নান্দাইলে ১২’শ কাঠা জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্কা
ট্রান্সফরমার একবার চুরি হলে অর্ধেক দাম দিয়ে পাওয়া গেছে। কিন্তু পরের বার চুরি হলে নিজেরাই পুরো দাম দিয়ে কিনতে হয়। পল্লী বিদ্যুতের এমন বিধানের গ্যাড়াকলে পড়ে তিনটি গ্রামের শতাধিক কৃষক পানির অভাবে তাদের জমিতে গত দুই বছর ধরে বোরো ধানের চাষ করতে পারেননি। বর্তমানেও প্রায় ১২শ কাঠা জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন ঘটনা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার লংপুর গ্রামে।
জানা গেছে, উপজেলার লংপুর গ্রামে সমিতির আওয়াতায় একটি গভীর নলকূপের তিনটি ট্রান্সফর্মারের ভেতরে থাকা যন্ত্রাংশ এবং মোটর গত চার বছর আগে চুরি হয়ে যায়। পরে পল্লী বিদ্যুতের নিয়মানুযায়ী অর্ধেক টাকা জমা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনে চাষাবাদ করা হচ্ছিল। এ অবস্থায় আবারও চুরি হলে পুরো টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় ট্রান্সফরমার সচল হয়নি। ফলে তিনটি গ্রামের শতাধিক কৃষক পানির অভাবে তাদের জমিতে গত দু বছর ধরে বোরো ধানের চাষ করতে পারেননি। একই কারণে এ বছরও ওই নলকূপের আওতাধীন ১২০০ (১০ শতকে ১ কাঠা) কাঠা জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের লংপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চৌরাস্তা-কেন্দুয়া পাকা সড়কের পশ্চিমপার্শ্বে বিস্তর পতিত জমি। জমির মাঝখানে একটি গভীর নলকূপ থাকলেও তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নলকূপের কাছাকাছি খুঁটিতে তিনটি ট্রান্সফরমার ঝুলতে দেখা গেলেও ভেতর ফাঁকা।
স্থানীয়রা জানান, দুই বছর পূর্বে ট্রান্সফরমারের ভেতরের সবকিছু চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। সঙ্গে নিয়ে গেছে নলকূপের মোটর ও লোহার বড় পাইপটিও। এরশাদ সরকারের আমলে বসানো এ নলকূপের পানি দিয়েই লংপুর, চামারুল্লাহ বাহের বানাইল গ্রামের শতাধিক কৃষক তাদের প্রায় ১২ শত (১২০০০ শতক) কাঠা জমিতে বোরো ধান চাষ করে আসছিলেন। জমি উর্বর হওয়ায় এখানে ধানের ফলনও হত ভাল। কিন্তু ট্রান্সফরমার চুরি হবার কারণে গত দুই মওসুম তারা ধান চাষ করতে পারেননি। একই কারণে এবছরও চাষ করতে পারবেন না বলে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
স্থানীয় কৃষক মোস্তফা জানান, দুই মৌসুম ধরে তার ৪ কাঠা জমিতে, রাজিব মিয়া সাড়ে ৮ কাঠা, আব্দুল কাদির ২০ কাঠা, মতিউর রহমান ১২ কাঠা জমিতে ধানের আবাদ করতে পারছেন না। আকরাম হোসেন খান জানান, তিনি পানির অভাবে দু বছর ধরে ৫৫ কাঠা জমিতে ধানের চাষ করতে না পেরে সরিষার চাষ করছেন। এবছরও কিছু সরিষার চাষ করেছেন।
লংপুর গভীর নলকূপ সমিতির সাবেক ম্যানেজার পল্লী চিকিৎসক মতিউর রহমান খান জানান, চার বছর পূর্বে চোরেরা নলকূপের তিনটি ট্রান্সফর্মার খুলে ভেতর থেকে সবকিছু নিয়ে যায়। থানায় জিডি করে স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের মাধ্যমে অর্ধেক টাকা জমা দিয়ে পুনরায় ট্রান্সফরমার লাগিয়ে বোরো চাষ করে আসছিলেন। কিন্তু দুবছর পূর্বে আবারও ট্রান্সফরমার ৩টি চুরি হয়ে যায়। স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে যোগাযোগ করলে তারা নগদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা জমা দিয়ে ট্রান্সফরসার ৩টি কিনে নিতে হবে বলে জানান। এত টাকা সমিতির সদস্য গরীব কৃষকদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নলকূপটি চালু করা যাচ্ছে না।
নান্দাইল উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার আশরাফুল হক আকন্দ জানান,পূর্বে ট্রান্সফরমার কিনে দেবার মত ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এখন সে ধরনের ব্যবস্থা নেই। তাই যা করতে হয় সমিতিকেই করতে হবে।
নান্দাইল উপজেলা নিবার্হী অফিসা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি )ফয়েজুর রহমান জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। নলকূপ সমিতির ম্যানেজারকে তার কাছে একটি আবেদন করার পরামর্শ দেন।