আজও শীতে কাঁপছে সারা দেশ

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে দেশ

হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে দেশ

‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’ প্রবাদটি এবার বদলে হয়ে যেতে পারে। কারণ আজ কেবল ৬ পৌষ। এরই মধ্যে সারা দেশে জেঁকে বেসেছে শীত। পৌষ মাস যেন সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

গত চার দিন ধরে দেশের কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। কাঁপন ধরানো শীতের মাত্রা তুলনামূলক বেশি উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়। উত্তরের এ জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা।

বিজ্ঞাপন
হেডলাইট ও ফগ লাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন

রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও রয়েছে শীতের তীব্রতা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন কুয়াশার কারণে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়। হাইওয়ে পুলিশের হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর হায়দার চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা অনেকাংশে কমে আসছে। যার ফলে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সামনের পথচারী ও বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

এ অবস্থায়, মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালকদের কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় ফগলাইট ব্যবহার ও গতিসীমা সীমিত রেখে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হল।

বিজ্ঞাপন
ঢাকায় ঘন কুয়াশা

ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয় পড়েছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেককে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। শহরেও মানুষের চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। তবে শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম বেকায়দায়। ঘন কুয়াশা আর উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস শীতের তীব্রতাকে আরও বৃদ্ধি করেছে।

তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে

শনিবারও (২১ ডিসেম্বর) শীতের তীব্রতায় নাকাল পুরো দেশ। দমকা বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ফরিদপুরে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঘন কুয়াশার কারণে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ৫ ঘন্টা বন্ধ রাখা হয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

শীতের তীব্রতায় রাস্তাঘাটে কমে গেছে মানুষের আনাগোনা

একই কারণে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটের ফেরি চলাচলও প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ ছিলো। পরে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে:

ঢাকা:

ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ দুটি বিমানবন্দরের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুকূলে আসলে বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক হবে।

ঘাসগুলো কুয়াশায় ভিজে আছে

চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, কিছুদিন পর চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা আরো নিচে নেমে আসতে পারে।

ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আর দমকা হাওয়ায় রাস্তাঘাট এবং বাজারে মানুষের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। সকাল ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে মাঠে লাগানো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এদিকে এলাকার মোড়ে মোড়ে মানুষ শীত থেকে বাঁচতে কাগজের টুকরো আর খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা

পঞ্চগড়:

হিমালয়ের হিম বাতাসের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ঘন কুয়াশার কারণে গত দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। ফলে নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছে চরম বিপাকে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) পাঁচটি উপজেলা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কনকনে শীতে বড় অসহায়ত্বে মাঝে জীবন যাপন করছে খেটে খাওয়া মানুষরা। অনেকেই খড়খুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজ সকালে পঞ্চগড়ে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল থেকে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। হিমালয়ের হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারনে আজ শীতের তীব্রতা বেড়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৮ হাজার শীতবস্ত্র জেলার ৫টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও দেখা নেই সূর্যের।

জয়পুরহাট:

গত চারদিন ধরে এ জেলার আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি। আজ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবারও (২১ ডিসেম্বর) জেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে লোকজনের আনাগোনা ছিল কম। ঠাণ্ডা জনিত সমস্যায় আজ সকালেও বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা ছিলো বেশি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজ জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সময় গড়ানোর সঙ্গে সাঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শীতার্ত মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায়ও কম্বল পাঠানো হয়েছে।

কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) জেলায় ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে।

সারা দেশের মতো এ জেলাতেও গত চারদিন ধরে নেই সূর্যের দেখা। রাতের শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার চর এলাকার মানুষ।

খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম বেকায়দায়

খুলনা:

ঘন কুয়াশার কারণে খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটের ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ ট্রেনই গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরি করে ছাড়ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সহস্রাধিক যাত্রী।

চিত্রা এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন, পার্বতীপুরের রকেট এক্সপ্রেস ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা এক্সপ্রেসও শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়ে খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আমিরুল আজাদ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে গতি কমিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাতিল করা হচ্ছে ট্রেন যাত্রা। কুয়াশা কেটে গেলে শিডিউল বিপর্যয় অনেকটাই কমে আসবে বলে জানালেন তিনি।

শীতের কারণে কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধরা।

মেহেরপুর:

শনিবার সকালে মেহেরপুরে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজকে সকালেও সূর্যের দেখা নেই।

ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে গোটা জেলা। রোদ না থাকায় এবং উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাসে শীতের প্রকোপ বাড়ছে।

গাইবান্ধা:

গত চারদিন ধরে গোটা গাইবান্ধা জেলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। শীতের দাপটে সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি কাতর হয়ে পড়েছেন জেলার চরাঞ্চলসহ সাত উপজেলার ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ।

শীতের তীব্রতায় বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। প্রতিদিন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালগুলোয় ভিড় করছে মানুষ। এসব রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু আর বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারি পরিচালক মাসুদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঘন কুয়ার কারণে কৃষকের সবজি ক্ষেত, বোরো বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এসব ফসল রক্ষায় কৃষকদের নানা পরামশ দেওয়া হচ্ছে।