কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে অকারণে হাতকড়া পরানোর অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে। শিক্ষকের সাথে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগের ভিতর সিলিকা জেলের প্যাকেট মাদক দাবি করে ওই শিক্ষককে হাতকড়া পড়ায় পুলিশ। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) উপজেলার সদর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী-বামনের চর সড়কের বাঁশের সেতু সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষক। একই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। পরে এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে ইউএনওর কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষকের কাছে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন ওসি ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট উপপরিদর্শক। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মইনুল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
পুলিশের হয়রানির শিকার ওই শিক্ষকের নাম মো. নজরুল ইসলাম। তিনি উপজেলার বেকরীবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। তার বাড়ি যাদুরচর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে।
অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেছেন, সোমবার রৌমারী সদরের বামনের চর গ্রামে বোনের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে খাটিয়ামারী-বামনের চর সড়কের বাঁশের ব্রিজের কাছে সাদা পোশাকের কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার পথরোধ করেন। নিজের পরিচয় দিয়ে চলে যাওয়ার সময় সামান্য দূরত্বে তিন পুলিশ সদস্য আবার তার পথরোধ করেন। তাদের সেকেন্ড অফিসার না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তারপর পিছনে থাকা আরো তিন পুলিশ সদস্য গিয়ে ওই শিক্ষকের সাথে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগ (ল্যাপটপ ছিল না) তল্লাশি করে। তারা ওই শিক্ষককে মাদক কারবারি বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। বারবার শিক্ষক পরিচয় দিলেও তারা নিবৃত হননি। তাকে হাতকড়া পড়ান।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ তারা আমার ল্যাপটপের ব্যাগ তল্লাশি করে একটি ফ্রিজিং তরকারির প্যাকেট ও একটি সিলিকা জেলের প্যাকেট পান। ল্যাপটপের ব্যাগ হওয়ায় সেখানে সিলিকা জেলের প্যাকেটটি ছিল। কিন্তু আমি সেটা জানতাম না। ওই প্যাকেটটি তারা মাদকের প্যাকেট দাবি করে সঙ্গে সঙ্গে আমার হাতে হাতকড়া পড়ান। সকলের সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি নিজের পরিচয় দিয়ে প্রতিবাদ করি।’
‘এরমধ্যে পুলিশ সদস্যরা থানায় ফোন থানায় ফোন দিয়ে আমাকে নেওয়ার জন্য গাড়ি ডাকেন। উপস্থিত লোকজনের সামনে পরিচয় দিয়ে নিজেকে নির্দোষ এবং মাদকের সাথে জড়িত নই বলে দাবি করতে থাকি। সকলের সামনে প্যাকেটটি খোলার দাবি জানাই। তখন সেখানে থাকা থানার সেকেন্ড অফিসার প্যাকেটটি খোলেন। সিলিকা জেল নিশ্চিত হয়ে আমার হাতকড়া খুলে দিয়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু ততক্ষণে আমার যতটা সম্মানহানি হওয়ার হয়ে যায়।’পুলিশের কান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া থানার সেকেন্ড অফিসার ও উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদত হোসেন অভিযানে থাকার কথা স্বীকার করলেও শিক্ষককে হাতকড়া পড়ানোর প্রশ্নে ওসির সাথে কথা বলতে অনুরোধ করেন।
এদিকে শিক্ষকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকালে ইউএনও’র কার্যালয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষককে নিয়ে বৈঠকে বসেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, থানার ওসি ও দুই উপপরিদর্শক। বৈঠকে ওসি ও থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই শাহাদত হোসেন) ঘটনার জন্য ওই শিক্ষকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ আমার সামাজিক মার্যাদাহানী করা হয়েছে। থানায় নিলে আমাকে মদক কারবারি বানিয়ে চালান দেওয়া হতো। পুলিশ ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি হয়ত মিটে গেছে। কিন্তু আর কোনও শিক্ষক কিংবা নাগরিকদের যেন এভাবে হেনস্তা করা না হয়।’
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মইনুল হোসেন বলেন, ‘পুলিশ বলেছে তাদের সোর্স ভুল তথ্য দিয়েছিল বলে এমন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। ইউএনও স্যারের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান হয়েছে।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রাসেল দিও বলেন, ‘ ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে।’ একজন শিক্ষক কিংবা নাগরিককে এভাবে হাতকড়া পড়ানো যায় কিনা, এমন প্রশ্নে থানার ওসির সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন ইউএনও।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, বিষয়টি তেমন কিছু না। রুটিন চেক এর সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ঐ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ওনাকে যেতে দেয়া হয়। সিলিকা জেল নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।