চট্টগ্রামে গরম কাপড়ের জহুর হকার্স মার্কেট
শহরের নাসিরাবাদ এলাকা থেকে সপরিবারে এসেছেন মীর্জা শফিকুর রহমান। সবার জন্য পছন্দসই গরম কাপড় কিনবেন তিনি। বললেন, 'আরও শৈত্যপ্রবাহ আসবে বলে শোনা যাচ্ছে, তাই প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
মীর্জা পরিবারের মতো বহু মানুষ ভিড় করেছেন দেশের সর্ববৃহৎ গরম কাপড়ের জহুর হকার্স মার্কেটে। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানের পশ্চিমে, কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাদদেশে জহুর হকার্স মার্কেটের অবস্থান।
চট্টগ্রামের যেকোনো মানুষের কাছে অতি পরিচিত নাম জহুর মার্কেট। শুধু চট্টগ্রাম অঞ্চলেই নয়, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গরম কাপড়ের পাইকারি ও খুচরা মার্কেট হিসেবে ঐতিহ্য রয়েছে এই মার্কেটের। এক সময় বিদেশি পুরনো কাপড়ের কারণে নাম ছিল 'টাল মার্কেট', 'নিক্সন মার্কেট'। কেউ কেউ বলতো 'নিলাম মার্কেট'। কারণ জাহাজ থেকে পুরনো কাপড়ের গাইট এলে এখানে প্রকাশ্যে নিলাম হতো।
পুরনো কাপড়ের রমরমা এখন আর নেই। এখন দেশি-বিদেশি গার্মেন্টস পোষাকের চাহিদা ও সরবরাহ বেড়েছে। রিজেক্ট আইটেমগুলোর বড় বড় চালান চলে আসে এখানে। জমজমাট বাজার থেকে বেছে বেছে পোষাক কিনতে পারে লেকজন।
সাধারণ নাগরিক থেকে গাড়ি, মোটর সাইকেলেও অসংখ্য অভিজাত ক্রেতা ভিড় করেন এখানে। সাশ্রয়ী দামে পছন্দের গরম কাপড়ের জন্য প্রসিদ্ধ এই মার্কেটে এলে এক জায়গায় সব ধরনের ও সব বয়সের পোষাক পাওয়া যায়।
পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় দোকান রয়েছে মার্কেটের ভেতরে একাধিক গলি, উপগলিতে। জামা, প্যান্ট, সুয়েটার, কার্ডিগান, ব্লেজার ইত্যাদি যাবতীয় আইটেম পাওয়া যাচ্ছে। ছোট-বড় সব বয়সে মানুষের চাহিদার জোগান দিতে থরে থরে সাজানো আছে নানা ধরনের পোষাক সামগ্রী।
চট্টগ্রামের জহুর হকার্স মার্কেটে তিন ক্যাটাগরির দোকান আছে। কিছু দোকানে বাছাই করা মালামাল পাওয়া যায়। সুন্দর ডেকোরেশনের এইসব এসি দোকানে বিদেশে রফতানি করা হয়, এমন উৎকৃষ্ট পোষাক সামগ্রী পাওয়া যায়। এসবের দাম একটু বেশি। তবে নামকরা শপিং মলের চেয়ে কম। অভিজাত বিপনি বিতান যে পোষাক আড়াই হাজার টাকা, সেগুলোই এখানে পনেরো শ টাকায় পাওয়া সম্ভব।
দ্বিতীয় ধরনের দোকানে ভাল ও মাঝারি মানে মিশ্র মালামাল রয়েছে। মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এসব দোকানে বেশি আসেন। ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেনাকাটা করা যায় এখানে।
তৃতীয় ধরনের দোকানগুলো খোলা ফুটপাতে। বাছাই বিহীন ও গড় মালামাল এখানে পাওয়া যাচ্ছে অতি অল্প দামে। ৫০ বা ১০০ টাকার নির্ধারিত মূল্যে এখানে নানা ডিজাইনের পোষাক বিক্রি হয় দামাদামি ছাড়া। হাতে সময় থাকলে অনেকে এখান থেকে খুঁজে খুঁজে ভালো পোষাক কেনেন।
মাঘের শুরুতে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত চট্টগ্রামের জহুর হকার্স মার্কেট। শীত চলে যাওয়ার আগে আবার হানতে পারে প্রবল শৈত্যপ্রবাহের ছোবল, এই আশঙ্কা থেকে লোকজন সংগ্রহ করছেন তীব্র শীত সহনীয় পোষাক।
জহুর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, এখন তাদের ভরা সিজন। শীত মৌসুমেই তাদের মূল ব্যবসা হয়। বছরের অন্য সময়ে ব্যবসা একটু কমলেও সারা বছরই এখানে কেনাবেচা চলে।
চট্টগ্রামের শীত পোষাক ও বাহারি গরম কাপড়ের ঐতিহ্যবাহী জহুর হকার্স মার্কেট নগর কাঠামোর উল্লেখযোগ্য আইকনে পরিণত হয়েছে।