যশোরের বেনাপোল সিমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অনুপ্রবেশের সময় ৭ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সদস্যরা। তবে এসময় কোন পাচারকারীকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
বুধবার (১ জানুয়ারী) বিজিবির অভিযানে তাদের আটক করা হয়।
বিজ্ঞাপন
আটকেরা হলেন, সিদ্দিক বিশ্বাস (২২) ইয়াসিন বিশ্বাস (২৮) সুমন শেখ (১৯) রমজান আলী (৩০) রাবেয়া খানন (৬) মাবিয়া খনন (৪) আলামিন শেখ (২৫) শহিদুল ইসলাম (৩৭) এদের বাড়ি যশোর,ফরিদপুর,খুলনা, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এর অধিনায়ক, লেঃ কর্নেল সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী, জানান,একটি অভিযানে বেনাপোরের ধান্যখোলা বিওপি’র জেলেপাড়া পোস্টের টহলদল অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় (পুরুষ-৫ জন ও শিশু-২ জন) বাংলাদেশীকে আটক করা হয়। আটককৃতদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে কলেজ ছাত্র মুরাদ হাসান (১৭) হত্যা মামলার মূলহোতা ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আলম হামিম (২৩) বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত আশরাফুল আলম হামিম উপজেলার আলাবক্সপুর এলাকার মো. আবুল কালামের ছেলে। সে নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ শাখার ছাত্রলীগ নেতা।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহমেদ গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চলছিলো। এরই ধারাবাহিকতা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হামিম বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এর ফলে যেকোন সময় তিনি বিদেশে পাড়ি দিতে পারেন। এ অবস্থায় গতকাল শুক্রবার রাতে কাতার যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহমেদ আরও বলেন গ্রেফতার হওয়া আসামিকে নান্দাইল থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসার কাজ প্রক্রিয়াধীন বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪ উপলক্ষে ৩১ শে মে রাতে নান্দাইল উপজেলার সদরে আনারস প্রতীকের নির্বাচনী লিফলেট বিতরণের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্র মুরাদ নিহত হয়।পরে এ ঘটনা ১ জুন নিহতের পিতা তোফাজ্জল হোসেন ভূইয়া বাদী হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ ১১ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বিভিন্ন দাবি নিয়ে সাভার-আশুলিয়ার মাঠ গরম ছিল গত বছরের অর্ধেকটা সময়। প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমের শিরোনামে হতো সাভার আশুলিয়ার ঘটনা। জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের আলোচিত ঘটনার নির্মম সাক্ষী এই শিল্পাঞ্চল। চলছিল আন্দোলন সংগ্রাম, রক্তে ভিজেছে রাজপথ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায় অর্ধশত প্রাণহানি এছাড়াও আরও হাজারো আহত মানুষের আর্তনাদ এই শহরে। তারমধ্যে জীবন যুদ্ধের নানা দাবিতে চলতে থাকে পোশাক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। সড়ক মহাসড়ক অবরোধ। হামলা-ভাংচুর। আহত নিহতের ঘটনা। টানা ৩২ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধের ঘটনাও রয়েছে। সেই অস্থিরতা কমলেও এখনো যেন শেষ হয়নি। সাভার ও আশুলিয়ার বছর শেষ হয়েছে অস্বস্তির আর অনিশ্চয়তার খবর। আর প্রশাসন বলছে, অতিদ্রুত সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
২০২৪ এর জুন থেকে ডিসেম্বর:
জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তৎকালীন সরকার সমর্থিত সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্বরতার শীর্ষ কয়েকটি এলাকার মধ্যে ছিল আশুলিয়া ও সাভার অঞ্চল। ইয়ামিন থেকে নাম না জানা অনেকে ছিলেন মৃত্যুর মিছিলের প্রথম সাড়িতে। মাত্র ১৫দিনের ব্যবধানে শহিদ হয়েছেন বিভিন্ন পেশার অর্ধশত মানুষ। আহত হয়েছিলেন হাজারের বেশি। আন্দোলনের শেষ দিন ৫ আগস্ট সৈরাচার শাসক শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার দিন তাণ্ডবে নিহত হন প্রায় অর্ধশত। তারপর হতাহতের নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি। বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে যাওয়া সাভার ও আশুলিয়ার দুই থানাই অচল হয়ে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় থানাগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করা হয়। বছরের শেষ দিনগুলোতে এখনো ছাত্র-জনতার ক্ষত আর স্মৃতি বয়ে বেড়াছে এই উপজেলাটি।
সাভার ও আশুলিয়ায় যা ঘটেছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে:
জুলাইয়ের শুরুতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচী দেয়। সাথে চলে মহাসড়কে অবরোধের মত ঘটনাও। ১৫ জুলাই মধ্য রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে মুখোমুখী অবস্থানে চলে যায় ছাত্রলীগ। পরে সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনা আসলেও মানতে রাজি ছিলেন না অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ১৭ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেই অভিযানের নেতৃত্বে দেন তৎকালীন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফী। পুলিশের তান্ডবে ছত্রভঙ্গ হলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা আশপাশের এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।
তৎকালীন সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেও ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার চেয়ে ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার চেয়ে মাঠে নামে সাভারসহ আশপাশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের উপর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাণ্ডব চালায়। ১৮ জুলাই শিক্ষার্থী ইয়ামিনসহ মারা যান অন্তত চারজন।
১ঌ জুলাই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকা অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ। দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার উপর দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী সেদিন মারা যান চার জন। এদিন কয়েক হাজার সাধারণ শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়েছিলেন। ২০ জুলাই সকালে পুলিশের গুলিতে মারা যায় ব্যবসায়ীসহ দুইজন। ২৯ জুলাই থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরবর্তীতে ৪ আগস্ট তারা পুনরায় সাভার বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করার চেষ্টা করে। এবার তাদের সঙ্গে যোগ দেন নানা পেশাজীবীর হাজারও সাধারণ মানুষ।
এছাড়া একই দিনে আশুলিয়ার বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে অবরোধের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাদের নির্বিচারে চালানো গুলিতে নিহত হন এক শিক্ষার্থী। এখবর ছড়িয়ে পরলে আন্দোলনে যোগ দেয় বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫ আগস্ট আরও বর্বর হয়ে ওঠে পুলিশ। সকাল থেকে ঢাকা লং মার্চ শুরু করে আশুলিয়ার বাইপাইল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরী গেইট জড়ো হয় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এদিন দুপুর থেকে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে নির্বিচারে গুলি করে পুলিশ। সাভারেও একই তাণ্ডব চালানো হয়। তাদের তাণ্ডবে নিহত হন অন্তত অর্ধশত মানুষ। আহত হয় হাজারেও বেশি। তবে এদিন আশুলিয়া থানা এলাকায় ঘটে যায় সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। গুলিবিদ্ধ ছয়জনকে ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে গুম করার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। পিটিয়ে মারা হয় তিন পুলিশ সদস্যকে।
আন্দোলনে শ্রমিকেরা:
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে জুনের বিভিন্ন সময় শ্রমিকেরা মাঠে নামলেও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে ছিল পোশাক শ্রমিকদের এ আন্দোলন। তবে আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দ্বিতীয় সপ্তাহে চাকরিতে নারী পুরুষ নিয়োগ বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন শুরু করে চাকরিপ্রার্থীরা। এরপর থেকে আন্দোলনের মাঝে আটকে যায় আশুলিয়া। প্রতিদিনই নিত্য নতুন দাবি নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন, কর্মবিরতিসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আগস্টের ১২ তারিখ থেকে ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার প্রধান ফটকের সামনে চাকরিতে বৈষম্যহীন করার দাবিতে বেশ কয়েকদিন আন্দোলন চলে। প্রথমে পুরুষরা শুরু করলেও শেষটা করেছেন নারী চাকরি প্রার্থীরা। এ আন্দোলন রুপ নেয় বিভিন্ন দাবিতে। ছড়িয়ে পরে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কারখানাগুলোতে। কিন্তু সেসব দাবির অধিকাংশ মেনে নিলেও পরবর্তীতে ফিরে আসেনি স্বাভাবিক উৎপাদন।
আশুলিয়ার শারমিন গ্রুপের কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকরা ২০টি দাবি তুলে ধরেছিলেন। সেখানে উল্লেখযোগ্য ছিল- বৈষম্য না করা ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ শ্রমিক মারা গেলে কোম্পানির দায়িত্বে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পাঠানো, চাকরিকালীন কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার খরচ কোম্পানিকে বহন করতে হবে এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা দিতে হবে আগেই।
একই এলাকার নরসিংহপুরে নাসা গ্রুপের কাছে শ্রমিকরা দাবি রেখেছিলেন ১৫টি। ছিল বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ১০ শতাংশ করা, ঈদে ১২ দিন ছুটি। কিছু দাবির সাথে মিল থাকলে যুক্ত হয় জিএবি লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের শর্ত। তারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিলেন ১০টি দাবি। দিয়েছেন কারখানার খাবারে সপ্তাহে দুইদিন গরুর মাংস, দুইদিন মুরগির মাংস এবং দুইদিন সবজির সঙ্গে ডিম দেওয়ার দাবি। পাশাপাশি জ্বর, মাথাব্যথার মতো সাধারণ সমস্যায় চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে এক দিনের ছুটি, বছরে একবার পিকনিকে নিয়ে যাওয়া, কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির নিশ্চয়তা।
এছাড়া সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর জুড়ে সকালে কারখানা চালু হলেও আন্দোলনে দুপুরে কারখানা বন্ধ করতে হয়। অক্টোবর ও নভেম্বর দুটি কারখানার রয়েছে মহাসড়ক অবরোধের প্রতিযোগিতা। সেপ্টেম্বর ৩০ তারিখ থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত বার্ডস গ্রুপের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিটসহ বিভিন্ন দাবিতে নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন ৫২ ঘণ্টা। এদিকে ২১ থেকে ২২ অক্টোবর আশুলিয়ার বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে রাখে জেনারেশন নেক্সট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। তারা সড়কে ছিলেন ৩২ ঘণ্টা। তবে একদিন বাদে বাংলা বাজার কারখানার সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় চারজন শ্রমিক। পরে একজন মারা যান। নভেম্বর ও ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক কারখানার ভিতর ছিল কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ। এসময় প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন কারখানা যুক্ত হয়েছে সাধারণ ছুটির তালিকায়।
এদিকে ডিসেম্বর শেষের দিকে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক আন্দোলন ছিল। সর্বশেষ সাভারের বকেয়া বেতন, ওভারটাইম ও ছুটির টাকা পরিশোধের দাবিতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে বসুন্ধরা গার্মেন্টস নামক তৈরি পোশাক কারখানার কয়েক শতাধিক শ্রমিক।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৯৪ মামলা:
থানা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে ৬৭টি। আসামি গ্রেফতার হয়েছে ১৬৭জন । এদিকে সাভারে জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতা হতাহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৭টি। গ্রেফতার হয়েছে ৪০ জনের অধিক।
এছাড়া জুন ও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকদের আন্দোলনে পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলা সংখ্যা ১৭টি। যার ৯টি শিল্প পুলিশ ও ৮টি থানা পুলিশ তদন্ত করছে। আসামি গ্রেফতার হয়েছে ৪০ জনের অধিক।
শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে যা বলছেন শ্রমিকেরা:
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক বলেন, আমরা আন্দোলন করছি আমাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য। সাধারণ মানুষের কিছুটা ভোগান্তি হলেও আমাদেরকে সমর্থন করেছে। আমাদেরও পরিবার রয়েছে। একটা মাস কাজ করার পর বেতন সর্বোচ্চ ১৫ হাজার। এটা দিয়ে কিভাবে সংসার চালাবো। সেটাও ঠিক মতো পাওয়া যায় না। চার মাসও বেতনের মুখ দেখা যায় না। কিন্ত মালিকরা তো না খেয়ে থাকে না। আবার ছেলে মেয়ের পড়াশোনা। তাই ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি।
একটি কারখানায় দুপুরের খাবারের সাথে দুইদিন ভাতের সাথে গরুর মাংস দেওয়ার দাবি করেছিলেন। এটা যৌক্তিক কিনা জানতে চাইলে তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানিমুখী শিল্পখাতে আমরা কাজ করি। আমাদের চাহিদা সবার আগে পূরণের আগ্রহ থাকতে হবে। আমাদের শারীরিক সুস্থতা জরুরী। তাই দাবি জানিয়েছি।
কেমন ছিল দিনগুলো:
জুলাই ও আগস্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাভার ও আশুলিয়ায় আন্দোলনে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী নবীনুর রহমান নবীন। তিনি জানান তার অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজপথে আন্দোলন করতে হয়েছে। জুলাইয়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের দমাতে আশুলিয়া থানার পুলিশ বাদি হয়ে ১৭ জুলাই মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আমাকেও আসামি করা হয়। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার এড়াতে রাত কাটাতে হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। দিনের বেলায় মাস্ক পরে অনেকটা লুকিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে হয়েছে। শহীদ হওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে আমরা ১০-১৫ জনের দলে ভাগ হয়ে জড়ো হতাম ক্যাম্পাসসহ সাভার ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। এরপর সবাই মিলে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। আমাদের অনেকের সামনে তখন দুটি পথ খোলা ছিল, হয় যৌক্তিক আন্দোলনে জয়ী হয়ে বৈষম্যহীন দেশে মুক্তির স্বাদ পাওয়া আর নাহয় পরাজিত হয়ে মিথ্যা মামলায় স্বৈরাচারী সরকারের বর্বরতার শিকার হওয়া। ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এবার আমাদের সবার চাওয়া দেশটা সবার হবে, সবার অধিকার নিশ্চিত হবে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলন হয়েছে এখনও হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক করেছি। চেষ্টা চলছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় বাড়ির পাশে মাদ্রাসায় বিদ্যুতের লাইন দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবু তালহা(৩২) এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার পূর্ব বিছনদই গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবু তালহা পূর্ব বিছনদই গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে।
আবু তালহা গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কবর নিয়ে একটি পোস্ট করেন। পোস্টের ১৭ ঘণ্টা পর তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ১১ টায় বাড়ির পাশে মাদ্রাসায় বিদ্যুতের লাইন দিতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুন্ন-নবী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ফরিদপুরে গলাকাটা বস্তাবন্দি অবস্থায় মাটিতে পুঁতে রাখা আব্দুল হালিম শেখ (২৫) নামের আরও এক রিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোতয়ালী পুলিশ। নিহত আব্দুল হালিম শহরের মধ্য আলীপুর এলাকার মৃত আব্দুর রব শেখের ছেলে।
শনিবার (৪ জানুয়ারী) দুপুরে ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষীপুর মডেলটাউন এলাকা থেকে ওই রিকশা চালকের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, 'গত মঙ্গলবার রিকশা চালক আব্দুল হালিম শেখ বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। কোথাও খুঁজে না পেয়ে পরিবার গতকাল শুক্রবার কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
হালিমের পরিবার জানায়, ওই এলাকার রনি নামে এক ব্যক্তির সাথে ওঠাবসা ছিল হালিমের। রনির বাসায় হালিমকে খুঁজতে গেলে তাদের কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। আর এই সময় তারা একটি ঘরের দরজা না খোলায় আরও সন্দেহ হয়। পরে পুলিশকে খবর দিলে একটি ঘরের ভিতরে কয়েক টুকরা করা অবস্থায় হালিমের রিকশা পাওয়া যায়। এরপর আশেপাশে খোঁজ করলে ওই বাড়ির পাশে মাটিতে পুঁতে রাখা হালিম শেখের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।'
কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন বলেন, 'মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের রিকশা একটি রান্নাঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রিকশা নেওয়ার পর তাকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকালে পাশের এলাকা ভাটি লক্ষ্মীপুরে থেকে হুসাইন নামে ১৩ বছরের এক কিশোর অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত হুসাইনের বাড়ি শহরের চর টেপাখোলা ব্যাপারীপাড়া। তার বাবার নাম মৃত খোকা ব্যাপারী। মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার বাবা মারা গেছেন। উপার্জনের অবলম্বন হিসেবে হুসাইনকে একটি নতুন রিকশা কিনে দেন আত্মীয়-স্বজনেরা। সেই রিকশা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে খুন হন হুসাইন। এ সময় তার অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় খুনিরা।