অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ২০২৬ সাল থেকে হাজীদের সমুদ্রপথে জাহাজে করে পাঠানোর জন্য সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে। সৌদি আরবের ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং তারা সম্মতি দিয়েছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে জাহাজ নেই, তবে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, আমরা হাজীদের জন্য বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় এনেছি।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের চকবাজারের প্যারেড মাঠে আয়োজিত তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ফ ম খালিদ হোসেন এসব কথা বলেন। ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপি আয়োজিত মাহফিলের শেষদিন ছিল আজ।
ধর্ম উপদেষ্টা মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের কেউ ঘুষ খেলে, আমি তাকে সাসপেন্ড করে দেব। বিগত ১৬ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে যারা বেচা-বিক্রি ও নয় ছয় করেছে, হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব আমি। ১৬ বছরের জঞ্জাল ছয় মাসে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, তবে আমি পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছি।
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, আলেম যারা, যাদের কোরআনের ওপর পাণ্ডিত্য আছে তারা দেশ চালালে আমাদের এ দেশ, ব্যক্তি, পরিবার সোনার সমাজে পরিণত হবে। আমরা যদি সরকার পরিচালনায় আলেমদের সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটের মানসিকতা ও অব্যবস্থাপনা বিদায় নেবে।
তিনি বলেন, দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান এক ও অভিন্ন। যারা কোরআনের ছায়ায় বড় হয়েছে তারা সবাই এক। হতে পারে ভাষা ভিন্ন। মুসলমানদের বিভিন্ন দলে ভাগ করার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমাদের এ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
বাংলাদেশের মুসলমানদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে ২০০ কোটি মুসলমান, ৫৭টি মুসলমানের দেশ আছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারতাম ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হত। বাংলাদেশে ১৮ কোটি মুসলমান। আর ভেদাভেদ বা সংঘাত নয়, মতবিরোধ থাকবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ হব। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধারা আলেম-ওলামারা যদি এক হতে পারে আগামীকাল যে সূর্য উঠবে সেটা হবে নতুন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ বলেন, ‘আমি ২০১৯ সাল থেকে নয়াদিগন্ত পত্রিকায় মুসলমানদের ঐক্য, কওমী-আলেয়ার ঐক্য নিয়ে নিবন্ধ লিখেছি। এগুলো সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের বিভক্ত করে রাখার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমাদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। শুধুমাত্র ভোটের ঐক্য নয়।’‘হোক না, ভোটের ঐক্যও হোক। আমরা যদি কাছাকাছি আসতে পারি, এক অপরের ঘরে যেতে পারি, বসতে পারি তাহলে এটাও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমি আশাবাদী। আমরা এ দেশে কোরআনের আদর্শে একটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখে যাব।’
তিনি বলেন, অতএব আসুন, ফেসবুকে, টুইটারে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গুতাগুতি না করে পরস্পরকে সম্মান করতে শিখি। দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করি। যাদের মন ছোট তাদের মাধ্যমে বড় কাজ হয় না। সবাইকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
আগামী নির্বাচন ঐতিহাসিক হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেব বলেছেন আগামীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে আগামীতে। দিনের ভোট রাতে হবে না। দিনের ভোট দিনে হবে। এ দেশের জনগণ যাকে ভালো মনে করে তাকে ভোট দেবে। ভোট নিয়ে কোনো কারচুপি হবে না। কেউ ব্যালট বাক্স চুরি করে নিয়ে গেলে মুহূর্তের মধ্যেই সে সেন্টার আমরা বন্ধ করে দেব।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু হত্যাকাণ্ড ছিল কিনা উচ্চতর তদন্ত গণমানুষের কাছে প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন ড. মিজানুর রহমান আজহারি।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচদিন ব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের পঞ্চম দিনে প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ দাবি জানান।
ড. মিজানুর রহমান আজহারি বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শিরক-বিদআতের আস্তানা তছনছ করে দিয়েছিলেন। আজীবন ইসলামকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব কেঁদেছে। তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল নাকি মেডিক্যাল কিলিং ছিল, তা আমরা এখনো জানি না। এখন যে সময়টা আমরা পার করছি এময় সুন্দর সময় আর বাংলাদেশ পাবে না। আমাদের জন্মের পর থেকে এমন চমৎকার সময় আর পাইনি। এটাই আসল সময়, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই, উচ্চতর তদন্ত কমিটি করে আল্লামার মৃত্যু কী মৃত্যু হত্যাকাণ্ড ছিল, নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল। এই রিপোর্ট গণমানুষের কাছে জানাবে হবে।
তিনি বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বিনা অপরাধে জেলে বন্দী রেখে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক।
মিজানুর রহমান আজহারি বলেন, আল্লাহ কোরআনে তিনটি আদেশ তিনটি নিষেধ করেছেন। আদেশ তিনটি হল ন্যায় বিচার করা, একে অপরকে সম্মান করা ও নিকট আত্মীয়দের সম্পর্ক ছিন্ন না করা। আর তিনটি নিষেধ হল অশ্লীলতায় না জড়ানো ও ইচ্ছাকৃত মন্দ বা অসৎ কাজে না জড়ানো ও সীমালঙ্ঘন না করা। এই আদেশ নিষেধ মেনে নিতে পারলে আমাদের সমাজ সুখী, সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশারের সঞ্চালনায় ও ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাওলানা শামীম সাঈদী, বক্তব্য রাখেন মাওলানা বিএম মফিজুর রহমান, মাওলানা মুনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম, বিআইএ জামে মসজিদের খতিব সাফওয়ান বিন হারুন আজহারি, অলি খাঁ মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তাওহীদুল হক মিজবাহ।
মাহফিলে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবিরী আল মাদানী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দান বিশ্ব নন্দিত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা সাঈদী বিজড়িত ময়দান। আমরা কোরআনের ছায়াতলে এক ও অভিন্ন। যেকোনোভাবে আমাদের এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। সব ধরনের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যদি আমরা ঐক্য ধরে রাখতে পারি তাহলে দেশ থেকে দুর্নীতি , লুটপাট ও চাঁদাবাজি, গুম, খুন দূর করতে পারবো। ১৬ বছরের জঞ্জাল ৬ মাসে দূর করা সম্ভব না কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো। এদেশে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশে যদি সুখ শান্তি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা ও নগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সরকার। আপনারা হতাশ হবেন না। আমরা আপনাদের সাথে আছি। চট্টগ্রামের জনগণও আপনাদের সাথে আছে। তিনি কওমি ও সরকারি নিছাবের আলেমদের ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উন্নয়নের সরকারি সহযোগিতার আহ্বান জানান। ইবাতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবি এবং মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিমদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে সরকারিভাবে বেতন প্রদানের জন্য জোর দাবি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা শামীম সাঈদী বলেন, আল্লামা দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীকে ১৩ বছর জেলে জালেম শাসকেরা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি। কোরআনের রাজ কায়েম করার জন্য আল্লামা সাঈদী দেশের আনাচে কানাচে গিয়েছেন। কোরআনের রাজ কায়েম করতে যদি আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় আমরা সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো।
বিশেষ ওয়ায়েজিন মাওলানা বিএম মফিজুর রহমান বলেন, এ পৃথিবীতে যারা কোরআনকে বিদায় করতে চেয়েছে তারাই বিতাড়িত হয়ে গেছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রাস্তায় কাজ করে যেতে হবে। পরস্পর বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। অনৈক্য মতভেদ, বিভেদ সৃষ্টি করলে জালেমরা সুযোগ নিবে। আল্লাহ আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট এসাইন্টমেন্ট দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর বিধানকে দুনিয়ার জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে হলে সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে বাংলাদেশে কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কেউ যেন অন্যায়ভাবে লুটপাট করতে না পারে। নির্যাতনের আয়নাঘর তৈরি করতে না পারে। শোষণ নিপীড়ন করতে না পারে, গণহত্যা করতে না পারে সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা প্রথমত আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহর খলিফা। যারা ভেতরে ও বাহিরে পবিত্র নেক বান্দাদের আমাদের অন্তর্ভুক্ত করো। যারা জালেম তাদের লেজ কেটে দিয়েছে এবং এখন বান্দার দায়িত্ব আল্লাহর প্রশংসা করা ।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তাওহীদুল হক মিজবাহ বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে রক্ত পিণ্ড থেকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা মানব ও জিন জাতিকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। নবী রাসূলগনকে জমিনের মধ্যে দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রেরণ করেছেন। আর আমাদেরকে নবী রাসুলগণের ওয়ারিশ বানিয়েছেন। আমাদেরকেও আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা করতে হবে।
বিশিষ্ট ওয়ায়েজ সাফওয়ান বিন হারুন আজহারি বলেন, আমরা ধর্ম ব্যবসা করি না। ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তিতে রাজনীতি করি। ইসলামকে ছাড়া রাষ্ট্র বাঁচতে পারে না। আর রাষ্ট্রকে ছাড়া ইসলাম বাঁচতে পারে না। তাই রাজনীতি আর ইসলাম সমান্তরাল।
বিশিষ্ট ওয়ায়েজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ইসলাম বিরোধী শক্তি রাসূল (স.) কে বিভিন্নভাবে দ্বীনের দাওয়াত না দেওয়া জন্য বাঁধা দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রাসূল শত বাঁধা , যুদ্ধ পেরিয়ে ইসলামের কোন একটা আইনকে অস্বীকার করলে ঈমান থাকে না। আল্লাহর সকল বিধানের সাথে একনিষ্ঠভাবে ঐকমত্য পোষণের নাম হলো ঈমান।
মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও তাফসীরুল কোরআন মাহফিলের এন্তেজামিয়া কমিটির পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক এমপি ও তাফসীরুল কোরআন মাহফিলের এন্তেজামিয়া কমিটির পৃষ্ঠপোষক শাহজাহান চৌধুরী, আইআইউসির সাবেক প্রো ভিসি ড. প্রফেসর আবু বকর রফিক আহমদ, অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ মির্জা, আবুল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুল হক, মাওলানা হারুনুর রশিদ, ডা. একেএম ফজলুল হক, অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী, ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, মাওলান এ বি এম সিদ্দিকুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন, অধ্যাপক আব্দুল আলিম, আলাউদ্দিন সিকদার, অধ্যক্ষ বদরুল হক, অধ্যক্ষ আ ন ম সলিমুল্লাহ, আফছার উদ্দিন চৌধুরী, প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন, প্রফেসর মাহবুবুর রহমান, ড. প্রসেফর আতহার উদ্দিন, সাংবাদিক মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সল মুহাম্মদ ইউনুস, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী প্রমুখ।
গভীর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চৌরাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে হরতালের ডাক দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে হরতালের বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড. টি এম মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে ইউনিয়ন সম্মেলনের ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও, জেলা বিএনপির নেতারা আকস্মিকভাবে সেই ভোট বাতিল করেন। জেলা বিএনপির এমন হঠকারিতা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমাদের হরতাল কর্মসূচি পালন করা হবে৷
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করেন এবং মিছিল বের করেন। হরতালের সমর্থনে স্লোগান দিতে দিতে তারা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়কে মিছিল করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থান নেয়।
উল্লেখ্য, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষার পর শনিবার সেই ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা হঠাৎ করেই ভোট স্থগিতের ঘোষণা দেন, যা নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি করে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও, জেলা কমিটির একতরফা সিদ্ধান্তে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এতে করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এভাবে ভোট বাতিল করা মানে আমাদের মতামতকে দমন করা। আমরা চাই গণতান্ত্রিকভাবে নেতা নির্বাচন হোক।"
বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকার বলেন, "পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা কাজ করছি।"
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালাইয়া বন্দরের মার্চেন্টপট্টি এলাকায় ৭৬ বছরের ব্যবসায়ী শিবানন্দ রায় বণিক (শিবু বণিক) অপহরণ চক্রের মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিন ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত ইঞ্জিনচালিত ট্রলারও জব্দ করেছে পুলিশ।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাজেদুল ইসলাম এবং বাউফল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা, গাজীপুর এবং বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার হওয়া তিন ব্যক্তির মধ্যে অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী হলেন আবদুল্লাহ আল নোমান (২২), যিনি বাউফল উপজেলার বড়ডালিমা গ্রামের বাসিন্দা আবদুস ছালাম সরদারের ছেলে। অন্য দুই ডাকাত হলেন মো. কাওছার হোসেন (২৩) এবং মো. বেল্লাল হোসেন (২৫)। তারা পটুয়াখালীর চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা।
গত ৩ জানুয়ারি রাতে ৯ সদস্যের একটি ডাকাত দল শিবু বণিকের দোকানের কর্মচারীদের বেঁধে পাঁচ লাখ টাকা লুটে নিয়ে শিবু বণিককে অপহরণ করে ট্রলারে করে নিয়ে যায়। এরপর তাকে নির্জন স্থানে আটকে রেখে পরিবারের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণের দুই দিন পর ৫ জানুয়ারি রাত ১টায়, বাউফল থানার পুলিশের একটি দল শিবু বণিককে কচুয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করে। একই সময়ে, অপহরণকারী দলের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে পাঁচটি দেশি অস্ত্র, সাতটি মুঠোফোন, দুই জোড়া জুতা, এবং দেড় লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ জানিয়েছেন, অপহরণকারী দলটি ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তারা স্বল্প সময়ে কোটিপতি হওয়ার লোভে এই অপরাধের পরিকল্পনা করেছিল।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিগগিরই অন্য আসামিদেরও গ্রেফতার করা হবে।