চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ ও চাকরিতে পুর্নবহালের দাবিতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেছেন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) থেকে চাকরি হারানো কর্মকর্তারা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকায় মহাসড়কের একপাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়েন দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার-বান্দরবানমুখী যাত্রীরা।
বিজ্ঞাপন
এসময় ‘বৈষম্যের ঠাঁই নাই; আমার তোমার বাংলায়’, ‘লড়তে হলে লড়বো; চাকরি নিয়ে ফিরবো’, ‘এক দফা এক দাবি; চাকরি চাই চাকরি চাই’সহ নানা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
চাকরি হারানো এক কর্মকর্তা জানান, গত তিন মাস সংকট থাকাকালে আমরা ব্যাংকে অমানবিক কষ্ট করেছি, যাতে ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ায়। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেছি। অথচ, এক নোটিশে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমরা আমাদের চাকরি ফেরত চাই।
বিজ্ঞাপন
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মনির হোসেন বলেন, এস আলমের ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছে। তারা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে রোড ব্লক করেছিল। ঘণ্টাখানেক ছিল। পরে আবার তারা সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গত ৫ নভেম্বর একই ব্যাংকের শতাধিক সাবেক কর্মী চাকরি ফেরতের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছিলেন। সেই মানববন্ধন থেকে দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা।
সেখানে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, নিয়ম মেনে চাকরিতে প্রবেশ করলেও তাদের চাকরিচ্যুত করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিনা নোটিশে ৬৭২ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ৬৭২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ওইদিন এসব কর্মকর্তাকে ইমেইলের মাধ্যমে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি জানানো হয়। পরে ব্যাংকে উপস্থিত হওয়া কর্মীদের চাকরিচ্যুতিপত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়।
সাভারের আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির এক যুগ পূর্তিতে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শ্রমিকরা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশন এর বন্ধ কারখানার মূল ফটকের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে আহত শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি শুরু করে।
পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ আর পুনর্বাসনের দাবিতে প্রতিবছর তাজরীনের পোড়া ভবনের সামনে আজকের দিনে উপস্থিত হয়ে নিহতদের স্মরণ করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনসহ স্থানীয় শ্রমিকরা। একদিকে সুচিকিৎসার অভাবে আহত শ্রমিকদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। আবার অনেকেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
আগুন থেকে বাঁচতে স্বামী রবিনকে নিয়ে ৪ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন গর্ভবতী পোশাক শ্রমিক ফাতেমা। কর্মহীন দিশেহারা দম্পতি শুরু করেন অন্যের জমিতে সবজি চাষ, পরে শুরু করেন ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। কিন্তু প্রায় দশ বছর পর এ বছর মে মাসে মারা যান রবিন। স্বামীর মৃত্যু, শিশু সন্তান জান্নাত ও ফাইজাকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ফাতেমা এবার একাই সৈনিক। স্বামীর হাতে গড়া ছোট্ট চায়ের দোকানই বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।
তাজরীন ফ্যাশননে কোয়ালিটি কন্ট্রোরাল হিসেবে কাজ করতেন রবিন। ২০২২ সালের ৯ মে মারা যান তিনি। ফাতেমা খাতুন বলেন, চায়ের দোকান দেয়ার দুই মাসের মাথায় মারা যায় আমার স্বামী। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে আমার পক্ষে একা সংসার চালানো তো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিনে বেচাবিক্রি হয় ৫ থেকে ৭শ টাকার। এই টাকা দিয়ে দোকানের মালামালও কিনতে হয়। আবার আমারও চলতে হয়। স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রতি মাসে ১ বস্তা চাল কিনে দেন। চাওয়া এখন একটাই, ক্ষতিপূরণ।
রোববার সকাল থেকে আশুলিয়ায় কারখানাটির সামনে নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা ফুল হাতে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শিল্প পুলিশও। শিল্প পুলিশ -১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার আলম বলেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের মূল স্টেকহোল্ডার এই শ্রমিক ভাই-বোনরা। তাদের জন্যেই আমাদের কাজ, আমাদের সব কিছু। তাদের জন্যেই এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ তৈরি হয়েছে। আশা করি প্রসিকিউশন বিভাগ এবং সবাই মিলে দ্রুত বিচার টা সম্পন্ন হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকে এবং এ ধরণের ঘটনা যেন না ঘটে।
এসময় শ্রমিক নেতারা বলেন, আজকে তাজরিনের ১২ বছর কিন্তু এ ঘটনায় কোনো বিচার এখনো হয়নি। নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলো কষ্টে দিন পার করছে। আর আহত শ্রমিকরা পঙ্গু হয়ে জীবন যাপন করছেন। আমাদের দাবি তাজরিনের এই ভবনটি ভেঙে এখানে শ্রমিকদের পুনর্বাসন অথবা হাসপাতালে তৈরি করা হোক ও খুনি দেলোয়ারের ফাঁসি হোক।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার এক যুগ পরও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার চায়নি তাই বিচার হয়নি। শ্রমিকরা এখনো উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার পেল না। শ্রমিকদের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার যেন দোষীদের বিচার ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবেন।
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি তুহিন চৌধুরী বলেন, নতুন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হয়; খোঁজ-খবর নিয়ে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে মোট ১১৭ জন পোশাকশ্রমিক নিহত ও ২০০ জনের অধিক আহত হন। অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের এক যুগেও শেষ হয়নি বিচারকাজ।
সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনের ভবনটি এখন শুধুই সময়ের স্বাক্ষী। দীর্ঘ এতগুলো বছর পরে ভবনটিকে দেখলে অনেকটা ভুতুরেই মনে হয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকরা এদিন কারখানার সামনে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, সাধারণ মানুষ অধীর আগ্রহে বসে আছে কখন তারা নিজের অধিকার প্রয়োগ করবে। সেজন্য বিএনপি বলছে, যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন যত দ্রুত দেওয়া হবে তত দ্রুত বিশৃঙ্খলা দূর হবে। দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকের বাস্তবতায় সেটি (নির্বাচন) হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয়তা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে নার্সেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ন্যাব) উদ্যোগে আয়োজিত ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন।
অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, জনগণের প্রকৃত মালিকানা ফেরত দিতে হবে। গণতন্ত্রকে তার সঠিক জায়গায় রাখতে হবে। অর্থাৎ, মানুষ চিন্তা করবে তার ভোট কাকে দিবে। দেশ শাসন কে করবে সেটা জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে। সংস্কার অবশ্যই হবে। সংস্কার করতে হলে জনআকাঙ্খা বাস্তবায়ন করতে হবে। জনআকাঙ্খার প্রতিফলন হচ্ছে সংবিধান। সবকিছু আপনি আমি করে ফেললে হবে না। মানুষ কি চায় এবং তাদের মতামতের সুযোগ হচ্ছে ভোট।
অনেকে বলে বিএনপি তাড়াতাড়ি ভোট চায়। বিএনপি তো সবসময় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে ছিল এবং আছে। বিএনপি তো কখনোই স্বৈরাচারের দোসর নয়। বিএনপি সাধারণ মানুষের মনের কথা বুঝে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি বিরাজমান, দেশের ভেতর এবং বাইর থেকে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে দেশের মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা আমাদের ভাইদেরকে গুম, খুন করেছে এদেশের প্রচলিত আইনে প্রত্যেকের বিচার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ তে কর্মসূচি দিয়েছিলেন ভিশন ২০৩০। এরপরে আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২২ এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন। আর ২৩ এর জুলাই মাসে সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ২৭ দফাকে ৩১ দফা করে সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। বিএনপি শুধু নিজের কথা বলে তা নয়। বিএনপি রাষ্ট্রের কথা বলে, আগামীদিনের কথা বলে।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এই দেশে আজকে যে নারী শিক্ষা, তার আলোকবর্তিকা যদি বেগম রোকেয়ার পরে কারো কথা বলতে হয়, সেটি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া। এর কারণ হলো, নারী শিক্ষার জন্য প্রথম বই দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। বিনা পয়সায় স্কুল করে দিয়ে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও খালেদা জিয়া করেছেন। অর্থাৎ এদেশের যত মঙ্গল এবং যত ভালো কিছু আছে তার পেছনে জড়িয়ে রয়েছেন, শহীদ জিয়া; খালেদা জিয়া ও বিএনপি।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, পদত্যাগের তিন দিন আগেও উনি বলেছিলেন শেখের বেটি পালায় না। কিন্তু, তিন দিনের আগেই তিনি পালিয়ে গেছেন। নিজের দল, নিজের নেতাকর্মী কারও তার বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই। অপর দিকে বেগম খালেদা জিয়া এই বাংলাদেশে আছেন। ওনাকে (খালেদা জিয়া) ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় ছয় বছর জেলে রাখা হয়েছে। উনি অনেক কম্প্রোমাইজ করেছেন। কিন্তু, তিনি তো দেশ ছেড়ে যাননি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আপনারা (শেখ হাসিনা) পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছেন। শতশত নেতাকর্মীকে গুম করেছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী ১৬ বছরেও শহীদ হয়েছে আবার জুলাই আগস্টেও শহীদ হয়েছে। ১ লাখ ৬০ হাজার মামলায় ৭০ লাখ গণতন্ত্রকামী মানুষকে আপনারা (শেখ হাসিনা) দমিয়ে রাখতে পারেননি। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ।
নার্সেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ন্যাব) সভাপতি জাহানারা খাতুনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামসহ আরও অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অটোরিকশা চলাচলের বিষয়ে উচ্চ আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই হবে এ সমস্যার সমাধান বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, উচ্চ আদালত থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সেই নির্দেশনা মতেই আমরা কাজ করবো। আমরা আশা করতে পারি একটা খুব ভালো নির্দেশনা আসবে এবং ওই নির্দেশনার আলোকে অটোরিকশার সমস্যাটা সমাধান হবে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সবার শেষে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
সড়কে অটোরিকশা বন্ধে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উচ্চ আদালত অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন এর সমাধান উচ্চ আদালতই দেবেন। এখন যদি এটা নিয়ে আমি একটা উত্তর দেই, সেটাতে আদালত অবমাননা হয়ে যেতে পারে। উচ্চ আদালত থেকে যে নির্দেশনা আস্বে, সেই নির্দেশনা মতেই আমরা কাজ করবো। আমরা আশা করতে পারি একটা খুব ভালো নির্দেশনা আসবে এবং ওই নির্দেশনার আলোকে অটোরিকশার সমস্যাটা সমাধান হবে।
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। ধীরে ধীরে আরো উন্নতি হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে আজ রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা। ফলে পল্টন থেকে হাইকোর্ট এবং হাইকোর্ট থেকে কদম ফোয়ারা সড়কের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভোগান্তিতে পরেছেন ওই পথে বাসে আটকে থাকা যাত্রীরা।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল, রেস্তোরাঁ, বাসস্থান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খাবার পানির নমুনায় ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে টাইফয়েডের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই জীবাণুগুলোর ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ নমুনা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে আরো কঠিন করে তুলছে। জীবাণুর এ উপস্থিতি শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্যও এক গুরুতর হুমকি বলে মনে করছেন গবেষকরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহানা আকতার মিনা, পবিত্র দেবনাথ, একেএম জাকির হোসাইন, জাহিদ হাসান। গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক সেল পাবলিকেশনের ‘হেলিয়ান’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু সাধারণত চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ফলে রোগের চিকিৎসা অধিকতর জটিল হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত থাকতে জনগণের মধ্যে নিরাপদ পানি ব্যবহারের পাশাপাশি স্যানিটেশন সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রেস্টুরেন্ট এবং বাসস্থান থেকে ১৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ল্যাবরেটরি অফ মাইক্রোবায়াল এন্ড ক্যান্সার জিনোমিক্স গবেষণাগারেই গবেষণার কাজ সম্পন্ন করেন গবেষকরা। ১৫০টি নমুনার ৮টিতে সালমোনেলার টাইপ (টাইফয়েড) জীবাণু শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ নমুনা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু হিসেবে চিহ্নিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, নিরাপদ পানি ব্যবহারের পাশাপাশি খাবারের সঠিক স্যানিটেশন নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অশনিসংকেত উল্লেখ করে গবেষকসহ চিকিৎসকরা বলছেন, এ পরিস্থিতি শুধু পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবই বাড়াচ্ছে না, বরং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট) দ্রুত বিস্তারের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
গবেষক অধ্যাপক ড. এ এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরী বলেন, এই গবেষণার ফলাফল শুধু বৈজ্ঞানিক গুরুত্বই বহন করে না; বরং এটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা। খাবার পানিতে এই জীবাণুর উপস্থিতি প্রমাণ করে পানির মাধ্যমে এর সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে দ্রুত মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু এমন একটি হুমকি তৈরি করে, যেখানে প্রচলিত ওষুধ কার্যকর হয় না। নতুন ও শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, যা বেশ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জন্য এটি আর্থিকভাবে অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
গবেষকরা জানান, সালমোনেলার টাইপ (টাইফয়েড) বেশিরভাগ নমুনায় gyra 2, sul2, tem, int1 নামক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিনগুলো শনাক্ত হয়। যা এই জীবাণুর ওষুধ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করে। কো-ট্রাইমক্সাজল এবং সিপ্রোফ্লক্সাসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক এখনও কার্যকর হলেও বেশকিছু জীবাণু এই ওষুধগুলোর প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া ভয়ংকর এ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে ভবিষ্যতে কোনো ওষুধ কার্যকর হবে না। যা মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরূপ।
গবেষণার তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’র (বিআইটিআইডি) সহকারী অধ্যাপক (মাইক্রোবায়োলজি) ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, গবেষণায় যে তথ্যটি উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই হুমকি হয়ে উঠবে। বিশেষ করে শিশু ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষেরা এই জীবাণু দ্বারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাইফয়েড জ্বর শিশুদের মধ্যে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই এ বিষয়ে এখনই সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। না হয় সামনে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।