রাজশাহী আ.লীগে নেতৃত্বের দৌড়ে আলোচনায় ৭ নেতা
তিন দফা তারিখ পরিবর্তনের পর রোববার (৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ফলে জেলা কমিটির শীর্ষ দুই পদ পেতে শেষ মুহূর্তেও কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতার কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন প্রায় এক ডজন নেতা। তবে এর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাত নেতা। যার মধ্যে সভাপতি পদ পেতে তদবির করছেন চারজন আর সম্পাদক পদ পেতে মরিয়া তিনজন।
সম্মেলনের আগের রাতে রাজশাহী মহানগরীসহ উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মুখে মুখে তাদের নাম। তবে শেষ পর্যন্ত কারা নেতৃত্বে আসছেন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। পুরোনোরাই থাকছেন, নাকি নেতৃত্বে আসছেন নতুন মুখ। এমন প্রশ্ন এখন জেলার নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। তবে যেই নেতৃত্বে আসুক, বিভেদ-দ্বন্দ্ব ভুলে কর্মীদের জন্য কাজ করবেন এমন কাউকে শীর্ষ পদে দেখতে চান তৃণমূল কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও সাবেক সভাপতি আখতার জাহান এগিয়ে রয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন- বর্তমান কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের মধ্যে বিরোধ থাকায় যেকোনো একজনকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে আসাদের সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলছেন নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন: রাজশাহী জেলা আ.লীগের সম্মেলন রোববার, স্বচ্ছ নেতৃত্ব চায় তৃণমূল
সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারাও সভাপতি পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রগুলো দাবি করছে। তার সমর্থকরা বলছেন- জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দারাকে রাখবেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আর রাজশাহী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার প্রার্থী সাবেক সভাপতি আখতার জাহান।
সভাপতি প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি এবং প্রতিমন্ত্রী করেছেন। যদি তিনি চান, তাহলে আবারও দায়িত্ব নিয়ে সংগঠনকে গতিশীল করব।’
আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘সম্মেলনে ভোট হলে সভাপতি প্রার্থী হব। ভোট হলে বিশ্বাস করি, কর্মীরা আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করবে।’
আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এখন আমি দলের পদ চাইতেই পারি।’
আখতার জাহান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তিনি চাইলে সভাপতির দায়িত্ব নিতে চাই।’
এদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু। তিনি বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। দলের নেতাকর্মীদের কাছে তার ক্লিন ইমেজ রয়েছে। সম্পাদক পদ পেলে তিনি দক্ষভাবে জেলা আওয়ামী লীগ এগিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করেন তার সমর্থক নেতাকর্মীরা।
সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে এগিয়ে থাকা আরেক তরুণ নেতা আয়েন উদ্দিন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এক-এগারোর সময়ে সেনা সরকারের রোষানলে পড়ে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। রাবি ছাত্রলীগকে সংগঠিত করে নেত্রী মুক্তির আন্দোলনেও তার ভূমিকা ছিল বলে তাকে নেতৃত্বে আনার দাবি ছাত্র রাজনীতি করে আওয়ামী লীগে আসা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টুও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে তদবির করছেন। দলের জন্য নিজের ত্যাগ-সংগ্রামের বিভিন্ন নথি নিয়ে ঘুরছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। দায়িত্ব পেলে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ গতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী লাভলু বলেন, ‘গত সম্মেলনেও আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। তবে আমাকে যুগ্ম-সম্পাদক করা হয়। সভানেত্রী আমাকে দায়িত্ব দিলে সর্বোচ্চটা দিয়ে দল চালাব।’
আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্র জীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করছি। এর জন্য জেল খেটেছি, নির্যাতিত হয়েছি। সংগঠনের নেতৃত্ব পেলে সততা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দায়িত্ব পালন করব।’
জাকিরুল ইসলাস সান্টু বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হলে দীর্ঘদিনের বিভেদ দূর করে সংগঠনকে গতিশীল করব।’