সাংঘর্ষিক রাজনীতি দেশের মাটিতে যেনো আর কখনো না হয় সেই চেষ্টা বিএনপি করছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সেটা সফল হবে যত দ্রুত নির্বাচন দেয়া যায়। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তারা তাদের নির্বাচিত সংসদ, সরকার গঠন করবে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশান বিএনপির চেয়াপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এবং গণঅধিকার পরিষদের (জামান-ফারুক) সঙ্গে বিএনপির লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক শেষে তিনি একথা বলেন।
দ্রুত নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করবে কি না বিএনপি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে লিবারেল গণতান্ত্রিক পথে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। অনেক সংঘর্ষ হয়েছে, দেশের মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সাংঘর্ষিক রাজনীতি দেশের মাটিতে যেনো আর কখনো না হয় আমরা সেই চেষ্টাটা করে যাচ্ছি। সেটা সফল হবে যত দ্রুত নির্বাচন দেয়া যায়। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তারা তাদের নির্বাচিত সংসদ, সরকার গঠন করবে। যেই সংসদ সরকার জনগণের জবাবদিহি থাকবে, দায়বদ্ধ থাকবে৷ জনগণের কাছে বার বার ফিরে যাবে। সেই ধরণের গণতান্ত্রিক অর্ডার দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তার মাধ্যমে সম্ভব সাংগর্ষিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা। বাংলাদেশে স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ, নির্ভয়ে বাংলাদেশের মানুষ তার নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে পারে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে আলাপ করেছি, সংস্কারের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। এর মধ্যে আলাপ হয়েছে যে কথাগুলো উঠে এসেছে, নির্বাচনের সময় নিয়ে যে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে সেটা আমাদের কারো জানা ছিলো না, আমাদের কারো সঙ্গে আলোচনা হয়নি। সবসময় বলা হচ্ছে, সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হবে, বিভিন্ন সময় দেখেছি সরকার যখনই প্রয়োজন মনে করছে, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেখানে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু আমরা মনে করছি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যেটার জন্য বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করছে সেটা হচ্ছে আগামী নির্বাচন। সে বিষয়ে সরকারের যে সময়সীমার সম্পর্কে বলা হচ্ছে সেটা আমরা অবগত নই।
কি কারণে এই দীর্ঘ সময় নিয়ে নির্বাচনের একটা টাইমফ্রেম দেয়া হয়েছে এটা আমরা বুঝতে পারছি না উল্লেখ করে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা এটার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এটার কারণ হিসেবে অনেকে অনেক কথা বলছে। সেটা জনমনে বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টি হচ্ছে। এটার পিছনে কি কারণ থাকতে পারে, বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম মন্তব্য করছে আমরা সেটা এই পর্যায়ে বলতে চাই না৷ আমরা মনে করি, যে যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছিলাম সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না বিষয়টাকে।
সংস্কারের বিষয় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কার হচ্ছে যেটা প্রথম সংস্কার হওয়া দরকার সেটা হচ্ছে আগামী দিনে যে নির্বাচনটা হবে, ইলেক্ট্রোরাল প্রসেসের যে সংস্কার টা সে সংস্কারটা সবার আগে হয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। সেটা হয়ে নির্বাচনের দিকে আমরা এখন এগিয়ে যাবার কথা ছিলো। অন্যান্য সংস্কারের যে বিষয়গুলো উঠে আসছে, সংস্কার হতে হবে মূলত সংসদে। সংস্কার হতে হবে জনগণের আস্থা ও ম্যান্ডেট নিয়ে। এখন উনারা কি সংস্কার নির্বাচনের আগে করতে পারবেন সেটা দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, ঐক্যমতে যে কয়টা যে সংস্কার হতে পারে, সেখানে সবার ঐক্যমত হয়ে গেছে সেটাও এই কম সময়ের মধ্যে করার প্রয়োজনীয়তা আছে। আর যেখানে ঐক্যমত হবে না সেটা আমরা, আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে যেতে হবে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সে কাজগুলো করতে হবে। সংস্কারের কথা বলে আবার বিভিন্ন কমিটি রিপোর্ট দিবে, আবার বসবেন, সেই বিষয়গুলো দীর্ঘায়িত করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই৷ আমরা আবারও বলছি, ৩১ দফা সংস্কারে আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সুতরাং তারা কি সংস্কার করবে, পারলে খুব ভাল ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু আমরা আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবো জাতীয় সরকারের মাধ্যমে।
আগে স্থানীয় নির্বাচন হবে, তার মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিবেন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিটির প্রধানের এমন মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, উনারা কে কি বলছেন, কারা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন, পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন না এটা উনাদের সমস্যা। আমরা আমাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের মালকানা ফিরিয়ে দেয়া, জনগণের ভোটে সরকার গঠন করা, যারা জনগনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। আর বাকি যারা কথা বলছেন উনাদের জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নাই। একমাত্র নির্বাচিত সরকারই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। যারা দায়বদ্ধ থাকবে না তারা কে কি ভাবছে এটা নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা নেই।
এনডিএমের সভাপতি ববি হাজ্জাজ বলেন, সামনের নির্বাচন ও সংস্কার আমরা কিভাবে দেখতে চাই তাই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে আমাদের যে ঐক্য ছিলো সেটা আমরা আগামীতে কিভাবে ধরে রাখবো সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়ে আলোচনা যে আমরা যোক্তিক একটা সময়ের মধ্য নির্বাচন দেখতে চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা পরিস্কার একটা রোডম্যাপ চাই। জনগণের প্রধান অধিকার ভোট দেওয়ার অধিকার সেই অধিকার যত শীগ্রই ফিরিয়ে দেওয়া যায় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ববি হাজ্জাজ বলেন, জনগন একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তা বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা রাখবে নির্বাচন এর মাধ্যম। নির্বাচনের জন্য সময় ক্ষেপণের কোন প্রয়োজন নেই। কোন সুরকার জনগনের মতামত ছাড়া বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। আন্দোলন ছিলো জনগণের ভোটের অধিকার তাদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
এইজন্য বলি পরিস্কার রোড- সেখানে থাকবে কোন সময় কিভাবে নির্বাচন করবেন। এইক্ষেত্রে জনগণ যাতে আশাহত না হয় বলেও যোগ করেন তিনি।
সংস্কারর বিষতে তিনি বলেন, সংস্কারের জন্য বিএনপিসহ অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আমরা ৩১ দফা প্রস্তুত করেছি।