কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়ন এবং অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে অনশনে বসেন এক শিক্ষার্থী। আবরার শাহরিয়ার নামের ঐ শিক্ষার্থী দিনভর অনশন শেষে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের লিখিত অঙ্গীকারে অনশন ভাঙেন তিনি। লিখিত অঙ্গীকারে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) হাসপাতালের আটতলা ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে হাসপাতাল চত্বরে অনশনে বসেন ঐ শিক্ষার্থী। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় চিকিৎসকের হুমকি, হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার দুরবস্থা, অনিয়ম-দুর্নীতি, ওষুধ সংকট ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ তুলে তিনি অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
অনশনে বসা আবরার শাহরিয়ার শহরের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। এর আগে হাসপাতালের অনিয়ম ও চিকিৎসকের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এক চিকিৎসক তাকেসহ তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।‘কথা বলা যাবে না, কথা বললে মরতে হবে; ওষুধ নেই? না থাকুক, খোঁজ করলে মরতে হবে; য বলি বা করি, আমাকে মরতে হবে। তাহলে হাসপাতালের প্রয়োজন কী?; মরতে হবে। ওই মামা না প্লিজ; হে রাষ্ট্র তোমার সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেবো কোথা’ এমন সব লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল কালো কাপড়ে মুখ বেঁধে অনশনে বসা শাহরিয়ারের সামনে।
শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বাম, ডান কিংবা মধ্যপন্থি কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নই। বাংলাদেশের একজন নাগরিক। হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় একজন চিকিৎসক আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এটি যদি স্বাধীন দেশ হয় এবং স্বাধীন দেশেও যদি বাকস্বাধীনতা না থাকে, তবে স্বৈরাচার শাসক থাকলেই বা আমাদের কি ক্ষতি হতো?’ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমার নির্দিষ্ট কোনও দাবি নেই। কারও পদত্যাগ কিংবা বহিষ্কার চাই না। আমি রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে প্রশ্ন করতে চাই, হে রাষ্ট্র, তুমি কার? চিকিৎসা আমাদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি। কিন্তু আমি আমার জেলায় তা কতটুকু পাচ্ছি? হাসপাতালে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, ভালো খাবার নেই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নেই। এর সমাধান আমি কবে পাবো? কারও জীবন না গেলে কি রাষ্ট্রের চোখ খুলবে না?’ কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়ে অনশনে বসা এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সিস্টেমকে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিচ্ছি। দুই দিনে সিস্টেমের সংস্কার না হলে আমি আন্দোলনের ডাক দেবো না। কারও পদত্যাগ চাইবো না। শুধু ভুলে যাবো যে আমি বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের নাগরিক এবং দেশকে ভালোবাসি। বাকি সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের।’
শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের অনড় অবস্থানের কারণে টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহসহ একাধিক চিকিসৎক গিয়ে তার অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হাসপাতালের নানা সমস্যা ও সংকট সমাধানের আশ্বাস ছাড়া অনশন ভাঙতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। পরে এসপির সহযোগিতায় তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহর লিখিত অঙ্গীকারে অনশন ভাঙেন এই শিক্ষার্থী।
তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ তার লিখিত অঙ্গীকারে বলেন, ‘ আমি উল্লেখিত বিষয়গুলোর সহিত (শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের অভিযোগ ও দাবিসমূহ) একমত পোষণ করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে সমাধান করার জন্য অঙ্গীকার করছি।’