, সোল্ডার জয়েনটি আঘাতপ্রাপ্ত ছিল। অস্ত্রোপচারের পর হাত বেশিদিন ভাঁজ করে রাখায় শক্ত হয়ে গেছে। যাকে থ্রোজেন সোল্ডার বলা হয়।

তিনি বলেন, অপারেশনের পর চিকিৎসকের পরামর্শেই হাত ব্যাগ দিয়ে বুকের ওপর ধরে রাখতে বলা হয়েছিলো। সে কারণে এই সমস্যাটা গুরতর হয়েছে। আবার যদি ওইটা না করা হতো তাহলে সোল্ডার নেমে গিয়ে আরও বেশি সমস্যা হতো। এসময় পুরোপুরি ঠিক হতে ধৈর্য ধরে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান এই চিকিৎসক।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা তথ্য অফিসার ইশতিয়াক আহমাদ আবীর বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গাইবান্ধার তিন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হন। আহত সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট সকালে গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন জনসমুদ্রে রূপ নেয় এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখল করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। তারা ধীরে ধীরে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি বিশাল মিছিল ডিবি রোড হয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়তে থাকে পুলিশ। এক পর্যায়ে বিক্ষিপ্ত আন্দোলনকারীরা পুলিশ সুপারে কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে। এতে তিন সাংবাদিক, পথচারী ও দুই শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন।