যেকোনও ধরনের চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন যেন না থাকে সে বিষয়ে সুপারিশ করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
দলীয় বিবেচনায় ক্যাডার পদে পদোন্নতি নিয়ে এক প্রশ্নে মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি উপসচিব থেকে ওপরের পদে পিএসসির পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে পদোন্নতি হবে।
তিনি বলেন, আর যে কোটা ছিল তা ৫০ শতাংশ করে রাখা হবে। প্রশাসন ক্যাডারে ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারে ৫০ শতাংশ। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
সরকারি চাকরি, পাসপোর্ট ইত্যাদিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন কোথাও থাকবে না, এয়ারপোর্টেও থাকবে না। প্রত্যেক নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার আছে।
মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ভারতের সহযোগিতা ছিল সেটা আমরা স্মরণ করি। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ আমরা শুরু করেছি, শেষও আমরাই করেছি। এটা আমাদের যুদ্ধ। সারা বিশ্ব জানে এই ঘটনা। তবে আমাদের যুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা ছিল সেটা আমরা স্মরণ করি।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি সিলেটের তৃতীয় ব্যাচ শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পোস্ট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে পোস্ট করেছেন, সেটি তার ব্যক্তিগত। ১৬ ডিসেম্বর এবং নয় মাসের যুদ্ধ এটি বাংলাদেশের। নয় মাস আমাদের দেশ বড় রক্তপাতের মাধ্যমে কাটিয়েছে। আমাদের মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আমাদের নারীরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পরে এসে এ ধরণের কথায় যারা যুদ্ধ করেছেন তারাও আহত হবেন।
এর আগে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের মেরিন একাডেমিগুলোকে আরও বৃহৎ পরিসরে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমাদের নাবিকদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মেরিনে আমাদের নারীদেরও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বিদেশ থেকে ৫জন পুরুষ ও ৫জন নারী প্রশিক্ষককে দেশে আনা হয়েছে। এতে মেরিন একাডেমিগুলো আরও সমৃদ্ধ হবে। নারীরাও চ্যালেঞ্জিং এই পেশায় যুক্ত হবেন।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে মেরিন একাডেমিগুলোকে নৌবাহিনীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে। যাতে মেরিন একাডেমিতে পড়াশুনা শেষ করে নৌবাহিনীতে যোগ দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি সিলেটের কমান্ড্যান্ট মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে ৪১জন ক্যাডেটকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হেলেনা বেগম (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
মৃত হেলেনা বেগম নেত্রকোনা জেলার পুর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের নেটিরকান্দা গ্রামের আব্দুল হাদীর মেয়ে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ফোকালপার্সন ডা. মহিউদ্দিন খান মুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, হেলেনা বেগম সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হেলেনা বেগম মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ২০ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এরমাঝে পুরুষ ১২ জন, নারী ৬ জন ও দুই জন শিশু চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪ জন ভর্তি হয়েছেন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক গৃহবধূকে পথ আটকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দূর সম্পর্কের এক দেবর। ওই সময় গৃহবধূর সাথে থাকা শ্বশুর রেজাউল হককেও ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত শাহনাজ আক্তার পিংকি (৩৫) উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর হাজীপুর এলাকার কুয়েত প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। তিনি ২ ছেলের জননী।
অভিযুক্ত দেবর সাইফুল ইসলাম ওরফে খালেদ (৩০) একই বাড়ির ডিশ লিটনের ছেলে।
নিহতের বড় বোন ফারজানা আক্তার সুমি বলেন, পারিবারিকভাবে ১৬ বছর আগে পিংকির সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বিয়ে হয়। ঘাতক খালেদ পিংকির দূর সম্পর্কের চাচাতো দেবর এবং একই বাড়ির বাসিন্দা। বছর খানেক আগে পিংকির ব্যবহৃত মোবাইল নষ্ট হয়ে যায়। স্বামী প্রবাসে থাকায় তার বড় ছেলের মাধ্যমে সেটি বাজার থেকে ঠিক করে আনতে দেয় খালেদকে। ওই সময় খালেদ মোবাইল থেকে পিংকির স্বামীকে পাঠানো ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও নিজের মোবাইল ফোনে নিয়ে নেয়। এরপর ওই ছবি ও ভিডিও দিয়ে পিংকিকে ব্ল্যাকমেইল করে সাত লাখ টাকা আদায় করে। একই কায়দায় পরকীয়া ও শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা চালায়। এরপর সে আরও টাকা দাবি করে এবং পরকীয়ায় ব্যর্থ হয়ে পিংকিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। কিছুদিন আগে এ নিয়ে আদালতে মামলা করে পিংকি। গত দুই মাস আগে পিংকির স্বামী দেশে আসলে এসব বিষয় নিয়ে তার ওপর হামলা করে খালেদ।
নিহতের দুলাভাই বাবর হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে স্বামীর বাড়ি থেকে শ্বশুর রেজাউল হকের (৭২) সাথে চৌমুহনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাবার বাড়িতে যাচ্ছিলেন পিংকি। ওই সময় তারা চৌমুহনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশা মিয়ার বাড়ির সামনের সড়কে পৌঁছলে খালেদ তাদের গতিরোধ করে। সেখানে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পিংকিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে খালেদ। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তখন পুত্রবধূকে বাঁচাতে চেষ্টা করলে শ্বশুর রেজাউল হোসনকেও ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা পিংকি ও তার শ্বশুরকে উদ্ধার করে চৌমুহনী লাইফ কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিংকিকে মৃত ঘোষণা করে।
চৌমুহনী লাইফ কেয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবু তালেব বলেন, পিংকিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, নিহত গৃহবধূর পরিবারের সাথে খালেদের পরিবারের আগে থেকে দ্বন্দ্ব ছিল। অনেক আগে দেবর-ভাবির মধ্যে হালকা সম্পর্ক ছিল বলেও জানা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধায় জমে উঠেছে শীতের পিঠার মৌসুমি দোকানগুলো। সন্ধ্যা নামতেই শহরের ফুটপাতে অন্তত ১০টি স্থানে চিতই ও ভাপা পিঠার জমজমাট পসরা বসায় পিঠা দোকানিরা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব অস্থায়ী দোকানে সমানতালে বাড়ে পিঠা প্রেমি মানুষের ভিড়। কেউ একা, কেউবা দলবদ্ধভাবে স্বাদ নেন শীতের পিঠার। আবার কেউ কেউ আসেন সপরিবারে।
এছাড়া কর্মব্যস্ত দিন শেষে অফিস ফেরত চাকরীজীবি, শীতের সন্ধ্যায় ঘুরতে বের হওয়া দম্পতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দিনমজুরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষই ভিড় জমান এসব পিঠার দোকানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা পার্কমোড়, এক নং ট্রাফিক, ফায়ার সার্ভিস মোড়, ঘাঘট লেক পাড়, রেল স্টেশনের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে এবং জেলা পরিষদ মোড়সহ অন্তত ১০ থেকে ১৫ স্থানে বসেছে শীতের চিতই-ভাপার অস্থায়ী দোকান। প্রত্যেকটি পিঠার দোকানেই প্রচন্ড ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের। ক্রেতাদের চাহিদামতো পিঠা সরবরাহে যেন এক প্রকার হিমশিমই খাচ্ছেন তারা।
এসময় পার্কমোড়ে ভাপা পিঠা খেতে আসা আশরাফ আলী নামের এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘প্রত্যেক বছর শীতে আমাদের শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাপা পিঠার ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। কর্মব্যস্ত দিন শেষে স্ত্রী ও সন্তানসহ পিঠা খেতে এসেছি। অনেক ভাল লাগছে।’
রনি মিয়া নামের এক পিঠা প্রেমী বলেন, ‘আসলে পিঠা ছাড়া যেন শীত অপূর্ণ মনে হয়। তাই পিঠা খেতেই এসেছি। দোকানিরা ভাপা পিঠার স্বাদ বাড়াতে চালের গুঁড়ার সঙ্গে খেজুরের গুড়, নারকেল, মোরব্বা, বাদাম, কিসমিস ও জয়ফলসহ বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে পিঠা তৈরি করে থাকেন। যা খেতে অসাধারণ লাগে।’
শহরের সব চেয়ে বড় পিঠার পসরা বসে এক নং ট্রাফিক মোড়ে। এখানে এক সঙ্গে বসে তিনটি দোকান বসে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে পিঠা বেচা-কেনা চলে। এদিন এখানে পিঠা খেতে আসা সদ্য বিবাহিত সিরাজ-শামীমা দম্পতি বলেন, বিষণ্ণতা কাটাতে বিকেলে শহরে ঘুরতে বের হয়েছি। ঘুরে-ফিরে পিঠার দোকানে আসলাম। চিতই পিঠা খাচ্ছি। এই পিঠা অতিরিক্ত ঝালের সর্ষে ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা দিয়ে খেতে অসাধারণ লাগছে।’
এখানকার মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, আমি এখানে ২০০৪ সাল থেকে চিতই পিঠার অস্থায়ী দোকান বসাই। শীতের তিন থেকে চার মাস আমি এই ব্যবসা করি। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠার দোকান চলে। প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ কেজি আটার চিতই পিঠা বিক্রি হয়। প্রতিটি পিঠার দাম মাত্র ১০ টাকা।
পার্ক মোড়ের ভাপা পিঠা ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তাফা বলেন, শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি পার্কের মোড়ে ভাপা পিঠার দোকান বসাই। পুরো শীতের সময়টাতে বেচাকেনা করি। চেষ্টা করি মানুষকে সুস্বাদু পিঠা খাওয়াতে। পিঠার দাম ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
শীতের পিঠা বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি ও নাট্যজন আলমগীর কবীর বাদল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাঙালির এই পিঠার সংস্কৃতি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী। বাংলার শীত পিঠা-পুলির উৎসবকে কেন্দ্র করে আরও আনন্দময় হয়ে ওঠে। শীত মৌসুমে শীতের পিঠার স্বাদ নেওয়াটই বাঙালির আনন্দ। স্বাদ আর সাধ্যের মধ্যে পাওয়া এসব পিঠার প্রচলন যেন যুগযুগ ধরে থাকে সেই প্রত্যাশার কথাও জানান এই নাট্যজন।