বিদ্যুৎ বিভাগ নাকি পিজিসিবি কে মিথ্যা বলছে

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিজিসিবি লোগো

বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিজিসিবি লোগো

বিদ্যুৎ বিভাগ বহুদিন ধরেই বলে আসছে উৎপাদনে ঘাটতি নেই সঞ্চালন ও বিতরণ সংকটের কারণে বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পিজিসিবির (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ) এমডি বিইআরসির গণশুনানিতে অংশ নিয়ে বললেন, আমরা অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছি, কিন্তু সেভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।

পিজিসিবির এমডি গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার না হওয়ায় পিজিসিবি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা যদি সক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারতাম তাহলে সঞ্চালন খরচ বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। যে কারণে ইউনিট প্রতি ২৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪১ পয়সা করার আবেদন করছি।

বিজ্ঞাপন

পিজিসিবি এমডির এই বক্তব্যে সকলেই অবাক হয়ে যান। তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনিও প্রকৃত ঘটনার বিষয়ে পরিস্কার হতে চান। জবাবে পিজিসিবি এমডি বলেন, বাস্তবেই আমাদের সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে হ্যাঁ কিছু পকেট আছে সেখানে স্থানীয় সমস্যা হলে সামাল দেওয়া যায় না। যেমন রংপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। কিন্তু কোনো কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকা অঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন। একইভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে আরপিসিএল’র বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকলে সংকট তৈরি হয়। এরকম ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো সংকট নেই পিজিসিবির।

২৩ হাজার মেগাওয়াট সঞ্চালনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। পায়রাতে বিদ্যুতের হাব করা হচ্ছে, মহেষখালীতে হাব করা হচ্ছে, মাতাবাড়িতে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে আরও সংকট তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন পিজিসিবি এমডি।

বিজ্ঞাপন

পরে অন্যান্য বক্তারাও বিষয়টি তুলে ধরেন। কিন্তু পিজিসিবি এমডি তার বক্তব্যে অনড় থাকেন। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান থেকে কোনো ঘাটতি নেই। আমাদের কারণে কোথাও লোডশেডিং হওয়ার সুযোগ নেই।

পিজিসিবি এমডির কাছে প্রশ্ন ছিল, আপনার কাছে এমন কোনো তথ্য রয়েছে যে, আপনারা রেডি, উৎপাদন কেন্দ্র রেডি কিন্তু বিতরণ কোম্পানি কিংবা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল লোড নিতে পারছে না। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের কাছে এমন তথ্য নেই। পিজিসিবি এমডি সরাসরি না বললেও উৎপাদনের দিকেই ইঙ্গিত বহন করে তার বক্তব্য।

বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে অ্যাড্রেস করা উচিত। উড়িয়ে দিয়ে সমস্যা সমাধান হয় না। বরং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

তবে পিজিসিবি এমডির বক্তব্যের পর একটি প্রশ্ন দর্শকদের মধ্যে কানাঘুষা হতে থাকে। তারা বলেন, তাহলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান থেকে সব লেভেলের কর্মকর্তারা যে বলেন উৎপাদনে সমস্যা নেই। সংকট হচ্ছে সঞ্চালনের সমস্যার কারণে।

বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, দেশের এখন বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা (আমদানিসহ) ২৪ হাজার মেগাওয়াটের মতো। সেখানে সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। অর্ধেকের বেশি অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে, সঞ্চালনের সীমাবদ্ধতার কারণে। চাইলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। বিতরণ কোম্পানিগুলোও দাবি করছেন তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ইদানিং রফতানির বিষয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়েছে। শীতের সময়ে আমাদের চাহিদা অনেক কমে যায়, তখন নেপালে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আলোচনাও চলমান।

অধ্যাপক শামসুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন যে সব কথাবার্তা বলেন সব নন টেকনিক্যাল বিষয়। তারা সেকেন্ডারি পার্ট। অন্য কারো কাছে শুনছে সে কথাই বলে যাচ্ছে। তাদের এসব বক্তব্যের যে বাস্তবভিত্তিক কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই তা আজকের শুনানির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের এসব ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য না। মুল কথা হচ্ছে মূলত লোড কতো তার কোনো হিসেব নেই কোথাও।

কমিশনের শুনানিতে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বিদ্যুতের দাম সামান্য বাড়লেও এর প্রতিঘাত অনেক সুদূর প্রসারী। এ কারণে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বর্তমান অবস্থায় রাখা হোক। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি বর্তমান দর ৪.৭৭ টাকা থেকে ১.১১ টাকা বৃদ্ধি করে ৫.৮৮ করার প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ৯৩ পয়সার সুপারিশ দিয়েছে। তবে বিপিডিবি দাবি করেছে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু তারপরও এই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অযৌক্তিক মনে করছে ক্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা।