ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিলেই সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার কথা বলে লক্ষ্মীপুরের হতদরিদ্র মানুষদের প্রলোভন দেখানো হয়। রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে 'অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠনের কথিত সেই সমাবেশে নেওয়ার জন্য কমলনগর উপজেলার ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরীকে একত্রিত করা হয়। জেলার কমলনগর উপজেলার করইতলা বাজারে ঘটনাটি ঘটে।
রাতেই স্থানীয়রা তাদেরকে ঘেরাও করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে ৩টি চেয়ারকোচ বাস ও ৪টি মাইক্রোবাস জব্দ করে। এসময় ১১ জনকে আটক করা হয়। তবে তাদের নাম পরিচয় জানায়নি পুলিশ।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাসযাত্রী নারী-পুরুষরা জানায়, একটি চক্র সোমবার ঢাকার শাহবাগ কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে। ঋণের আবেদন ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা এক হাজার টাকা করে নিয়েছে। ঋণপ্রত্যাশী ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য দেওয়া হয়েছে টোকেন। টোকেনধারী সবাইকে দেওয়া হবে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ।
আলেয়া বেগম নামে এক নারী জানান, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা শাহবাগে একটি সমাবেশে যোগ দিতে লোকজন নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেখানে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নিকট তারা প্রস্তাব দিবেন। ওই টাকা থেকে তাদের মতো গ্রামের নারী পুরুষদের ১ লাখ থেকে বড় অংকের টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
করইতলা বাজার এলাকার বাসিন্দা মোরশেদ আলম জানান, ৫ই আগস্টের কয়েক দিন পর থেকে একটি চক্র গ্রামের মানুষদেরকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার নাম করে সংগঠিত করছিল। ঘটনার সময় সেই চক্রের আহবানে ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ ঢাকায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠেন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়।
উত্তর চরলরেঞ্চ গ্রামের গৃহবধূ ফারহানা আক্তার ও জেসমিন বেগম জানায়, ১০ টাকার বিনিময়ে তারা ১ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। এতে তাদের ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে হবে। সমাবেশে পরদিন থেকে তাদেরকে ঋণ দেয়ার কথা ছিল।
তোরাবগঞ্জ গ্রামের গৃহবধূ নাছিমা ও রৌশন বেগম জানাত, গাড়ি ভাড়া হিসেবে তিনি ১ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও অনেকের কাছ থেকেই এভাবে টাকা নিয়েছে স্থানীয় সংগঠকরা।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। ৩টি বাস ও ৪টি মাইক্রোবাস জব্দ আছে। তবে মূল হোতাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। তারা ঢাকায়। মাঝে মাঝে এসে ফরম পূরণ করে চলে যায়। তারা এখানকার হতদরিদ্র মানুষদেরকে ১ হাজার টাকায় ফরম পূরণ করলে ১ লাখ টাকার চেয়ে বেশি সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে। এতে তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন সমাবেশ করতে চেয়েছিল। ডিএমপি'র সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো সমাবেশ হয়নি, হবে না। কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ তাদের সভা পণ্ড হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়ণের দাবিতে ২৫ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংহতি সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। এ নিয়ে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান সমাবেশের আয়োজক সংগঠনের সদস্য মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী।