প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ কর্মবাজারে প্রবেশ করছে
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নারায়ণ চন্দ্র বর্মা বলেছেন, দেশে প্রতি বছর ২০ লাখ কর্মপ্রত্যাশী যুবক ও যুব মহিলা কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু তাদের সবার কাজ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কর্মপ্রত্যাশীরা এখন ওভারসিস মার্কেটের দিকে কর্মসংস্থান নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।
বৃধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) গ্লোবাল ইন্টিগ্রেট সার্ভিসেস লিমিটেড আয়োজিত চীনে জনশক্তি রপ্তানি শীর্ষক জব ফেয়ার অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নারায়ণ চন্দ্র বর্মা বলেন, দেশে প্রতি ঘণ্টায় নতুন করে ২৮৫ জন শিশু জন্মগ্রহণ করছে। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ কর্মপ্রত্যাশী যুবক ও যুব মহিলা আমাদের কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে প্রায় ১২শ’ ৮৮ জন মানুষ। এখন জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। আমাদের অনেক কর্মক্ষম বেকার জনগোষ্ঠী আজকে কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের আমরা কাজ নিশ্চিত করতে পারছি না।
রংপুরকে এগিয়ে নিতে এ অঞ্চল থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১০টি দরিদ্রতম জেলার মধ্যে রংপুর বিভাগেই রয়েছে পাঁচটি জেলা। আমাদের সীমিত সম্পদ, মন্থর শিল্পায়ন। কৃষি জমি প্রতি বছর কমে যাওয়ার বিপরীতে বাড়ছে উবৃত্ত জনসংখ্যা। বাড়ছে বেকারত্ব। আমাদের সরকারি, বেসরকারি এবং অন্যান্য সেক্টরগুলোতে যে কাজ করে, তার পরিমাণ খুবই কম। এ কারণে কর্মপ্রত্যাশীরা ওভারসিস মার্কেটের দিকে কর্মসংস্থান নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। রংপুরের মানুষকে জাগতে হবে। বিদেশমুখী হতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আরও বলেন, আজকে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত। তারা দক্ষ জনশক্তি চায়। সরকার সেই জনশক্তি রপ্তানিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সবার কাজের নিশ্চিয়তা দেশে নিশ্চিত না হলেও বিদেশে উন্নত বেতনসহ বিভিন্ন সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানিতে বেকারত্ব কমবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি বাড়বে। আমরা কাজের প্রতি মনোযোগী, পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। বিদেশে যে যত কাজ করবে, সে তত এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত রহমান, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমেনা পারভীন, টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. লুৎফর রহমান, গ্লোবাল ইন্টিগ্রেট সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক আবু হাসনাত, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস, ব্যবস্থাপক (বিজনেস অপারেশন) পারভেজ কবির, চীনা প্রতিনিধি ইউলিয়াম হার্ন প্রমুখ।
জব ফেয়ারের আয়োজকরা জানান, রংপুর থেকে স্নাতক ও সসমান ডিগ্রিধারী ১৫০ জনকে তারা চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ করে দেবেন। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতনসহ ওভার টাইম সুবিধা, থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসাসহ ইন্সুরেন্স সুবিধা দেওয়া হবে। চীনে যাবার জন্য নির্বাচিত প্রত্যেককে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে পর্যায়ক্রমে রংপুর থেকে জব ফেয়ারে নির্বাচিতরা চীনের শ্রমবাজারে কাজের সুবিধা পাবেন।
জব ফেয়ার অনুষ্ঠানে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মপ্রত্যাশী স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি অর্জনকারী যুবকরা সরাসরি চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অংশ নেন। সেখান থেকে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, মেশিন অপারেটর ও জেনারেল ওয়ার্কার পদে ১৫০ জনকে নির্বাচিত করা হয়। গ্লোবাল ইন্টিগ্রেট সার্ভিসেস লিমিটেড প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও সহযোগিতায় দেশের শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে চীনে জব ভিসার জন্য এ জব ফেয়ারের আয়োজন করে।