বৃষ্টি থাকবে আরও ৩ দিন, আসছে হাড় কাঁপানো শীত
পৌষের শুরুতেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জেঁকে বসে শীত। বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহে স্থবির হয়ে যায় জনজীবন। মাঝে মাঝে মেঘকে সরিয়ে উঁকি দিলেও দীর্ঘ সময় ধরে দেখা মেলেনি সূর্যের। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ বেশ কয়েকটি জেলায় শীতের দাপটও ছিল বেশ। এসব জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠা-নামা করেছে। এছাড়া ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠা-নামা করছে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হয়েছে।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। মাঝেমধ্যে আকাশ মেঘলা থাকলেও সূর্যের দাপট ছিল বেশ। কিছুটা কমেছিল ঠান্ডার প্রকোপও। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া শুক্রবার ভোরে রাজধানীতে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষদের। দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও বিকেল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। ঠান্ডা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচা রাস্তাগুলো কর্দমাক্ত হয়ে গেছে।
শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঢাকায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঢাকায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সারাদেশে কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে আগামী শনিবারও বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আগামী সোমবার (৬ জানুয়ারি) থেকে সারাদেশে বৃষ্টির প্রবণতা কমে যেতে পারে। এ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। ঘন কুয়াশাও পড়তে পারে। তাপমাত্রা ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোববার থেকে দেশের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। কয়েকদিন পর আবারও স্বাভাবিক হতে পারে। তবে চলতি মাসে শেষের দিকে দেশের ওপর দিয়ে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এতে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।’
এদিকে শীত মৌসুমে হঠাৎ বৃষ্টি নামায় খুশি কৃষকরা। তারা বলছেন, এখন নতুন করে পেঁয়াজ লাগানোর সময় এসেছে। তাই জমিও প্রস্তুত করতে হবে। এ সময় পানি সেচের প্রয়োজন পড়ে। তবে বৃষ্টির কারণে আর সেচ দেওয়া লাগছে না। অন্যদিকে গম ও সরিষার জন্য এই বৃষ্টি উপকারী।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃঞ্চ দাস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আশা করছি এই বৃষ্টি কৃষকের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। তবে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষিদের জন্য কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। কারণ মুড়ি কাটা পেঁয়াজ তারা বৃষ্টির কারণে আপাতত ঘরে তুলতে পারবে না। পেঁয়াজ ঘরে তোলার জন্য তাদের আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। ঢাকায় বাতাসের গতি পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৮-১৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে।