দেশজুড়ে চলছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
নদী ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত এবং দূষণ রোধে সারা দেশে ৪৪ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকে অভিযান শুরু হয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন।
বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে:
রংপুর:
রংপুরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পার্কের মোড় এলাকার খোকসা ঘাঘট নদীর আশেপাশে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনটি স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হয়।
এর আগে অভিযানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ মোহাম্মদ ফয়জুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছন্দা পালসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সকল জেলাতে নদী ও খাল দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। রংপুরেও নদী-খাল উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চলছে।
তিনি বলেন, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় এলাকায় নদী ও খাল দখলে রাখা ১৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছি। সবগুলোই উচ্ছেদ করা হবে।
ডিসি বলেন, পর্যায়ক্রমে রংপুরের শ্যামা সুন্দরী খাল ও তিস্তা নদী দখল মুক্ত করা হবে। নদী-খাল উদ্ধারে অবৈধ দখলদারদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ৯ টা থেকে কালীবাড়ি গুদারাঘাট এলাকা থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এসময় বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয় নদের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা পাকা-আধাপাকা ও টিনশেড ঘর এবং দোকানপাট।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাশেম ও সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম সাজ্জাদুল হাসান।
এম সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজ থেকে কাচারিঘাট পর্যন্ত সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
পটুয়াখালী:
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সকালে শহরের হেতালিয়া বাধঘাট থেকে অভিযান শুরু করে অভিযানের প্রথম দিনে ২৮টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হয়।
অভিযান পরিচালনার সময় পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান, পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মামুনুর রশীদ, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
লক্ষ্মীপুর:
দুপুরে সদর উপজেলার জকসিন বাজারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় খাল দখল করে সড়কের পাশে গড়ে উঠা অবৈধ ৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুমন দে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুনুর রশিদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চাঁদপুর:
চাঁদপুর সদরের পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন লেক থেকে ১৫টি ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার সিআইপি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালের পাশে থাকা ২২৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে অভিযান শুরু হয়।
অভিযানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চাঁদপুর সড়ক বিভাগ ও জেলা পুলিশ সহযোগিতা করে।
এসময় জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রফিক উল্যাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোশারফ হোসেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবিদা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় জি কে খালের পাশে গড়ে উঠা দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকে অভিযান শুরু হয়।
এসময় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, জি কে খালের পাশে ২৮৪ জন অবৈধ দখলদার আছে। এখন পর্যন্ত দুইশর ওপরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকি গুলো পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।
তিনি বলেন, নদী ও খালের পানি প্রবাহকে চলমান রাখতেই নদীর পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বাকি অবৈধ স্থাপনা গুলো পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানান, জি,কে খালের পাশে ২৮৪ জন অবৈধ দখলদার আছে। নদী খালের পানি প্রবাহকে চলমান রাখতেই নদীর পাশে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
নোয়াখালী:
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন ছোট-বড় খালের পাড়ে ১৫০০ একর সম্পত্তি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। এ সম্পত্তিতে প্রায় ১৩০০ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত জেলা সদরের মন্নান নগর চৌরাস্তা এলাকায় তিন শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. জাকারিয়ার নেতেৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সহযোগিতা করে।
এছাড়াও ভোলা, পঞ্চগড় সদর উপজেলা, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও নেত্রকোনা জেলা শহরে এ অভিযান চালানো হয়।