বসন্তে ভালোবাসায় মেতেছে রাজধানীবাসী
ফাগুন হাওয়ায় দোল লেগেছে বাংলার প্রকৃতিতে। বইছে দক্ষিণা বাতাশ, শীতের ঝরাপাতা মারিয়ে গাছে গাছে দোল খাচ্ছে নতুন পাতা, ডালে ডালে কোকিলের কুহু কুহ ডাক, ফুলের ঘ্রাণ জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমন বার্তা।
মাঘ শেষে আজ ফাল্গুনের প্রথম দিন। পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। শুক্রবার হওয়াতে আজ ছুটির দিন। উৎসব প্রিয় বাঙালির সব চাওয়া যেনও এক সঙ্গে ধরা দিয়েছে।
ইট-পাথর, গাড়ির যান্ত্রিক নগরীতে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত, বসন্ত এসেছে। নাগরিক ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে নগরবাসী মেতেছে ভালোবাসা দিবস আর বসন্ত বরণ উৎসবে।
ধানমন্ডি, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, ফ্রামগেট, কারওয়ানবাজার, পল্টন, ঘুরে দেখা যায় আগুনরাঙা বসন্তকে বরণ করে নিতে বাসন্তী সাজে সেজেছে প্রাণের নগরী। রাজধানীর লেকগুলোতে, রাজপথে, পার্কে, উদ্যানে, রবীন্দ্র সরবর, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, বই মেলায় বাসন্তী বসনে সুসজ্জিত তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। শুধু তরুণ-তরুণী না সব বয়সী মানুষের ঢল নেমেছে বসন্ত বরণে।
কেউ এসেছে প্রিয় মানুষের সাথে, কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে, কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে। স্ত্রী আর বছর তিনেকের সন্তন নিয়ে পুরান ঢাকা থেকে টিএসসিতে ঘুরতে এসেছেন রবিউল ইসলাম।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমন হল। বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিতে ঘুরতে বেড়িয়েছি। সত্যি খুব ভালো লাগছে।
ঘুরতে আসা উৎসব প্রেমি নারীরা নিজেদের বসন্তের সাজে সাজাতে কপালে পরেছে টিপ, খোপায়-গলায়-মাথায় পরেছে গাঁদা ফুলের মালা। পরেছে লাল, হলুদ, কমলা, বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি আর হাতে রেশমি চুড়ি। কেউ কেউ পরেছে নীল শাড়ি। পুরুষের গায়ে শোভা পেয়েছে রঙিন পাঞ্জাবি, ফতুয়া। সবার হাতে হাতে দেশি-বিদেশি নানান ফুল।
এদিন ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই রাস্তা-ঘাট কিছুটা ফাঁকা দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কগুলোতে বাড়তে থাকে বসন্তপ্রেমী মানুষের উপস্থিতি। ঘুরতে বের হওয়া মানুষের প্রথম পচ্ছন্দ ছিলো রিকশা।
এদিন ফুলের দোকানগুলোতে ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীর অলিতে-গলিতে, ফুটপাতে, রাস্তার মোড়ে বসেছে অস্থায়ী ফুলের দোকান। তবে দাম বেশ চড়া। অন্যান্য দিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে ফুল বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে বিশেষ দিনের কারণে দামের বিষটা গুরুত্ব দিচ্ছে না ক্রেতারা। প্রিয় মানুষকে পছন্দের ফুল দিতে পেরেই আনন্দ পাচ্ছেন তারা। আবার প্রিয় মানুষের কাছে থেকে ফুল পেয়ে আত্মহারা হচ্ছেন কেউ কেউ।
আজ বই মেলার দ্বার খুলেছে নির্ধারিত সময়ের পাঁচঘণ্টা আগে। সকাল ১০টায় বইমেলার দ্বার খুললেও সকাল ৯টা থেকেই মেলায় প্রবেশপথে ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় ঢুকছেন বইপ্রেমীরা। বসন্ত বরণ আর ভালোবাসা দিবস উদযাপনের অংশ হিসাবে বই মেলায় আসছেন তারা।
তবে দুই উৎসব একই দিনে পড়ায় মনোক্ষুণ্ন অনেকে। তারা বলছেন বাঙালিরা বরাবরই উৎসব প্রিয়। দুই উৎসব একই দিনে পড়ায় আরো একটি দিন আনন্দ করা থেকে কিছুটা বঞ্চিত হলাম।
এবারও রাজধানীর মোট চারটি স্থানে বসন্ত উদযাপন করছে জাতীয় বসন্ত উৎসব পরিষদ। উত্তরা রবীন্দ্র স্মরণী মুক্তমঞ্চ, ধানমন্ডি লেকের রবিন্দ্র সরবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায়, বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস মঞ্চ।