দখল আর দূষণের কবলে নরসিংদীর নদ-নদী



শরীফ ইকবাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নরসিংদী
দখল হয়ে যাচ্ছে অন্যতম বৃহৎ এসব নদ-নদী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

দখল হয়ে যাচ্ছে অন্যতম বৃহৎ এসব নদ-নদী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নরসিংদী জেলার চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদী। এর শাখা নদীগুলোর মধ্যে- ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, হাড়ি-দোয়া নদী, পাহাড়িয়া, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র অন্যতম। এসব নদ-নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠছে নরসিংদীর শিল্পাঞ্চল। কিন্তু দখল আর দূষণে বর্তমানে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এসব নদ-নদী।

জানা গেছে, নদীপথে যাতায়াতের সহজলভ্যতার কথা চিন্তা করে পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় কারখানা। ফলে এই কারখানার বর্জ্য ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি নদীতে মিশে ভরাট হচ্ছে। আর বর্ষা মৌসুমে নদীগুলো পানিতে থৈ থৈ করলেও অন্য সময়ে পানি অনেক কম থাকে।

কারখানার বর্জ্য মিশে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে

 

জানা গেছে, এসব নদী দিয়ে এক সময় বড় বড় জাহাজ আর পাল তোলা নৌকা চলতো। ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য করতে নরসিংদীতে ছুটে আসতেন নদীপথেই। সেই থেকে নরসিংদীর এসব নদীর তীরে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকায় নদী সংকুচিত হতে থাকে। ফলে এখন বছরের বেশির ভাগ সময়ই নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নৌকাও চলে না। তাছাড়া কারখানার বর্জ্য মিশে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমেও পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) মাত্রা কম থাকে। এ কারণে এই নদীতে মাছ বাঁচে না।

 

সরেজমিনে দেখা গেছ, শিবপুর উপজেলার বড়ই তলা এলাকায় কয়েকটি কারখানার বর্জ্য গজারিয়া ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়া আন্ডারলাইন দিয়ে হাড়িধোঁয়া নদে পরে। এছাড়া নরসিংদীর সর্ববৃহৎ শিল্পনগরী বিসিক (আমতলা) এলাকার একটি গার্মেন্টসসহ শতাধিক শিল্পের বর্জ্য দড়িচর ব্রিজের পাশ দিয়ে নদীতে পড়ে। আর ভেলানগর ব্রিজের নীচ দিয়ে হাড়িধোঁয়ায় পরে বেশ কয়েকটি কারখানার বর্জ্য। ঘোড়াদিয়া ব্রিজ, হাজিপুর ব্রিজের নিচ দিয়ে বেশ কয়েকটি কারখানার বর্জ্য এ নদে এসে মিলিত হয়। এছাড়া শীতলক্ষ্যার পানিতে সার কারখানার ক্যামিকেল ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গরম পানি পড়ায় মাছ বাঁচতে পারে না।

নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, নরসিংদী শহরের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদের ডিওর মান কমেছে। ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিত বর্জ্য ও কেমিকেল মিশ্রিত পানি নিয়ন্ত্রণ করে ডিওর মান উন্নয়ন করা সম্ভব। গত মে ও জুনে ডিওর মাত্রা ছিল শূন্য দশমিক ৮/৯ মিলিগ্রাম/লিটার, জুলাইয়ে ২ দশমিক ১/২ এবং আগস্টে ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম/লিটার।

নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তাফা মিয়া জানান, জনসংখ্যার আধিক্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ বিষয়ে অসচেতনতা, অপর্যাপ্ত পানিপ্রবাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঐতিহ্যবাহী নদ-নদীগুলোতে দূষণের মাত্রা বাড়ছে।

