বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মিয়া পরওয়ার বলেছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে যারা এক সাথে হাতে হাত রেখে কাজ করেছি, দলমতের ভিন্নতা থাকলেও সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি জুলাই অভ্যুত্থানের যে মূল চেতনাকে ধারণ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে জামায়াত ইসলামী।
তিনি বলেন, এই অন্তবর্তীকালীন সরকার যদি ব্যর্থ হয়ে যায়, তাহলে এই জাতির ভাগ্য কিন্তু একটি মহাদুর্যোগ অপেক্ষা করছে। সেই দুর্যোগ নেমে আসবে, কোন চাঁদাবজি, মাস্তানি কিন্তু সেই দুর্যোগ থেকে জাতিকে আপনি বাঁচাতে পারবেন না। কাজেই ধৈর্য্য ধরতে হবে, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে হবে।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার আর কে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মুক্তাগাছা উপজেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী দলগুলোর সাথে আলোচনা চলছে, জামায়াতি ইসলামী দলগুলোর মাঝে ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত আছে। ইনশাআল্লাহ কোন প্রক্রিয়া একটি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী সেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই, যেই বাংলাদেশে মিথ্যাচার অসমতা, দুর্নীতি থাকবে না।
সংবিধানে ন্যয়নীতি কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এই জাতি সুবিচার পায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আল্লাহকে ভরসা করে নির্ভুল জ্ঞানের উৎস আল কোরআনের আলোকে কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করতে পারলে তাহলেই প্রকৃত ইনসাফ হবে। নতুন বাংলাদেশে নির্বাচনকে ঠেকাবার বাইরের শক্তি, আভ্যন্তরীণ শক্তিকে ঠেকাতে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।
পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না, আপনি এই জুলাই অভ্যত্থুানের পর পাল্টা কু করার চেষ্টা করলেন। আপনি জুডিশিয়ালি কু করে বিচারপতিদেরকে দিয়ে অর্ন্তবতী সরকারকে বাতিলের চেষ্টা করলেন। আপনি আনসার কান্ড, সচিবালয় ঘেরাও, এ দাবি, সেই দাবি, হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ আমার প্রিয় সকল ধর্মের ভাইদেরকে উসকে দিয়ে অরাজকতা করার চেষ্টা করলেন। এখনও সেই চেষ্টা আপনি করছেন, সচিবালয়ে আগুন দিয়ে দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো লাভ নেই। পাঁচ মাসে এ সরকার জনগণের নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নাকি দিল্লির ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করবে।
স্বৈরাচারের বিচার হতেই হবে উল্লেখ করে তিনি বলেণ, পলাতক ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা এবং তাদের দুর্নীতিবাজ, জুলুমবাজ, ফ্যাসিবাদীদের আর বাংলাদেশে রাজনীতি করার নৈতিক, রাজনৈতিক, মানসিক, সাংবিধানিক কোন অধিকার থাকবে না। বাংলাদেশে তাদের রাজনৈতিকভাবে মৃত্যু ঘটবে। কাজেই এদের বিচার করতে হবে বিচার কাজ খুব দ্রæত সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের এ অস্থিরতা ও অরাজকতার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় ঐক্যের এ চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছে। নিশ্চই আমাদের নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে আমাদের সোনার সন্তানেরা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে ঋণী করে গেছেন। এ রক্তের দায়, রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। বাংলার লক্ষকোটি মানুষ জুলাই অভ্যুত্থানকে গ্রহন করেছে,ওই আবু সাঈদ মুগ্ধের মতো ফ্যাসিবাদের সামনে বুক পেতে দিয়ে ফ্যাসিবাদের পরাজয় বাংলাদেশকে বিজীয় করেছে। প্রয়োজন হলে আরও লক্ষ আবু সাঈদ মুগ্ধরা আবার রক্ত দিয়ে তোমাদেরকে মোকাবেলা করবে। আমাদের সেই নির্বাচন পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে, অবশ্য নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু।
কর্মী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামী মুক্তাগাছা উপজেলার আমীর অধ্যাপক মোঃ শামছুল হক। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ মোজাহিদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা দক্ষিণ মহানগরীর আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পরিচালক ড. সামিউল হক ফারুকী, ময়মনসিংহ জেলা শাখার আমির আব্দুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, মুক্তাগাছা পৌর জামায়াতের আমীর আফতাবুর রহমান আকন্দ প্রমুখ।