নকশা আনাতেই তোড়জোড়, নেই বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া



শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
জাতীয় সংসদ ভবন, ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ ভবন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কথা ছিল বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কান এর নকশা অনুযায়ী সাজানো হবে সংসদ এলাকা। সেই পরিকল্পনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভেনিয়া ইউনির্ভাসিটি থেকে নকশা সংগ্রহে শুরু হয় তোড়জোড়। নানা কাঠখড় পুড়িয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করে সেই নকশা সংগ্রহ করে সংসদ সচিবালয়। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর নকশা দেশে আসে। এরপর আস্তে আস্তে ফিকে হতে থাকে নকশার বাস্তবায়ন। আনাতে যতটা তোড়জোড় দেখানো হয়েছিল বাস্তবায়নে তার ধারের কাছেও নেই। প্রায় তিন বছর পার হতে চলল আর্কাইভে রাখা ছাড়া আর কোন অগ্রগতি নেই নকশার।

লুই আই কানের নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সময়ে সময়ে বিভিন্ন স্থাপনা করা হয়েছে। এরমধ্যে সংসদের উত্তর প্লাজা বরাবর লেক পারে গড়ে তোলা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিসৌধ। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় পাঁচ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে ‘জাতীয় কবরস্থান’ নাম দিয়ে আরো অন্তত সাতজনকে সমাধিস্থ করা হয়।

সংসদ চত্বরের ভেতরে অবৈধ এসকল স্থাপনা ও কবর সরিয়ে পূর্বের অবয়ব ফিরে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে পেন্সিলভেনিয়া ইউনির্ভাসিটি থেকে ৮৫৩টি নকশার অনুলিপি ও ৬০ টি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে সংসদ সচিবালয়। ওই নকশাগুলোর মধ্যে ১১৫টি আনবিল্ড নকশা (এখনও কোনো ভবন হয়নি)। নকশা আনতে প্রায়  ৫০ লাখ টাকার মত খরচ হয়। নকশা সংগ্রহ করতে প্রতি কপিতে খরচ হয় ১৯ ডলার করে। এর সঙ্গে কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়া ও থাকা খাওয়ার খরচ রয়েছে।

নকশার অনুলিপি দেশের আসার আগে বেশ কয়েকবার সংসদে প্রশ্নোত্তর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, “মূল নকশা হাতে পেলে নকশার আদলে সব সাজানো হবে। নকশার বাইরে সকল স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হবে। সেখানে কারো কবর থাকলে সেটাও সরিয়ে নেওয়া হবে।”

নকশা দেশে আসার প্রায় ৩৪ মাস অর্থাৎ প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হতে চলছে এখন পর্যন্ত আর কোন অগ্রগতি নেই। নকশা দেশে আনার আগে যতটা তোড়জোড় ছিল আনার পর আর সেই তোড়জোড় নেই।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে নকশা আনা থেকে শুরু করে দেশে আনার পর সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো পর্যন্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন  স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির।

নকশার অগ্রগতি সম্পর্কে স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, নকশা একদিন শুধু প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন এরপর আর কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। যেভাবে সেট করে সংসদ সচিবালয়, জাতীয় আর্কাইভ, স্থাপত্য অধিদফতরের রাখার কথা সেভাবেই রাখা হয়েছে। এছাড়া আর কোন কাজ হয়নি বা কোন সিদ্ধান্তও আসেনি।

সংসদ ভবনের নকশা সংগ্রহের বিষয়টি অনুধাবন করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি লুই আই কান এর মূল নকশা সংগ্রহের নির্দেশ দেন সংসদ সচিবালয়কে।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে লুই আই কান যখন মূল নকশাটি করেন, তখন ২৭টি মন্ত্রণালয়ের জন্য এ পরিকল্পনা করেন। তখন সেখানে মসজিদ ছিল, মাঝে বাগান ছিল, চন্দ্রিমা উদ্যানের ওখানে একটি বড় সড়ক ছিল, এর সামনে লেক ছিল, এরপর সংসদ ভবন ছিল। তাই অনুলিপি ধরে নয়, ১৯৭৪ সালের মূল নকশা ধরে সচিবালয়সহ সব কিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৪ সালে শেরেবাংলা নগরে ৪২ একর জায়গায় জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের জন্য সরকার ও মার্কিন কোম্পানি ডেভিড উইসডম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি হয়। পরে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই এলাকায় এরই মধ্যে ১০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। জমি কমে যাওয়া এবং বর্তমানের চাহিদা বিবেচনায় লুই আই কানের নকশা স্থাপত্য অধিদফতর কিছুটা সংশোধন করেছে।

নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ সংসদ ভবন এলাকার ভেতরেই গড়ে তোলেন মাজার ও কবরস্থান। এর মধ্যে সংসদ ভবনের উত্তরে ৭৪ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত চন্দ্রিমা উদ্যানের মধ্যিখানে  বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয় জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স। আর জিয়া ও এরশাদের শাসনামল মিলিয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মানিক মিয়া এভিনিউ এর পশ্চিম প্রান্ত লাগোয়া স্থানে পাঁচ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে ‘জাতীয় কবরস্থান’ নাম দিয়ে আরো অন্তত সাতজনকে সমাধিস্থ করা হয়।

জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, লুই আই কানের মূল নকশার প্রথম ধাপ ছিল ২০৮ একর জায়গার ওপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ। যার সামনে ও পেছনেও বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ থাকবে। চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানেও লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ। এছাড়া বাকি জায়গায় গড়ে তোলা হবে সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক বলয়।

লুই আই কানের নকশা ক্ষত-বিক্ষত করার প্রক্রিয়া এখানেই থেমে থাকেনি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। ওই সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। লুই আই কানের নকশা উপেক্ষা করে আসাদগেটের উল্টো দিকে অবস্থিত সংসদ ভবনের জায়গায় একটি পেট্রোলপাম্প স্থাপনের জন্য তিনি তার ছোট ভাই মির্জা খোকনকে জায়গা বরাদ্দ দেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মাঝামাঝি সময়ে আরও এক দফা ক্ষত-বিক্ষত করা হয় লুই আই কানের মূল নকশা। ওই সময় সংসদ ভবনের মূল ভবনের পাশেই খোলা সবুজ চত্বরে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন নির্মাণ করা হয়।

জাতীয় সংসদের ইতিকথা:

১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘ সাধনার পর ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

   

ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন লেগেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট।

শনিবার (১৮ মে) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন লাগে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম।

তিনি জানান, ধোলাইখালে চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন লেগেছে। খবর পেয়ে সূত্রাপুর ও সিদ্দিকবাজার থেকে চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

;

জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নওগাঁর সাহাগোলার ‘মটকা চা’



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ আত্রাই উপজেলার সাহাগোলার মোড় স্টেশন এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মটকা চা’। দুধ, চিনি ও বিভিন্ন মসলার সংমিশ্রণে তৈরি এ চা খেতে প্রতিদিন স্টেশনে ভিড় করেন চা-প্রেমীরা। মাটির ছোট্ট হাড়িতে পরিবেশন করা হয় এই মটকা চা।

সরেজমিনে শুক্রবার (১৭ মে) বিকেলে সাহাগোলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মাটির তৈরি ছোট্ট পাতিল প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে জ্বলন্ত চুলায় গরম করা হচ্ছে, এবং উত্তপ্ত গরম হয়ে গেলে সেটিকে আবার নামিয়ে ভেতরে দুধ ঢালা হচ্ছে, এরপর বিভিন্ন ধরনের মসলা ও শেষে দেওয়া হচ্ছে দুধের সর। এভাবেই পরিবেশন করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের মসলা দিয়ে তৈরি মটকা চা।

জানা গেছে, দেশে প্রথম মটকা চায়ের আবির্ভাব ঘটে রাজধানী ঢাকার মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ‘মটকা চা এবং মোমো’ ক্যাফেতে। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এটির যাত্রা শুরু হয়। মাটির পেয়ালায় পরিবেশন করা হয় এই মটকা চা। এই চায়ের মূল আকর্ষণ হলো মাটির পেয়ালা। ভিন্নধর্মী স্বাদের এই চা পান করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে যেতেন চা-প্রেমীরা। তবে এখন এই মটকা চায়ের বিস্তার দেশের অনেক প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। চায়ে নিজস্ব অনেক ইতিহাস থাকলেও মটকা চায়ের স্পষ্ট কোনো ইতিহাস অদ্যাবধি জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই মটকা চা প্রথমে রাজস্থান থেকে এসেছে। ভারতে প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ মটকায় চা পান করে। ভারতের মটকা চা ব্যাপক জনপ্রিয়। মূলত উৎপত্তিস্থল ভারতে।

মটকা চা খেতে আসা ছামিউল (২৮) বলেন, আমার বাড়ি নিয়ামতপুর উপজেলায়। শুনেছি সাহাগোলার মটকা চায়ের অনেক স্বাদ তাই কয়েক বন্ধু মিলে আজকে খেতে চলে এসেছি। চায়ের পাশাপাশি এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর। তবে স্থায়ী জায়গা যদি করা যেত তাহলে আরও দূর থেকে মানুষজন এসে নিরাপদে খেতে পারতো।


আফরিন বলেন, আজকেই প্রথম এসেছি এখানে। জায়গাটা অনেক সুন্দর, আর পাশেই রেল-স্টেশন আছে। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে। মটকা চা আমি আগেও খেয়েছি, তবে এটির আলাদা মজা পেলাম খেয়ে। আবারো আসবো খেতে।

খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম অনেক ভিড় এবং দোকানিও অনেক। আমার কাছে পরিবেশ ভালো লেগেছে, তবে চায়ের মান আরও উন্নতি করা দরকার।

এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আকমল বলেন, আমাদের এখানে এতো লোকসমাগম হতো না, কিন্তু যখন থেকে মটকা চা আর মালাই চা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই এলাকাটা বেশ পরিচিত হয়ে গেছে। আমাদেরও ভালো লাগে, যখন দেখি দূর থেকে মানুষ চা খেতে আসে।

দোকানী আতাউল ইসলাম বলেন, প্রায় ২ বছর আগে সাহাগোলায় সর্বপ্রথম মটকা চা আমি বানানো শুরু করি। এখন ১৫টির অধিক দোকান আছে সেগুলো তখন ছিল না। আমরা সব সময় চেষ্টা করি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চা পরিবেশন করতে। ভালো লাগে বলেই অনেক দূর থেকে মানুষ এসে আমাদের চা খায়।

আরেক দোকানি রনি বলেন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার বেশি ভিড় হয় এবং বিক্রি ভালো হয় বিধায় লাভও থাকে। এটি আমি ১ বছর ধরে বিক্রি করি। আতাউল ভাই শুরু করেছিল। লাভ মোটামুটি ভালোই হচ্ছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সাহাগোলা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে, যেহেতু অনেক লোকজন আসেন। এখানে শুধুমাত্র চা বিক্রি হচ্ছে না, পাশাপাশি দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন বেড়াতেও আসছেন। এটা নিয়ে আমরা ভাবছি।

;

শাহ আমানত বিমানবন্দর

যাত্রীদের সামনে অপেক্ষা করে ‘আকাশ সমান’ হয়রানি!



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
লাগেজ সংগ্রহ করতে এসে যাত্রী দেখেন তার ৭৪ হাজার টাকার মালামাল হাওয়া

লাগেজ সংগ্রহ করতে এসে যাত্রী দেখেন তার ৭৪ হাজার টাকার মালামাল হাওয়া

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদের বাসিন্দা মোহাম্মদ আরমান থাকেন সৌদি আরবের মদিনায়। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরবেন। সেজন্য আত্মীয়-স্বজনের জন্য নামিদামী উপহারসামগ্রী নেন প্রবাসী এই ব্যবসায়ী। দেশে আসার দুই সপ্তাহ আগেই এসব মালামাল বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইনসের একটি ফ্লাইটে পাঠিয়ে দেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আর তিনি ফেরেন ৩ মার্চ। এরপর ৪ মার্চ বিমানবন্দরে নিজের পাঠানো লাগেজ সংগ্রহ করতে হাজির হন এই সৌদি প্রবাসী।

অতিরিক্ত মালামাল বহনের ভাড়া এবং শুল্কযুক্ত পণ্য আনায় আরমানকে দিতে হয় অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকাও। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শাখায় টাকা জমা দেওয়া শেষে লাগেজ বুঝে নিতেই চোখ কপালে ওঠে আরমানের। কারণ তার লাগেজ কাটা-ছেঁড়া! পরে দেখেন তার লাগেজ থেকে ৭৪ হাজার টাকার ৭ কেজি মালামাল হাওয়া। পরে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেও পাননি কোনো সদুত্তর।

দৃশ্যপট-২. চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি সকালে এই বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাই দুবাইয়ের ফ্লাইট এফ জেড-৫৬৪-যোগে দুবাই যাওয়ার পথে ৮ যাত্রীকে (সকাল ৬টা থেকে ১০ টার মধ্যে) আটকে দেন সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে নানান অজুহাত দেখিয়ে এই যাত্রীদের কাছে থাকা ৫ হাজার ৮০০ বাংলাদেশি টাকা ছিনিয়ে নেন তারা। সেদিন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করার সময় কয়েকজন যাত্রী তাকে বিষয়টি জানান। তবে টাকা ফেরত পাননি এই যাত্রীরা। বিষয়টি পরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানায় ফ্লাই দুবাই।

দৃশ্যপট-৩: গত বছরের ৬ নভেম্বর ঘুষের টাকা না পেয়ে বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এসআই রাজীবের নেতৃত্বে নুরুল আমিন নামের এক সৌদি আরবগামী যাত্রীকে বিমানবন্দরের একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এ সময় তার মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়। এই কারণে তিনি ওইদিন তার ফ্লাইটে বিদেশ যেতেও পারেননি। অবশ্য ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে এপিবিএনের দুই সদস্যকে প্রত্যাহার করে দায় সারা হয়।

এভাবেই চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর যেন যাত্রীদের কাছে দিন দিন হয়ে উঠেছে বিভীষিকাময়। এই বিমানবন্দর দিয়ে ভ্রমণ করেছেন, আর ভোগান্তিতে পড়েননি-এমন যাত্রী যেন পাওয়া যাবে খুব কমই। অথচ এটি কিনা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর, যেদি দেশের প্রায় ২১ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন। গত এক বছরে এই বিমানবন্দর দিয়ে ভ্রমণ করেছেন ১৬ লাখ যাত্রী। আর এতে রাজস্ব আয়ও হয়েছে বিপুল পরিমাণ, ২২৫ কোটি টাকা। কিন্তু যে যাত্রীদের কল্যাণে এত এত আয়-সেই তারাই যেন এখানে হয়ে পড়েন ‘অবহেলার পাত্র’! গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনেও এই বিমানবন্দরের নানা অনিয়ম, যাত্রীদের হয়রানির চিত্র উঠে আসে।

এই বিমানবন্দর ব্যবহার করা যাত্রীরা এই হয়রানি-দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চেয়েছেন। গত ৮ মে বিমানবন্দরে আয়োজিত বিমানবন্দরে সেবার মান উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে নানা অভিযোগ তুলে ধরে দ্রুত এসব থেকে পরিত্রাণ চান তারা।

কী আছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনে:

গত ১৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির সবিস্তার তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বেবিচক অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (অ্যাভসেক) শাখার দুর্নীতি নিয়ে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ভৌত নিরাপত্তা নিশ্চিতে অ্যাভসেক শাখার নিজস্ব সিকিউরিটি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে অ্যাভসেক শাখার সদস্যরা বিমানবন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিশের নামে টাকা নেওয়া, স্বর্ণ ও ইয়াবা চোরাচালান, হুন্ডি পাচার, বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের কর্ণধার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রটোকল দেওয়ার নামে অর্থ আদায়সহ নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়েছেন। অ্যাভসেক শাখার সহকারী পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের প্রশ্রয়ে এসব অনিয়ম করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

বেবিচকের এস্টেট শাখার দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের এস্টেট শাখার সাবেক শাখাপ্রধান মো. মশিউর রহমানের দায়িত্বকালীন এই শাখায় সাতটি ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়। বিমানবন্দর টার্মিনালের কোনো স্পেসের ইজারা নিতে বা নবায়ন করতে ঘুষ নেওয়া, ইজারাপ্রাপ্তদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর নির্মাণকালে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বরাদ্দ করা প্লটের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় ঘুষ বাণিজ্য, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মতো অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন মশিউর রহমান। তাকে ঢাকা বিমানবন্দরে বদলি করা হলেও তার সহযোগীরা এখনো একই কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া এস্টেট শাখার বর্তমান সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিল বিভিন্নভাবে ঘুষ নিচ্ছেন।

