বিজিবির সঙ্গে অকুতোভয় দেশপ্রেমিক

  • কল্লোল রায় ও মো. সিফাত রানা, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সোমবার (৬ জানুয়ারি) থেকে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। কয়েক দফায় পতাকা বৈঠকের পর বুধবার ৮ (জানুয়ারি) অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিজিবি-বিএসএফ। উত্তেজনা বাড়ে সীমান্তে।

এদিকে দেশের মাটি রক্ষায় বিজিবির সঙ্গে যোগ দেয় ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও। বেলা ১২ টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিজিবি’র সঙ্গে স্থানীয়দের একজনকে কাস্তে হাতে বসে থাকতে দেখা যায় । তার দৃষ্টি ছিল সীমান্তের দিকে। বিএসএফের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কাস্তে হাতে ওই ব্যক্তির অবস্থান ঠিক যেন বাঁশের কেল্লার তিতুমীরের মতোই।

বিজ্ঞাপন

মুহূর্তেই ওই ব্যক্তির দেশ প্রেমের চিত্র গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। উপদেষ্টা আফিস মাহমুদসহ দেশ ও বিদেশের অনেকেই ছবিটি শেয়ার করে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ওই ব্যক্তিকে।

তবে কে এই অকুতোভয় দেশপ্রেমিক ?

বিজ্ঞাপন

এই ঘটনার পর ওই ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা করে বার্তা২৪.কম। কাস্তে হাতে বসে থাকা ওই ব্যক্তির নাম মো. বাবলু হক (৩৫)। পেশায় একজন কৃষক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা তিনি।

বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সীমান্ত থেকে তার বাড়ি প্রায় ৩০০ গজ দূরে। কয়েকদিন থেকেই বিজিবি বিএসএফের সঙ্গে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে ঝামেলা চলছিল। এসব চোখের সামনে দেখায় আর থাকতে পারেন নি তিনি।

কাস্তে হাতে বসে থাকা ওই ব্যক্তির নাম মো. বাবলু হক

মো. বাবলু হক বলেন, বুধবার সকালে বিএসএফ ক্যাম (ক্যাম্প) বসায় প্রস্তুত নিলে, তখন আমরাও মইচ্চা (পরিখা) খুইরা অবস্থান নিলাম। হামা ১০-১৫ জন সাধারণ লোক গিয়ে খাল খুড়লাম। পেছনে কয়েকটা গ্রামের হাজারখানেক লোক ছিল। সকালে মইচ্চা (পরিখা) খুইড়া সারাদিন ওইহানে (ওখানে) বইসা ছিলাম। সকালে কাস্তে নিয়াই মাঠে কাজে গেছিলাম। তাই ওইডা নিয়াই ওখানে বইসা আছিলাম। কেড়ায় ছবি তুলতে কইতে পারি না।

তিনি আরও জানান, সকালের দিকে বিপুল সংখ্যক বিএসএফ সীমান্তে অবস্থান নিল আশেপাশের গ্রামগুলোতে খবর দেয়া হয়। মুহূর্তেই জড়ো হন হাজারো মানুষ। মাঠে উপস্থিত কৃষকেরা লেগে পড়েন সেমি বাংকার খননে। এরপর দফায় দফায় বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক হওয়ার পর বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করে দেয়।

পেশায় কৃষক মো. বাবলু হক (৩৫) দাম্পত্য জীবনে ৪ সন্তানের জনক। ১ মেয়ে, ৩ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার বসবাস।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সীমান্তের ভারতীয় অংশে নোম্যানস ল্যান্ডের ১০০ গজ অভ্যন্তরে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অমান্য করে আলোচনা ছাড়াই মাটি খনন ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করে বিএসএফ। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং বাধা দেয় বিজিবি। সীমান্তে দেখা দেয় উত্তেজনা। একপর্যায়ে সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে উভয় বাহিনী এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিএসএফের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে বিজিবির সঙ্গে অবস্থান নেয় স্থানীয়রা। একইভাবে ভারতীয় নাগরিকদেরও বিএসএফের সঙ্গে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

বুধবার দুপুরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবির সঙ্গে তৃতীয় দফা পতাকা বৈঠকে এ সম্মতি জানায় বিএসএফ। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, এটা একটি দুঃসাহসিক কাজ। কিন্তু কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষ করে হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ছাড়া এভাবে ফ্রন্টলাইনে অথবা শূন্য লাইনের কাছাকাছি এগিয়ে আসা বিপজ্জনক। দেশের জনগণ ও আমরা উভয়েই দেশকে ভালোবাসি। কিন্তু বিজিবি ফেইল না করা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের এরকম ফ্রন্টলাইনে এগিয়ে আসা উচিত নয়। এই দৃশ্য দেখে অন্য কেউ যেন এমন ঝুঁকি নেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত না হয়, দেশের জনগণের প্রতি আমার এই আহ্বান থাকবে। দেশের সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণ আমাদের পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়েছে। এজন্য বিজিবি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। স্থানীয় লোকদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।