পুলিশ ঠিকভাবে কাজ করলে অর্ধেক সংস্কার হয়ে যাবে: সারজিস
পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে চান বলে মন্তব্য করে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় আড়াই লাখ পরিবার। তারা যদি ঠিকভাবে কাজ করে তাহলে অর্ধেক বাংলাদেশ অটোমেটিক সংস্কার হয়ে যাবে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর ফিশারিঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউটের হলরুমে শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ নামে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, নতুন বাংলাদেশে এখনো খুনিদের নাম উচ্চারিত হয়। নানাভাবে সাফাই গাওয়া হয়। ওদের রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কথা বলা হয়। খুনিরা হচ্ছে একেকজন প্যাথলজিক্যাল কিলার। ওই কিলার গোপালগঞ্জের শেখ পরিবার থেকে উঠে এসেছে। এই খুনি বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশের মানুষকে নানাভাবে খুন করেছে। কিন্তু তারা মিডিয়াসহ পুরো বাংলাদেশকে জিম্মি করে রাখায় এগুলো সামনে আসেনি এতদিন।
পুলিশকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এই খুনি বাংলাদেশ পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানকে পশুর মতো ব্যবহার করে বাংলাদেশের মানুষকে নরপশুর মতো খুন করেছে। আপনাদের পোশাক দেখে এখনো আমাদের ভীতির সৃষ্টি হয়। এখনো আমাদের মনে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। এর জন্য কেবল খুনি হাসিনা দায়ী এবং আপনাদের ব্যক্তিত্ব দায়ী। আপনারা ক্ষমতার লোভে, পদের লোভে পোশাকটিকে ধারণ করে সারাদেশে নানারকম কুকর্মে সহযোগিতা করেছেন।
সারজিস আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি চাইতো ৫ আগস্ট ১০ হাজার মানুষকে খুন করে হাসিনাকে মসনদে বসিয়ে রাখতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানের কথা চিন্তা করেছেন।
‘খুনিরা নতুন করে ফিরে আসছে, নতুন গল্প লিখছে এবং যারা তাদের পুনর্বাসন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা দ্বিতীয়বার রাজপথে নেমে জীবন দিতে প্রস্তুত। ৫ আগস্টের আগে যেমন আমরা একসঙ্গে জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, তেমনি খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে এবং সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে আবারো একসঙ্গে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে জীবন দিতে শিখে গিয়েছি। এই বাংলাদেশে কোনো দালাল, কোনো তোষামোদকারীর আর জায়গা হবে না।’
তিনি বলেন, এখনও যারা শহিদদের পরিবার নিয়ে, আন্দোলন নিয়ে নানা কথা বলছে, তারা শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া কীট, যা সে এতো বছর লালন করেছে। এসব কীটদের যদি পাখা গজায় তাহলে আজ থেকে ৫ বছর পর তারা শহিদ পরিবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাই খুনিরা যেন কোনোভাবেই পুনর্বাসনের সুযোগ না পায় সেজন্য সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজনে আবারও জীবনবাজি রাখতে আমরা প্রস্তুত।
আর্থিক সহায়তা কখনো পরিবারের অভাব পূরণ করতে পারবে না উল্লেখ করে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছেলে হারানো মা-বাবা, বাবা হারানো সন্তান, স্বামী হারানো স্ত্রীসহ অসংখ্য মানুষের দিনের পর দিন কান্না দেখতে দেখতে আমরা মেন্টালি ট্রমাটাইজড।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, রাসেল আহমেদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি ও শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সদস্য ডা. তাসনিম জারা।
উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) অং সুই প্রু মারমা, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি সঞ্জয় সরকার ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
উল্লেখ্য, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ উদ্যোগে ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এ সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫২ পরিবারের মধ্যে ১০৫ পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে চেক হস্তান্তর করা হয়। বাকি পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া শেষে চেক পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।