একই কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, মৎস্য ও জলজ প্রাণীর জীবনধারণের জন্য পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম বা এর বেশি থাকা প্রয়োজন। এরনিচে হলে প্রাণি বা কোনও উদ্ভিদ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি আরও জানান, পানিতে ডিওর মাত্রা প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রামের নিচে নেমে গেলে পানিতে শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায় না। আর ৮০ ভাগ মাছ শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। তাই ডিওর মান কম হলে ছোট ছোট মাছ মারা যায়। ফলে প্রাণীবৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যায়। হাড়িধোয়া নদে বছরের বেশির ভাগ সময়ই দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই কম থাকে। বর্ষায় কিছুটা বাড়লেও তাতে কিছু শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া ও কই, টাকি প্রজাতির মাছ ছাড়া অন্য কোনও মাছ ও জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।

নরসিংদী পরিবেশ আন্দোলন (আপন) এর সভাপতি মইনুল ইসলাম মীরু জানান, নদ-নদীর দূষণ আর দখল নিয়ে একাধিকবার মানববন্ধন, সভা, সেমিনার ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো অনেকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।

নরসিংদীর ১০০ শয্যা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. একরামুল ইসলাম শামীম জানান, নদীর দূষিত পানিতে নামলে শরীরে খাঁজলী, পাচড়া, চর্মসহ বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দিতে পারে।

নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য মতে, মেঘনা নদীটির ৪৫ কিলোমিটার নরসিংদীর ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এরমধ্যে ভৈরব ও নরসিংদী অংশে নদীটির প্রস্থ হচ্ছে ১৫শ’ মিটার ও গভীরতা ২৫ মিটার। বর্ষাকালে এই নদী দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১৬ হাজার ৫৬৮ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহিত হয় ১০৫ ঘনমিটার।

আর মেঘনার নরসিংদী অঞ্চলের একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে প্রভাবশালীরা। এদের কেউ কেউ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আবার কেউবা সরাসরি রাজনীতি করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননা। প্রভাবশালীরা মেঘনার একটি অংশ দখল করে গাছের ডালপালা ও বাঁশের কঞ্চি ফেলে মাছের ঘের তৈরি করে। ফলে নদীপথে নৌকা, লঞ্চ, স্পিডবোটসহ অন্যান্য নৌযান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া নদীর দুই তীরের জেলে পরিবারে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৫০০ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নরসিংদীর ৬টি নদী খনন কাজ চলছে।

   

জাহাজের ধাক্কায় কালুরঘাট সেতুর ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
জাহাজের ধাক্কায় কালুরঘাট সেতুর ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি

জাহাজের ধাক্কায় কালুরঘাট সেতুর ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে এমভি সামুদা-১ নামের একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কায় সেতুর ওয়াকওয়ের রেলিংয়ে ৫০ লাখ টাকা পরিমাণের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বুধবার (১ মে) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী লিমন মজুমদার বাদি হয়ে রেলওয়ের জিআরপি থানায় করা মামলার এজহারে ওই পরিমাণ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়।

এজহারে বেপরোয়া জাহাজ চালিয়ে ক্ষতি সাধনের অভিযোগ করা হয়। জাহাজটির ধাক্কায় কালুরঘাট সেতুর ওয়াকওয়ের রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কালুরঘাট সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'ম্যাক্স'।

সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম উল্লাহ বলেন, কালুরঘাট সেতুতে ধাক্কা দেওয়া এমভি সামুদা-১ নামের জাহাজটি কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত একটি ডক ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। নদীর মধ্যে বাঁক ঘোরানোর সময় তীব্র বাতাস আর জোয়ারের কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং বাতাসের তোড়ে ভাসতে ভাসতে কালুরঘাট সেতুতে এসে ধাক্কা খায়। এ ঘটনায় আমরা জাহাজটি জব্দ করেছি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত বলেন, আমরা সেতুটি পরিদর্শন করে দেখছি। কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। এ ঘটনায় প্রকৌশল বিভাগ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তরফে ওই জাহাজ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাহাজটি জব্দ করা হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, জাহাজের ধাক্কায় কালুরঘাট সেতুর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে মূল স্ট্রাকচারে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত করে বের করা হচ্ছে।

;

আজ রাতে যেসব অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে জনজীবন হয়ে উঠেছে বিপর্যস্ত। অবশেষে এ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশবাসী। আজ রাত থেকেই সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য জেলাগুলোয়ও বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বুধবার (১ মে) পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে আজ চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে।

;

দেশে সবচেয়ে বেশি শিশু শ্রমিক চট্টগ্রামে

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



রেদ্ওয়ান আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
দেশে সবচেয়ে বেশি শিশু শ্রমিক চট্টগ্রামে

দেশে সবচেয়ে বেশি শিশু শ্রমিক চট্টগ্রামে

  • Font increase
  • Font Decrease

 

শাহজাহান মিয়ার বাড়ি ভোলায়। পেটের দায়ে এসেছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী তীরে। যখন যা পান তাই করে খেয়ে বাঁচা শারীরিকভাবে অসুস্থ শাহজাহানের ছোট মেয়ের নাম মোর্শেদা। বাবার সাথে সে জীবন সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে আরও আগেই! বিভিন্ন আড়তে পঁচে পোকায় ধরা পেয়াজ কম দামে কিনে এনে রোদে শুকানোর সময় চাক্তাই খালের পাড়ে দেখা মিলেছে এই বাবা-মেয়ের।

কথা হয় বাবা শাহজাহান মিয়ার সাথে। ১১ বছরের এতো অল্প বয়সের মেয়েকে পড়ালেখায় না পাঠিয়ে নিজের সাথে রেখে কাজ করানোর বিষয়ে শাহজাহান মিয়াকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ’আমাগোতো সংসার চলা লাগবো। সংসার না চললে মাইয়ারে পড়ালেখা করামু কী দিয়া। টেকা পয়সার লাগি মাইয়ারে পড়ালেখা করাইতে পারি না। মাইয়া ফাইভ পর্যন্ত পড়ছে।’

অপু, আরাফাত ও আজগর তিন বন্ধু। তাদের বয়স যথাক্রমে ১২, ১১ ও ১২ বছর। তাদের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজিতে। রহমতগঞ্জ বাই লেইনের একটি ‘প্রিন্টিং এন্ড ফয়েল পেপার কাটিং হাউস’— এ কর্মরত অবস্থায় দেখা মিলে এই তিন বন্ধুর সঙ্গে।

এতো অল্প বয়সে তিন বন্ধুর এই শ্রমজীবনের গল্প জানতে চাইলে তারা বিনিময় করে এক করুণ অভিজ্ঞতা। তাদের তিনজনেরই গল্প এক। তারা জানায়, তাদের বাবা-মায়েরাই তদেরকে এই পেশায় পাঠিয়েছে আয়-রোজগারের জন্য। তবে, তিনজনের বেতন মিলিয়েও অযুতের ঘর ছুঁতে পারেনি।

উপরোক্ত গল্প দু’টিতে যে শিশুদের চিত্রায়ণ করা হয়েছে, আমাদের দেশে বর্তমানে সেসব শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭ জনে। যা বাংলাদেশের মোট শ্রমের ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এরমধ্যে চট্টগ্রামে নিয়োজিত রয়েছে ৬ লাখ ৪০ হাজার শিশু। যা বাংলাদেশের মোট শিশুশ্রমের ৩৬ শতাংশ।

সরকারি তথ্য মতে, দেশের ১৭ লাখ ৭৬ হাজার শিশু শ্রমিকের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বাধিক সংখ্যা রয়েছে। ৩ লাখ ৪০ হাজার শিশুশ্রমিক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগে। গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে শিশুশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে মোট শিশুশ্রম ছিলো ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এবছর সেটা বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

চট্টগ্রামের শিশুরা গৃহস্থালীর কাজসহ ডাম্পিং স্টেশন, ড্রাই ফিশ সেক্টর, মেটাল ফ্যাক্টরি, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, পরিবহন এবং জাহাজ ভাঙার কাজে জড়িত। যার কারণে তাদের জীবনের ঝুঁকিও ব্যাপক।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) চট্টগ্রামের অলাভজনক সংস্থা (এনজিও) ’মমতা’র সহকারী পরিচালক (শিশু সুরক্ষা প্রকল্প) মুজতাহিদা কাউসার বার্তা২৪.কমকে এসব তথ্য প্রদান করেন।