বেবিচক ইএম শাখার দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, ইএম শাখা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ করে। ইএম শাখার সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আজিম উদ্দীন এবং মো. আশরাফুল হোসেন শাহিন শাখার কাজে টেন্ডারে কাজ পাওয়া যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত ঘুষ নেন। এ ছাড়া এই শাখার মেকানিকস দেবপ্রিয় সিংহ, সহকারী মেকানিকস মো. ইউনুস, ওয়্যারম্যান মো. আবদুল কাদের, হেলপার মো. ফিরোজ, অফিস সহায়ক ওসমানের সহায়তায় এ শাখায় অনিয়ম-দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে।

বেবিচক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার দুর্নীতিও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী আবদুল আলিম বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি বিমানবন্দরে যেকোনো উন্নয়ন কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন।

আনসারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর টার্মিনালের আগমন/বহির্গমনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অন্তত ২০০ আনসার সদস্য নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত। বর্তমানে এরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে বেশি জড়িত। যাত্রীদের কাছ থেকে বকশিশ আদায় করেন তারা। কোনো কোনো সময় বিমানবন্দরের ড্রাইভওয়েতে প্রবেশের জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। এসব বকশিশের টাকার অংশ শাখার ইনচার্জও পেয়ে থাকেন।

এপিবিএনের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এপিবিএনের সদস্যরা বিমানবন্দর ও সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের মূল্যবান মালামাল আত্মসাৎ করা হয়।

এছাড়া কাস্টম এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসের দুর্নীতিও তুলে ধরা হয়।

অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে বিমানবন্দরের সার্বিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে। পাশাপাশি যাত্রীদের হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করতে বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিএ-১ অধিশাখা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২৩ নভেম্বর বেবিচককে নির্দেশ দেয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর বেবিচকের বোর্ড সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমোডর মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান খান চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে খাতওয়ারি ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা বেবিচককে অবহিত করার জন্য গত ২৬ নভেম্বর নির্দেশনা দেন।

হয়রানির শিকার যাত্রীদের বক্তব্য:

বাড়তি অর্থ দেওয়ার পরও নিজের লাগেজটা ঠিকঠাক না পাওয়ার দুঃখ এখনো পোড়ায় সৌদি আরব প্রবাসী মোহাম্মদ আরমানকে। আফসোস নিয়ে বললেন, ‘কর্মকর্তাদের সামনেই লাগেজ মেপে দেখা যায় ৭ কেজি মালামাল কম ছিল। বাংলাদেশি টাকায় ৭৪ হাজার মালামাল চুরি হয়ে যায়। অথচ লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলেও কেউই আর এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। পরে কোনো উপায় না পেয়ে আমি বাড়ি চলে আসি। আত্মীয়দের জন্য শখ করে কেনা মালামালগুলো আর তাদেরও দেওয়া হলো না।’

যদিওবা লাগেজে কাটা থাকলেও সেটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে হয়নি বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের হারানো ও প্রাপ্তি শাখায় কর্মরত মোহাম্মদ ইকবাল খসরু।

তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ লাগেজ কাটার ঘটনা যে দেশ থেকে আসে ওই দেশে হয়ে থাকে। কেননা ইলেক্ট্রনিক পণ্য থাকলে তা স্ক্যানে আটকে যায়। তখন ওই দেশের এয়ারপোর্টেই তা কেটে রেখে দেওয়া হয়। এখানে কাটার সুযোগ নেই। কেননা বিমানবন্দরের সবখানেই ক্যামেরা আছে।’

আরেক সৌদি আরব প্রবাসী নুরুল আমিন তো এপিবিএনের সদস্যদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো আৎকে উঠেন। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ার বাসিন্দা নুরুল আমিন থাকেন সৌদি আরবের মদিনায়।

নুরুল আমিন বলেন, ‘ওইদিন বিকেল ৫টার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে যাই। গাড়ি পার্কিং নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হলে এপিবিএনের এক এএসআইয়ের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করেন এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। কাছ থেকে বাঁচতে চিৎকার শুরু করলে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা অন্য কক্ষে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। পরিবারের সদস্যদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। সেই কারণে আমার ফ্লাইটও মিস হয়।’

