স্কুলের পোশাক পরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে খাবার বিক্রি করছে এক স্কুলছাত্র। ফাঁক সময়ে আবার তাকে বই পড়তেও দেখা যায়। কখনো আবার লেখালেখি। যে বয়সে এই কিশোরের লেখাপড়ার টেবিলে থাকার কথা, সেখানে তার জীবনযুদ্ধের সঙ্গে চলছে শিক্ষার লড়াই। এ কিশোরের নাম ফাহিম ভূঁইয়া (১৭)।
ফাহিম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফেকামারা গ্রামের ফারুক ভূঁইয়ার ছেলে। পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেই এখন নেমেছে খাবার বিক্রির ব্যবসায়।
জানা যায়, শিক্ষার্থী ফাহিমের পিতা ফারুক দেড় বছর পূর্বে শারীরিক অসুস্থতায় মারা যান। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ফাহিম সবার বড়। আকস্মিক পিতার মৃত্যুতে সংসার থমকে যায়। লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। বিগত দিনেও টানাপোড়নে সংসার চলছিলো। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ফাহিম নিজের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের হাল ধরতে কিছু করার উপলব্ধি করেন।
গত একমাস ধরে নিজের বাড়ি থেকে বিরিয়ানি রান্না করে কটিয়াদী সরকারি হাসপাতালের সামনের গেইটে বিক্রি করছেন। একই সঙ্গেমা বিরিয়ানি হাউজ নামে পেইজ খুলে অনলাইনেও ডেলিভারি করছেন। সপ্তাহে তিনদিন স্কুলে গিয়ে ক্লাস করেন। বাকি দিনগুলোতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই ব্যবসা পরিচালনা করেন।
ফাহিম স্থানীয় মুন্সি আব্দুল হেকিম কারিগরি কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
ফাহিমের সহপাঠীরা জানায়, লেখাপড়ায় ফাহিম অনেক ভালো। কিন্তু পারিবারিক অর্থ সংকট তাকে কাজে নামতে বাধ্য করেছে। দানশীল কেউ এগিয়ে আসলে ফাহিম পড়ালেখা ভালোভাবে শেষ করতে পারতো।
শিক্ষার্থী ফাহিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, একদিকে পড়াশোনা অপরদিকে সংসার। ইচ্ছে থাকলেও প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারি না। কারণ উপার্জন করে তবেই তো লেখাপড়ার খরচ যোগান দিতে হবে। কারো সহায়তা পেলে নিজে কিছু করার আগ্রহ রয়েছে।
মুন্সি আব্দুল হেকিম কারিগরি কলেজের প্রিন্সিপাল ফজলুল হক আলমগীর জোয়ারদার বার্তা ২৪.কম-কে বলেন, ফাহিম লেখাপড়ায় ভালো। শুনছি তার পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসার চালানো কষ্ট হচ্ছে তাদের। পড়াশোনার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহায়তা করা হবে।