তবে, চট্টগ্রামে শিশুশ্রমের শীর্ষে রয়েছে এলুমিনিয়াম খাত। এরপর যথাক্রমে গণপরিবহন, হোটেল, পোশাক শিল্প, নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও বিউটি পার্লার খাত রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্ট্যাডিজের (বিলস) সহায়তায় ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষকের পরিচালনা করা জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর তথ্যমতে (বিবিএস), বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি সেক্টরকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো থেকে জানা যায়, এ ঝুঁকিপূর্ণ পেশাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি মিশু কাজ করে থাকে।

মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ) এর মহাসচিব জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইনে শিশুর বিভিন্ন সংজ্ঞা দেওয়া হলেও অধিকাংশ আইনে একজনকে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু বলা হয়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু শ্রম আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কোন কোন ক্ষেত্রে শিশুদের নির্দিষ্ট বয়স ও শর্ত অনুসারে শ্রমের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, দুঃখের বিষয় হলো পাশের দেশ ভারতেও শিশু সুরক্ষা আইন আছে। কিন্তু বাংলাদেশে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট শিশুদের কাজের অনুমতি থাকলেও এর কিছু শর্ত আছে। যেমন- দৈনিক ৪-৫ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। ভারী কাজ করানো যাবে না। কেমিক্যাল, ব্যাটারি, ওয়ার্কশপ, ওয়্যারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল, পরিবহন, ডাম্পিং ইত্যাদি ভারী কাজ করানো যাবে না। ফুলটাইম কাজ করানো যাবে না। তাদের ফিটনেস পরীক্ষা করে তাদের নিয়োগ দিতে হবে ইত্যাদি। তবে, হতাশার কথা হলো- শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্র দায়িত্ব হলেও রাষ্ট্র তা পালন করছে না।’

শিশুরা কেনো শিশুশ্রমে জড়াচ্ছে? এর পেছনে কী কারণ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রামের অলাভজনক সংস্থা (এনজিও) ’মমতা’র প্রধান নির্বাহী রফিক আহামদ বলেন, ’চট্টগ্রামে শিশু শ্রম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে দারিদ্র। তাছাড়া, চট্টগ্রাম বানিজ্যিক রাজধানী হওয়ার কারণে অনেকেই ছোটবেলা থেকেই কাজের সাথে জড়িয়ে যান। আবার শিশুদের পারিশ্রমিক কম দেওয়া যায় বলে অনেক প্রতিষ্টান মালিক শিশুদের নিয়ে এসে কাজে লাগিয়ে দেয়। এছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে, সবচেয়ে বড় কারণ হলো দারিদ্র। রাষ্ট্র সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে এই শিশু শ্রম কমবে বলে আশাবাদী।’

ইলমা (এনসিওর লিগ্যাল সাপোর্ট থ্রো লোকাল মুভমেন্ট এন্ড একশান) এর প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, ’আমাদের জনসংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এটাও শিশু শ্রম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাছাড়া অনেক পরিবার ছেলেমেয়েদের টাকার জন্য কাজে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু শিশু শ্রম তো শুধু শিশু শ্রম না। এই শিশু শ্রম করতে গিয়ে যে শিশুরা কীরকম শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হয় তা কল্পনারও বাহিরে। তাছাড়া, সরকার বলছে, একটা শিশুও পিছনে পড়ে থাকবে না। একটা শিশুও রাস্তায় থাকবে না। কিন্তু বললে কী হবে, সেরকম তো কোন উদ্যোগ নেই। শিশু কই আছে, মরে গেছে না বেঁচে আছে, সে খবর কেউ রাখে না। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারিভাবে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করলে, পদক্ষেপ নিলে শিশু শ্রম একদিন কমে আসবে বলে আমি মনে করি।’

;

ট্রেনের সাইরেন বাজতেই প্ল্যাটফর্মে ছুটে যান কুলিরা

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ট্রেনের সাইরেন বাজতেই প্ল্যাটফর্মে ছুটে যান কুলিরা

ট্রেনের সাইরেন বাজতেই প্ল্যাটফর্মে ছুটে যান কুলিরা

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী রেল স্টেশন। যেখানে নিত্যদিনের জীবনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে অনেকের জন্য। এখানে গোলাম মোস্তফা, আফজাল, শরীফ, কামালসহ আরো প্রায় ৪০ জন কুলি প্রতিদিনের বিভিন্ন ট্রেনের সাথে ছুটে চলেন। তাদের কাজ যাত্রীদের ভারী লাগেজ বহন করা। ট্রেনের সাইরেন বাজতেই তারা প্ল্যাটফর্মে দৌড় দেন, এক নিঃশ্বাসে।

তাদের প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে কার আগে ট্রেনের বগিতে উঠতে পারে। কে আগে নিজের টলিতে মালামাল উঠাতে পারে। ট্রেনের সামনে গিয়ে তারা দাঁড়িয়ে থাকে এবং যাত্রীদের মালামাল বহনের জন্য অনুরোধ করতে থাকে। যুগের পর যুগ, মাসের পর মাস ধরে এভাবেই চলে আসছে তাদের জীবন।

শুধু রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে নয়; প্রায় সারাদেশেই মাঝারি থেকে বড় রেল স্টেশনগুলোতে এই চিত্র দেখা যায়।

প্রতিদিনের এই ছুটে চলা শুধু তাদের পেশাগত জীবনেরই অংশ নয়, বরং এটা তাদের পরিবারের জীবনযাত্রার এক অপরিহার্য উপাদান।


শ্রমিকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে তাদের আয় রোজগার না বাড়ায় বেশ কষ্টেই দিন যাচ্ছে তার। আয় রোজগার হয় দিনে তিন থেকে চারশো টাকা। কিন্তু; খরচ হয়ে যায় ৫০০ টাকা ৬০০ টাকা। এতে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবে হালাল পথে রোজগার করতে পেরে স্বল্প আয়েও খুশি তারা।

গোলাম মোস্তফা, যিনি গত ৪৫ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত, তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিনের এই দৌড় আসলে আমাদের পরিবারের জন্য রুটি-রুজির লড়াই। এক একটা ট্রেন যেন আমাদের আশার প্রতীক।

এই কুলিরা যে শুধু লাগেজ বহন করেন তা নয়, তারা মূলত যাত্রীদের একটি বিশ্বাসযোগ্য সহায়তা প্রদান করে থাকেন। রাজশাহী স্টেশনের এই কর্মীদের কাজের পরিসর বিস্তৃত হয়ে আছে ট্রেনের আগমন থেকে বিদায় পর্যন্ত। আফজাল নামের আরেক শ্রমিক (কুলি) বলেন, প্রত্যেক যাত্রীর সাথে আমাদের একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে, যা কিছু ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে আরও দৃঢ় হয়।

আরেক শ্রমিক কামাল বলেন,  এই পেশায় ঝুঁকির অংশও কম নয়; আমরা প্রতিদিন ভারী লাগেজ বহন করি, যা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর চাপ ফেলে। কিন্তু পরিবারের জন্য এই পরিশ্রম আমাদের জন্য অপরিহার্য।

রাজশাহী রেল স্টেশনের প্রতিদিনের এই দৃশ্য শুধু একটি প্ল্যাটফর্মের চিত্র নয়, এটি বাংলাদেশের অনেক রেল স্টেশনের একটি পরিচিত দৃশ্য, যেখানে গোলাম মোস্তফার মতো কুলিরা প্রতিদিন নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে যাত্রীদের সেবা করে যান।

রাজশাহী রেল স্টেশনের এই নিয়মিত দৃশ্যগুলি বাংলাদেশের অন্যান্য রেল স্টেশনের মতোই, যেখানে কুলিরা প্রতিদিন তাদের পরিবারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তাদের জীবন ও পেশাগত দায়িত্ব এক উপহাসমূলক চ্যালেঞ্জের মতো, যা তাদের কেবল আর্থিক নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং একটি সমাজের অংশ হিসেবে তাদের অবদানের জন্য প্রয়োজন।

;