এই বছরের ৬ জানুয়ারি যে আটজন যাত্রীর কাছ থেকে জোরপূর্বক বাংলাদেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল তাদের একজন হাফেজ মো. খায়রুল বাশার। তার কাছ থেকে সেদিন এক হাজার টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই বলে বাংলাদেশি টাকা যা আছে দিয়ে দেন। প্রতিবাদ করলে নানা নিয়মের ভয় দেখান। বাধ্য হয়ে টাকাটা দিয়ে দিই।’

এই বিমানবন্দর দিয়ে বহুবার আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আসা-যাওয়া করেছেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির বাসিন্দা সাইদুল হক। দুবাই-প্রবাসী সাইদুল বলেন, ‘কয়েক বছর পর পর দেশে আসতে পারি। দেশে যাওয়া যে কোনো প্রবাসীর কাছেই আনন্দের। কিন্তু আমাদের সেই আনন্দ মাটি হয়ে যায় শাহ আমানত বিমানবন্দরে এলে। এখানে যেন আমাদের সামনে আকাশ সমান ভোগান্তি অপেক্ষা করে। লাগেজ টানাটানি, লাগেজ থেকে মালামাল চুরি, নানা অজুহাত ও ভয় দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ঘুষ না দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হয়রানি-কোনো কিছুই যেন বাকি থাকে না।’

ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইনও যাত্রীদের হয়রানি-দুর্ভোগের বিষয়ে সোচ্চার। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের যেসব ভাই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকেন, দেশে রেমিটেন্স পাঠান-তাদের বেশি হয়রানি হতে হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একটা মানুষ রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে কষ্ট করে দেশে রেমিটেন্স পাঠান, আর তাকে কোথায় বিমানবন্দরে একটু আতিথিয়েতা দেওয়া হবে উল্টো পদে পদে হয়রানি আর ভোগান্তি উপহার দেওয়া হয়। বিমানবন্দর হলো সেবা সংস্থা। সেখানে কেন যাত্রীকে দুর্ভোগে পড়তে হবে?’

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ:

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিবেদনের পর শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তপক্ষ নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। প্রতিবেদন পাঠানো নিয়ে তখন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ জানিয়েছিলেন তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য সংস্থার অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া চুরি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি আনসারদের ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।’

সম্প্রতি হওয়া গণশুনানিতে যাত্রীদের অভিযোগ দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন তাসলিম আহমেদ। জানান ছয় মাস পর পর আনসার সদস্যদের বদলি করা হয়। অন্যায় করলে সাজাও দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে যাত্রীদর সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান বিমানবন্দরের এই পরিচালক। বলেন, ‘যাত্রীদেরও কিছু অসচেতনা রয়েছে। আমি প্রায় সময় সিসি ক্যামরা দেখি। সেখানে দেখতে পেয়েছি কিছু যাত্রী দুহাতে টাকা ছিটাচ্ছেন। এর সুযোগ নেয় কেউ কেউ। এসব থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

;

ট্রাক খাদে পড়ে দুই ধান কাটা শ্রমিক নিহত, আহত ১০



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

সাতক্ষীরার তালায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক খাদে পড়ে দুই ধান কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন শ্রমিক।

শনিবার (১৮ মে) ভোরে সাতক্ষীরার তালা-পাইকগাছা সড়কের হরিশচন্দ্রকাটি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, খুলনার কয়রা উপজেলার বগা গ্রামের তালেব গাজীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩৮) ও একই উপজেলার মাদারবাড়ীয়া গ্রামের তোফাজ্জল সরদারের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩০)।

আহত শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম জানান, তারা গোপালগঞ্জে ধান কাটতে গিয়েছিলেন। কাজ শেষে পারিশ্রমিক হিসেবে পাওয়া ধান নিয়ে ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। পথিমধ্যে হরিশচন্দ্রকাটি এলাকায় পৌঁছে ট্রাকটি উল্টে যায়। এতে ধানের বস্তা চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, সড়কের দুই ধারে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য খুঁড়ে রাখায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তালা থানার ওসি মমিনুল ইসলাম জানান, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

;