ওবায়দুল করিমের বনবিলাস
সরকারি বনের জমি দখল করে অবৈধভাবে রিসোর্ট, বাগানবাড়ি ও অবকাশকেন্দ্র গড়ে তোলার খবর দেশে নতুন নয়। প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়, পেশিশক্তি ও অঢেল টাকার মাধ্যমে যুগের পর যুগ নানা কৌশলে অবৈধভাবে দখলে রাখছেন বিভিন্ন বনের জমি। বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ ওরিয়নের মালিক ওবায়দুল করিম ময়মনসিংহের ভালুকায় সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ ফরেস্ট) অন্তত ১০০ একর জমি অবৈধ দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বনবিলাস। সেখানে ওরিয়ন ফ্রিজ তৈরির কারখানা, ব্যক্তিগত প্রমোদ বাংলোসহ নির্মাণ করা হয়েছে নানা রকম স্থাপনা।
শুধু ওবায়দুল করিম নন, তার ভাই বীকন গ্রুপের মালিক ও সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম এবং রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিমও একই বনের আরও ১০০ একর করে জমি দখল করেছেন। বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বন বা রিজার্ভ ফরেস্টে বিনা অনুমতিতে যে কারও প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে গুলি করার ক্ষমতা রয়েছে বনপ্রহরীদের। অথচ ওরিয়নের অবৈধ দখল করা জমিতে স্থানীয়রা তো নয়ই, ফরেস্ট অফিসার বা বনকর্মীরাও প্রবেশ করতে পারেন না। ওবায়দুল করিম ও তার ভাইদের নিযুক্ত অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পায়নি। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে ওবায়দুল করিম ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে ছয় থেকে সাতটি মামলা করেছেন, যা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। ওবায়দুল করিম ও তার ভাই বিগত সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রভাবে বছরের পর বছর মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধভাবে দখলে রেখেও তারা আজও আছেন বহাল তবিয়তে।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসের (সিডস্টোর বাজার) উল্টো দিকে অন্তত ১০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে ওরিয়ন সাম্রাজ্য। ২০১৬ সালের দিকে বনের পাশে কয়েক বিঘা জমি কিনেই বন দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেন ওরিয়নের মালিক ওবায়দুল করিম। কয়েক দিন পর পর অল্প অল্প জমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বনের ১০২ একর জমি দখলে নেন ওবায়দুল করিম। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ ফরেস্ট) জায়গাও বাদ দেননি। এর মধ্যে রিজার্ভ ফরেস্ট ভালুকায় হবিরবাড়ি বিটের ১৫৪ দাগের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে ওরিয়নের ফ্রিজ তৈরির কারখানা। ওবায়দুল করিমের ভাই বীকন গ্রুপের মালিক এবাদুল করিম একই বিটের ১৫৪ ও ১৮৫ দাগ এবং কাঠালী বিটের ১০৭ দাগের জমি দখল করেছেন। তাদের আরেক ভাই রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিমও হবিরবাড়ি বিটের ১৮৫ ও কাঠালী বিটের ১০৭ দাগের জমি দখল করেছেন। এসব দাগের মধ্যে ১৫৪ দাগে বনের মোট জমির পরিমাণ ২০১ একর, যা ওবায়দুল করিম ও এবাদুল করিম অবৈধ দখলে রেখেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় এলে ওবায়দুল করিম ও এবাদুল করিম ভালুকা বন বিভাগের জমি আগ্রাসনের চেষ্টা শুরু করেন। ২০১৬ সালের মধ্যে সেই চেষ্টা কিছুটা সফল হয়। তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সোনার চেয়ে দামি জমিগুলো অনেকটা বিনা বাধায় দখল করেন। বন বিভাগ শুধু মামলা করেই দায় সেরেছে। এলাকাবাসী জানান, ওবায়দুল করিম ও অপর দুই ভাই ক্ষমতার দাপট, কখনো লাঠিয়াল বাহিনী, আবার কখনো বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেট ভারী করে জমিগুলো অবৈধভাবে দখলে নিতে সক্ষম হন।
এ বিষয়ে ভালুকা রেঞ্জ ফরেস্ট অফিসার (আরএফও) হারুনুর রশীদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভালুকা রেঞ্জে বনের মোট জমি রয়েছে ১৩ হাজার একর। এর মধ্যে ৮ হাজার একর বেদখল হয়েছে। ওরিয়ন, বীকন, রিদিশা ছাড়াও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে এসব জমি দখল করেছেন।