‘পেঁয়াজ সংরক্ষণে প্রকল্প নিয়েছে সরকার’
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সরকার প্রকল্প নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেঁয়াজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বৈজ্ঞানিকভাবে পেঁয়াজ কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি যেখানে অন্যান্য পণ্যের মতো পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। সেটি সফল হলে আমাদের কাজে লাগবে।
পেঁয়াজের ঘাটতি কমাতে সরকার কি উদ্যোগ নিয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ টন ঘাটতি থাকে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে। আগামী বছর থেকে কৃষকদের পেঁয়াজ উৎপাদনে উন্নত জাত, প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। যাতে দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে পরনির্ভরতা কমানো যায়।
তিনি জানান, একই সঙ্গে কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে উৎপাদন ও পেঁয়াজ ওঠানোর মৌসুমে আমদানি বন্ধ রাখা হবে। ফলে আশা করছি এ উদ্যোগ নিতে পারলে আগামী ৩/৪ বছরের মধ্যে পেঁয়াজের ঘাটতি কমে যাবে।
প্লেনে পেঁয়াজ আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কত টন পেঁয়াজ আসবে তার সঠিক হিসাব নেই। সাধারণত ১২০ থেকে ২০০ টনের কার্গো প্লেনে আসবে। এছাড়া মিশর থেকে যেগুলো আসার কথা সেটা লোড হয়েছে। সেটা আগামী কাল রাতের মধ্যে আসতে পারে। ২০ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লাইটে দেশে পেঁয়াজ আসবে। প্রতিদিনই যাত্রীবাহী প্লেনে করে পেঁয়াজ আসবে। মিশর, তুরস্ক, ইজমির ও ইস্তাম্বুল থেকে দুই তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজ আসবে।
তিনি জানান, ২০ তারিখ রাতে সৌদি এয়ার লাইন্স করে প্রথম চালান আসবে। মিশর থেকে পুরো কার্গো প্লেনে করে ২১ তারিখ সন্ধ্যা ৬টায় আসবে। ২২ তারিখ রাত ১টায় যাত্রীবাহী বিমানে আসবে তুরস্ক থেকে। একই দিন সৌদি এয়ারলাইন্স করে মিশর থেকে আসবে রাত একটায়। ২৬ নভেম্বর তুরস্ক থেকে আসবে দুপুর ৩টা ২৫ মিনিটে৷ মোট ২০, ২১, ২২ ও ২৬ তারিখে কার্গো ও যাত্রীবাহী প্লেনে পেঁয়াজ আসবে। এছাড়া আমাদর জাহাজে করে যেটা আসার সেটা আসছে। যাত্রীবাহী প্লেনে ১০ থেকে ২৫ টন পেঁয়াজ আসবে৷ এগুলো সব আসবে আমাদের ব্যবস্থাপনায়। এছাড়া আরো ১০টি ফ্লাইট বুক করা হয়েছে। আমাদের ১০ থেকে ১২ হাজার টন পেঁয়াজ পথে রয়েছে। যা দুই তিন দিনের মধ্যে চলে আসবে। কাল থেকে প্রতিদিন আমাদের আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ আসবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিবছর ৭/ ৯ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজের ঘাটতি থাকে। ভারত বন্ধ করে দেওয়ায় এখন আমাদের মিশর ও তুরস্কের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। গতবছর এসময়ে দেশে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। এ বছর মাত্র ৭৬ হাজার টন আমদানি হয়েছে। বছরে আমাদের ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। আর গড়ে প্রতি মাসে ২ লাখ টন। রমজান মাসে লাগে ৫ লাখ টন। গত দুই মাসে এক লাখ টনও পেঁয়াজ আনতে পারিনি। এতো কিছু মধ্যে ভালো খবর হলো আমাদের দেশের পেঁয়াজ ওঠা শুরু হয়েছে। তার ফলে পেঁয়াজর দাম কিছুটা কমেছে।
অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সব সময় সুযোগ নিয়ে থাকেন। এজন্য আমরা দেড় হাজার অসাধু ব্যবসায়ীকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছি। তুরস্কসহ অন্যান্য দেশ থেকে টিসিবির মাধ্যমে কার্গো প্লেনে করে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আনা হবে। যা সরকার ভর্তুকি দিয়ে টিসিবির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করবে। আশা করছি সাতদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দেয়। আমরা ধারণা করেছিলাম এটা সাময়িক। তবে ২৯ সেপ্টেম্বর তারা রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিল। সেসময় তাদের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, বন্ধ করে দিলে সমস্যায় পড়ব। সে সময় ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ২৪ অক্টোবর আবার পেঁয়াজ রফতানি চালু করে দেবে। কিন্তু তারা দিলেন না।
কার্গোতে পেঁয়াজ আনতে এতদিন লাগলো কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, রাতারাতি কিছু করা যায় না। যে কোনো নতুন বাজার থেকে দ্রুত আনা যায় না। মিশর থেকে আমাদের দেশে জাহাজে আসকে ২০-২২ দিন লেগে যায়। তাই তাড়াহুড়া করে আনা যায় না। সাত দিনের মতো লাগে বিমানে করে। সেখানেও কার্গো বুক করতেও ৩-৪ দিন লেগে যায়। এসব কারণেই দেরি হয়েছে।