পাটকল শ্রমিকের জানাজা সম্পন্ন, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
পাটকল শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের জানাজা সম্পন্ন, ছবি: বার্তা২৪.কম

পাটকল শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের জানাজা সম্পন্ন, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১১ দফা দাবি আদায়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী প্লাটিনাম জুট মিল শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের (৫৮) জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্লাটিনাম জুট মিল গেটে বিআইডিসি সড়কে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। স্বজন ও সহকর্মীরা সাত্তারের মরদেহ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় নিয়ে যান।

জানাজায় খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের নগর সেক্র‌েটারী মাওলানা নাসির উদ্দিন, রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মুরাদ হোসেন, শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন, কাওসার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, সেলিম শিকদার, মনিরুল ইসলাম শিকদার, আবু হানিফ, শাহাজান সিরাজ, তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মিন্টু মিয়া, স্টার জুট মিলের আবু হানিফ, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত হোসেন, আব্দুল হামিদ, হারুন অর রশিদসহ পাটকলের শ্রমিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এছাড়া বাদ জুম্মা রাষ্ট্রয়ত্ত পাটকলের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, জানাজায় অংশ নেওয়া শ্রমিকরা ঘোষণা দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এরআগে, বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় অনশন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে শ্রমিক আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথম‌ে তাকে খালিশপুর ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে খুমেক (খুলনা মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

তিনি বলেন, মৃত শ্রমিকের পরিবারকে সব ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনশনরত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এসময় তিনি খুলনার বিভাগীয় শ্রম অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় পাটকল শ্রমিকদের অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে খুলনার বিভাগীয় শ্রম অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের অনশন প্রত্যাহারের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনশন ও ধর্মঘটে থাকা শ্রমিকদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার আহ্বান জানালেও শুক্রবারও চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিক নেতারা জানান, আমরণ অনশনে অংশ নিয়ে ইতোমধ্য‌ে খুলনার বিভিন্ন পাটকলের অন্তত দুই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে ৫০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে যতই কষ্ট হোক, ১১ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন বলেন, অনশন কর্মসূচিতে দুই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অনেককে খুমেকে পাঠানো হয়েছে। স্যালাইন দিয়েও অনেকে অনশনে আছেন।

উল্লেখ্য, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়। সবশেষ ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় আমরণ অনশন।

   

চট্টগ্রামে স্থায়ী ঈদগাহ উদ্বোধন, একত্রে নামাজ পড়বে ২ হাজার মুসল্লি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর এলাকায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে তৈরি স্থায়ী ঈদগাহ ও জানাজার নামাজের স্থান উদ্বোধন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী৷

শুক্রবার (১৪) জুন বিকেলে উদ্বোধন হওয়া ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫২ ফুট প্রস্থের এই ঈদগাহে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারবেন প্রায় দুই হাজার মুসল্লি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছিল এলাকায় ঈদগাহ ও নামাজে জানাজার জন্য কোন স্থান না থাকায় অনেক সময় সড়কে নামাজ আদায় করতে হতো। এর ফলে একদিকে যেমন যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটতো, অন্যদিকে মানুষের ভোগান্তি বাড়তো।

'‌মুরাদপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দাদের ঈদগাহ ও নামাজে জানাজার স্থান নিয়ে দীর্ঘদিনের সংকট নিরসন করতেই ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়ে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছি৷ ঈদগাহ ও নামাজে জানাজার স্থানের চারপাশে ওয়াকওয়ে, বসার স্থান, ওজু ও টয়লেটের এবং লাশ ধোয়ার ব্যবস্থাও করেছি।'

সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম বলেন, মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে অব্যবহৃত এই জায়গাকে ঈদগাহ ও জানাজার স্থানে পরিণত করায়৷ আমরা সবাই মিলে মেয়র মহোদয়ের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে নগরবাসীকে উন্নত চট্টগ্রাম উপহার দিব।

সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, জনগণের কল্যাণে এ উদ্যোগ নেয়ায় এলাকাবাসী খুশি৷ জনকল্যাণমুখী উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা সবাই একসাথে কাজ করব৷

এলাকাবাসী জানান, আগে ঈদের নামাজ আদায় করতে রাস্তায় নামতে হতো তাদের। এমনকি কেউ মারা গেলে জানাযা পড়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে নামাজ আদায় করতে হতো। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতো। লোকজন ভোগান্তির শিকার হতেন। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ফ্লাইওভারে নিচে খোলা জায়গাটি নামাজ আদায়ের জন্য সুব্যবস্থা করে দেওয়ায় দীর্ঘদিনের সমস্যা দূর হয়েছে। মেয়রের এই অভিনব উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তারা।

চসিকের বাস্তবায়নে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন এমন একটি উদ্যোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারে নিচে নামাজের জন্য যে জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, জায়গাটির চারপাশে ঘেরাও করে ভেতরে নান্দনিক ওয়াকওয়ে, ওজুখানা, বসার স্থান, ওয়াশরুম, স্টোররুম ও সিকিউরিটি রুম করা হবে।

ফ্লাইওভারের নিচে সড়কের মাঝখানে নামাজ আদায়ের কারণে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর জানান, পথচারী পারাপারের যাতে সমস্যা না হয় দুই জায়গায় জেব্রা ক্রসিং করা হবে। লোকজন খন্ডকালীন সময়ের জন্য জায়গাটা ব্যবহার করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, হাজী নুরুল হক, গোলাম মো. জোবায়ের, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, আবদুস সালাম মাসুম, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, জাফরুল হায়দার সবুজ৷ কাউন্সিলর মোবারক আলীর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী শাহীন-উল-ইসলাম৷ অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন৷

;

মামা দাম কত, ভাই দাম কত, চাচা দাম...?



জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর মেরাদিয়া হাট থেকে কোরবানির গরু কিনে বনশ্রী ‘এ’ ব্লকের বাসার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন ইমপেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী রবিন হোসেন। সঙ্গে তার বাবা, বাড়ির দারোয়ান; সঙ্গে বার্তা২৪. কমের এ প্রতিবেদক। হাট থেকে বাসার দূরত্ব প্রায় ৮০০ মিটার। পুরো পথে ৩৭ জন পথচারী জিজ্ঞেস করেছিলেন—মামা, দাম কত; ভাই, দাম কত; চাচা, দাম কত?

এসময় রবিন, তার বাবা, ও বাড়ির দারোয়ান সবাইকে দাম বলছে ১৫০ (মানে দেড় লাখ টাকা)। রবিনের ভাষ্য গরু কিনে যদি দামটা যদি গরুর গায়ে লেখা যেত, তাহলে ভালোই হতো!

কলেজ-শিক্ষার্থী রবিনের মত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত মেরাদিয়া হাট থেকে যারাই গরু কিনে হাট থেকে বের হচ্ছেন সবার বক্তব্য প্রায় একই। বিশেষ করে কোরবানির গরু কেনার পরে পথচারীরা সবাই ‘দাম কত’ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সবার উত্তর থাকে একই। এখানে মিশ্র প্রতিক্রিয়া; অনেককে বিরক্ত হতে দেখা যায় না, আবার কেউ কেউ এক প্রশ্ন বারবার শুনে বিরক্তও হচ্ছেন।

বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা আজগোর হোসেন। মেরাদিয়া হাট থেকে গরু কিনে রওনা হয়েছেন বাসার উদ্দেশে। হাটে ব্যাপারীর সাথে গরুর দামাদামিতে বেশ বিরক্ত। একদিকে গরমে গায়ে গামে ভেজা গেঞ্জি, অন্যদিকে পথ জুড়ে পথচারীদের ‘দাম কত’ প্রশ্নে বিরক্ত। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, বাজেটের বাইরে গিয়ে এমনিতে কিনতে হয়েছে গরু, তার ওপর তীব্র গরম, এরপর মানুষের প্রশ্ন—‘দাম কত ভাই?’

হাট থেকে কোরবানির গরু নিয়ে আসার সময় সবার একই প্রশ্ন মামা দাম কত, ভাই দাম কত, চাচা দাম...?

মেরাদিয়া হাটের প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, এই হাট থেকে যারাই গরু কিনে বের হচ্ছেন, তাদের প্রত্যেককে পথচারীরা জিজ্ঞেস করছেন—মামা, দাম কত; ভাই, দাম কত; চাচা, দাম কত?

এদিকে মেরাদিয়া হাট ঘুরে দেখা যায়, এবার কোরবানির ঈদেবেশি চাহিদা রয়েছে মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর। যে কয়েকটি খণ্ডে বড় গরু রয়েছে সেখানে ক্রেতার উপস্থিতি অনেক কম। ক্রেতারা বলছেন, ছোট গরুর চাহিদা বেশি থাকায় দামও চাচ্ছেন ব্যাপারীরা।

আসন্ন কোরবানির ঈদের রাজধানীতে গরুর চাহিদা মেটাতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে দুই সিটি করপোরেশন ২০টি গরুর হাট ইজারা দিয়েছে। তারমধ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আওতাধীন ১১টি পশুর হাট আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাধীন ৯টি পশুর হাট রয়েছে।

হাটের বেচাকেনা নিয়ে মেরদিয়া হাটের ইজারাদার আবু সাঈদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুরো বাজার গরু-ছাগলে পরিপূর্ণ। আমাদের মেরাদিয়া হাটে এখনও পশু আসছে। আজকে ছুটির দিন হওয়ায় এখানে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি। বিক্রিও হচ্ছে। তবে আগামীকাল থেকে বিক্রি আরও বাড়বে। এই হাটে সিটি করপোরেশনের ২০০ ভলান্টিয়ার এবং আমাদের পক্ষ থেকেও লোকবল নিয়োগ আছে। ক্রেতার উপস্থিতি বাড়াতে আমরা আশপাশের এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি।

;

ভর্তি স্কুলে, পরীক্ষা বাড়িতে, আড্ডা দিয়ে সময় পার শিক্ষকদের



ছাইদুর রহমান নাঈম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, ( কিশোরগঞ্জ)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অদ্ভুত এক স্কুলের সন্ধান মিলেছে কিশোরগঞ্জে। যে স্কুলের শিক্ষকরা অফিসে বসে করেন গল্পগুজব, আর শিক্ষার্থীরা আসে মাঝেমধ্যে। তারপরেও নিয়মিত হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হয় তাদের। শুধু এখানেই শেষ নয়, শিক্ষার্থীরা সুবিধামতো পরীক্ষাও দিতে পারে বাসায় বসে। উপবৃত্তি আর সরকারি সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রলোভনে ভর্তি করানোরও অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। তার দাবি স্থানীয় একটা পক্ষ বিভিন্ন কারণে স্কুলটিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। এদিকে শিগগিরই তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

গত রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জনশূন্য বিদ্যালয়ের মাঠ। ভেতরেও সুনসান নীরবতা। মনে হলো পরীক্ষা চলছে। কিন্তু ভিতরে গিয়ে দেখা গেলো অন্যরকম চিত্র। অফিসকক্ষে তিনজন শিক্ষককে পাওয়া গেলো। কিন্তু ক্লাসরুমে নেই কোনো শিক্ষার্থী।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাইক লক্ষীয়া গ্রামের হাজী মো. মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন নূরুল আফসার। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক মোট ছয়জন। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী জোসনা আক্তার সহকারী শিক্ষক। অপর সহকারী শিক্ষক হোসনে আরা বেগম ঝরনার ছেলে মাহমুদুল হাসান রাসেল কমিটির সভাপতি। স্থানীয়রা স্কুলটিকে পারিবারিক স্কুল বলেও ট্রল করে থাকেন।

আবু কাউসার নামে একজন অভিভাবক জানান, তার মেয়ে পাকুন্দিয়া মডেল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষক সুপারিশ করে তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি দেখিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সে ক্লাস করে মাদ্রাসায়। শিক্ষক বলেছেন, মেয়ে মডেল মাদ্রাসায় পড়ুক, এখান থেকে সরকারি একটা সার্টিফিকেট নিয়ে রাখলে ভালো হবে। তিনি প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করেন একই সময়ে যদি দুই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা হয় তখন কী করবো? শিক্ষক বললেন সঠিক সময়ে মাদ্রাসায় পরীক্ষা দেবে, আর স্কুলেরটা দেবে বাসায় বসে। যেই কথা সেই কাজ। বাসায় বসেই দিতে পারে পরীক্ষা।

ফয়সাল হক রাকিব নামে একজন জানান, স্কুলটিতে হাতে গুনে ১৫ জন শিক্ষার্থীও পাওয়া যাবে না। তবে স্কুলের খাতায় অনেক বেশি দেখা যাবে। আর বিভিন্ন কর্মকর্তারা যখন পরিদর্শনে আসেন তখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ডেকে আনেন শিক্ষকেরা।

জালাল মিয়া নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, মাছিম উদ্দীন স্কুলের শিক্ষকরা উপবৃত্তির কথা বলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে। পরে আর ক্লাস করাতে দেখা যায় না। তিনি বলেন, স্কুলটা সবসময় খালিই থাকে। শিক্ষকরাও মাঝেমধ্যে এসে ঘুরেফিরে চলে যান।

জালালের সাথে কথা শেষ হতেই অমিত হাসান নামে এক যুবক জানান, বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলা থাকলে শিক্ষার্থীদের দেখা গেলে শ্রেণিকক্ষে তেমন কাউকে দেখা যায় না।

