মাঠে আমন ফসল থাকা অবস্থায় বপন করা হয় বীজ। ধান গাছ কাটার পর চোখে পড়ে সরিষা গাছ। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। এ পদ্ধতিতে চাষ করে জেলার তিন ফসলি ধানি জমি থেকে বাড়তি ফসল হিসেবে বিপুল পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হচ্ছে। ফলে বাড়তি উপার্জন করতে পারছেন এখনকার কৃষকরা। আরও বৃহৎ পরিসরে এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষ করে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, আমন ধান কাটার পর বোরো ধান রোপণের আগ পর্যন্ত উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমি অলস পড়ে থাকে। কয়েক বছর আগে এই সময়টা কাজে লাগিয়ে বাড়তি ফসল হিসেবে বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এই পদ্ধতি এখন কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে অনেক জমিতেই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার নান্দানিয়া, নারায়ন ডহর, বর্শিকুড়া, জগদল, গণমানপুরুয়া এলাকায় কোনো রকম জমি চাষ না করেই সরিষা আবাদ করা হয়েছে। অল্প কয়েকদিন বাদেই শুরু হবে সরিষা কাটার কাজ।
কৃষকরা জানান, হাল চাষের খরচ না থাকায় প্রতি বিঘা জমিতে বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ কাটা-মাড়াই করে ফসল ঘরে তুলতে তাদের সম্ভাব্য খরচ হবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা সরিষার ফলন যদি ৭ থেকে ৮ মণ হয় এবং বর্তমানে প্রতি মণ সরিষার বাজার ২ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৮শ’ টাকা ঠিক থাকে তাহলে প্রতি বিঘা সরিষা বিক্রয় হবে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা এবং খরচ বাদে প্রতি বিঘায় তাদের লাভ হবে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা।
তারা আরও জানায়, বিনা চাষের কারণে একদিকে যেমন খরচ কম হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি সঠিক সময়ে চাষ করায় বছরে একই জমিতে তিনটি ফসল থেকে আগের চেয়ে দ্বিগুণ আয় করছেন কৃষক।
নান্দানিয়া এলাকার কৃষক কামাল মিয়া জানান, জমি থেকে ফসল কাটতে ১০-১২ দিন কেটে যায়। এরপর জমি চাষযোগ্য করতে আরও ১০-১২ দিন চলে যায়। ফলে চাষ করে সরিষা বুনলে সরিষা তুলে আর বোরো আবাদ সম্ভব হতো না। এছাড়া বিঘাপ্রতি জমি চাষের খরচও পড়ে যায় হাজার টাকার উপরে। তাই বিনা চাষে সরিষা আবাদ করায় চাষের খরচ বেঁচে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচও কমে আসছে।
গণমানপুরুয়া গ্রামের কৃষক হামিদ জানান, আমন ধান কাটার ১৫ দিন আগে ক্ষেতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে ধান কেটে নিলে সরিষা গাছ সতেজ হয়ে উঠে। এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষে প্রতি বিঘায় মাত্র ১ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে প্রতি বিঘায় সরিষা পাওয়া যায় ৪ মণ। যার বাজার মূল্য ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোদাসিল হায়দার আলমগীর জানান, এই পদ্ধতিতে সরিষা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকরা দিন দিন বিনা চাষে সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। আগামীতে অধিকাংশ তিন ফসলি ধানি জমি বিনা চাষে সরিষা আবাদের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবিরের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, এ এলাকায় আগে এক থেকে দুই ফসল চাষ হতো, ওইসব জমিতে এখন তিন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। গতবার সরিষা চাষে কৃষক লাভবান হয়েছে। আমরা আশা করছি এবারো তারা লাভবান হবেন।