স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম কেউ জানে না, মানেও না!

  • নাজমুল হাসান সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এসএফএক্স গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের সামনের সড়কে স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেমের সিগনাল পোস্ট | ছবি: সুমন শেখ

এসএফএক্স গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের সামনের সড়কে স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেমের সিগনাল পোস্ট | ছবি: সুমন শেখ

শিক্ষার্থী ও পথচারীদের নিরাপদে সড়ক পারাপার নিশ্চিত করতে মোহাম্মদপুর টাউন হল সংলগ্ন এসএফএক্স গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের সামনের সড়কে ‘পুশ বাটন টাইম কাউন্ট-ডাউন সিগনাল’সহ জেব্রা ক্রসিংয়ের উদ্বোধন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশের প্রথম ‘স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেম’-এর উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

নতুন এই ট্রাফিক সিগনাল ব্যবস্থা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে জানতে সরজমিনে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে দেখা যায়, এসএফএক্স গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ছাড়া স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেম সম্পর্কে অন্যান্য পথচারী ও পরিবহনের চালকদের ন্যূনতম ধারণাও নেই।

smart traffic
স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেম সম্পর্কে অবগত নন বেশির ভাগ পথচারী

বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে রাস্তাটি পারাপারের জন্য পুশ বাটন চাপেন মিতু রহমান। তার সঙ্গে ছিল অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে মহিবুর রহমান। পুশ বাটন চাপার নির্দিষ্ট সময় পরে তাদের জন্য রাস্তা পারাপার হওয়ার টাইম কাউন্ট-ডাউন শুরু হয়। কিন্তু এই স্মার্ট সিগনালের ধার ধারলেন না কোন পরিবহন চালকই। সিগনাল উপেক্ষা করেই তারা গাড়ি চালিয়ে গেলেন। রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন মিতু রহমান ও তার ছেলে।

বিজ্ঞাপন

মিতু রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেম সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না আমাদের শহরের পরিবহন চালকরা। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু পরিবহন চালক ও পথচারীদের অজ্ঞতার কারণে খুব শিগগিরই এর সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেমের ট্রাফিক সিগনালে একবার পুশ বাটন চাপার পর পথচারীরা রাস্তা পারাপারের জন্য ২৫ সেকেন্ড সময় পান। একবার পুশ বাটন চাপার ১২৭ সেকেন্ড পরে ফের গ্রিন সিগনালের পুশ কার্যকর হবে। মধ্যবর্তী এই ১২৭ সেকেন্ড পরিবহন চলাচলের জন্যই নির্ধারিত। ট্রাফিক সিগনালের এই নির্ধারিত সময়ের বিধিনিষেধ শুধু পরিবহন চালকরাই যে অমান্য করছেন এমন নয়। পথচারীরাও বুঝে না বুঝে সমানভাবে অমান্য করছেন নতুন ট্রাফিক সিগনালের নিয়মকানুন।

সিগনাল অমান্য করেই চলাচল করছেন পথচারী ও পরিবহন চালকরা

পরিবহন চলাচলের নির্ধারিত সময়ে জেব্রাক্রসিং ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলেন আব্দুল মোমেন। সিগনাল অমান্য করে কেন তিনি রাস্তা পার হলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিস্মিত হয়ে ওই পথচারী বলেন, ‘কিসের সিগনাল? সব সময় তো এভাবেই রাস্তা পার হয়ে আসছি!’ স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সম্পর্কে কোন ধারণা আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এসব আমি জানি না, আর বুঝিও না। বুঝলে তো এভাবে রাস্তা পার হতাম না।’

ট্রাফিক সিগনাল সংলগ্ন এসএফএক্স গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী আশরাফ আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হওয়া এই স্মার্ট ট্রাফিক লাইটের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই পথচারীদের। শুধু গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এই স্মার্ট সিগনালের ব্যবহার সম্পর্কে অবগত হয়েছেন, সেটাও স্কুল কর্তৃপক্ষের তৎপরতার কারণে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এর ব্যবহার সম্পর্কে জানলেও পরিবহন চালক ও অন্যান্য পথচারীরা না জানার কারণে গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত এই স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেমের সঠিক ব্যবহার হতে দেখেননি আশরাফ আলী।

বৃহস্পতি ও শুক্রবারের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, পথচারীরা ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শিত সংকেতের মানে জানেন না, বোঝেনও না। স্ক্রিনে যদি সংকেত ব্যবহার না করে বাংলায় থামুন ও চলুন লেখা উঠতো তাহলে সাধারণ পথচারী ও চালকদের বুঝতে সুবিধা হতো। এতে সিস্টেমটা দ্রুত কার্যকর হতো।


এ বিষয়ে কথা হয় প্রাইভেটকার চালক মোহাম্মদ ইনামুল হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সম্পর্কে তার কোন ধারণাই ছিল না। নিয়মিত এই পথে যাতায়াত করেন তিনি। আজ এসে প্রথম এমন ট্রাফিক সিগনালের সঙ্গে পরিচিত হলেন। এমন সিস্টেম শুধু মোহাম্মদপুরে না করে যদি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় প্রাথমিকভাবে স্থাপন করা হয় তাহলে চালকরা এটা সম্পর্কে দ্রুত অবগত হবে এবং সিস্টেমটা মেনে চলার প্রবণতা তৈরি হবে বলে মনে করেন এই চালক।

তিনি আরও বলেন, ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন রেখেও যখন পথচারী ও চালকদের আইন মানানো যায় না তখন এমন অটোমেটিক সিস্টেম মানুষ মানতে চাইবে না—এটাই স্বাভাবিক। আমাদের অনেক সমস্যা আছে। নিয়ম যারা মানবে এবং নিয়ম যারা প্রয়োগ করবে—এই দুই পক্ষের কেউই নিয়ম মানে না। সে ক্ষেত্রে এমন অটো সিস্টেম খুব একটা কাজে দেয় না। তবে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গেলে সেখানে কিন্তু সবাই সিগনাল মেনেই চলেন। কারণ সেখানে নিয়ম প্রয়োগকারীরা নিয়ম মানতে বাধ্য করেন।

স্মার্ট ট্রাফিক লাইট সিস্টেম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, এখানকার নতুন সিগনাল লাইটের সঙ্গে ক্যামেরার ব্যবস্থা আছে। যেসব গাড়ির ড্রাইভার এখানে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করবেন তাদের গাড়ির নম্বর ক্যামেরা দিয়ে খুঁজে বের করা হবে। তাদের চিহ্নিত করে ধরে ধরে মামলা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই পুলিশকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সরেজমিনে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, প্রায় সব গাড়িই সিগনাল অমান্য করে চলাচল করছে। সিগনাল অমান্য করার কারণে কারো বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এমনকি আশেপাশে কোনো পুলিশ সদস্যের দেখাও মেলেনি।