হাজী মো. মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল আফসার জানালেন, প্রাক প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির ক্লাস ছুটি হয়ে গেছে। কারো হাজিরা না থাকা প্রসঙ্গে বললেন, ভুলে হাজিরা খাতা ক্লাসে নেওয়া হয়নি। তবে দ্বিতীয় শ্রেণির হাজিরা খাতায় ছয়জন শিক্ষার্থীর হাজিরা দেখিয়েছেন তিনি।

অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা কোথায় জানতে চাইলে বললেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। যদিও তারা আর আসেনি সারাদিনেও।

শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান রাসেল বলেন, এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনে পড়ে। তাদের রেজিস্ট্রেশন এখানে থাকলেও ক্লাস করে ঐখানে। তিনি বলেন, এই রকম সব স্কুলেই হয়। এছাড়াও কিন্ডার গার্টেনগুলোর তো পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, বিষয়টি তিনি জানার পরেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ঐ প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯০ সনে। আর সরকারিকরণ হয় ২০১৩ সনে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টির এমন দৈন্যদশা বলে জানান এলাকাবাসী। বিদ্যালয়টির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পার্শ্ববর্তী একাধিক মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি রয়েছে। শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দেয় হাজী মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ জন উল্লেখ করলেও এলাকাবাসী জানান, মোট শিক্ষার্থী ৩০ জনের বেশি হবে না।

;

ঈদকে পুঁজি করে লঞ্চে বাড়তি ভাড়া, ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ



মেহেদী হাছান মাহীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পরিবারের বড় ছেলে নওশাদ। গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ বঙ্গের দ্বীপাঞ্চলে। পড়াশোনা শেষে সরকারি বড়কর্তা হওয়ার আশায় কয়েকবছর ধরে থাকেন রাজধানী ঢাকায়। গত এক বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও লাইব্রেরিতে চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তবে আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মায়ের বায়না বড় ছেলে বাড়ি ফিরলেই সাধ্যের মধ্যে কেনা হবে কোরবানির পশু।

মায়ের আশা পূরণে শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুর দুইটায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসেন নওশাদ। সাধ্যের মধ্যে পাননি কেবিন। তাই লঞ্চের ছাদে করে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যাত্রা পথে কোনো ভোগান্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে বলেন, কেবিনে করে যাওয়ার আশায় দুপুর দুইটায় এসে পৌঁছেছি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। কেবিন ফাঁকা থাকলেও তিনগুণ দামের কারণে ছাঁদে করেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃষ্টি হলে কি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকদিন বাড়ি যাইনি। ফোনে মা অনেক কান্নাকাটি করছেন। বৃষ্টিতে ভিজে যেতে হলেও মায়ের ইচ্ছা পূরণ করা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না।

ডেকে আগের থেকে অনেকে কাঁথা বিছিয়ে রেখেছেন। 

একইরকম ভোগান্তির শিকার নাজমা পারভীন। সাভারের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন তিনি। ছয় মাস পূর্বেই স্বামীহারা হয়েছেন নাজমা পারভীন। ঈদের ছুটিতে দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভোলা হাকিমুদ্দিনের উদ্দেশ্যে উঠেছেন ফারহান-৪ লঞ্চে। কেবিনের ভাড়া অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি হওয়ায় মাদুর বিছিয়ে বসেছেন লঞ্চের দোতলার বারান্দায়। তিনি জানান, ছেলে মেয়ে নিয়ে বারান্দায় বসে যাওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কম টাকায় কেবিন না পাওয়ায় ডেকে বসে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও পারিনি। ডেকে আগের থেকে অনেকে কাঁথা বিছিয়ে রেখেছেন। বসতে চাইলে ১০০০ টাকা দাবি করেন। তাই, না পেরে দোতলার বারান্দায় করে যাচ্ছি। এখানে বসাতে লঞ্চের স্টাফরাও খারাপ ব্যবহার করছে। কোনওভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই বাঁচি।

দুইদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। আপনজনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য নিজ বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। আজ দুপুর থেকেই সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘুরে নানা অনিয়ম দেখা গিয়েছে। লঞ্চের কেবিন ভাড়া বৃদ্ধি করলেও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফারহান- ৪ এর এক স্টাফ বলেন, সারাবছর তেমন ব্যবসা না থাকায় ঈদের মৌসুমে একটু ভাড়া বাড়ানো হয়। তবে ডেকেতে এক অসাধু চক্র উঠে ব্যবসা করে। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তের উপরে আমাদের কিছুই করার নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিন নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমকে তার অফিসে না পেয়ে একাধিকবার কল দিলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

;