উত্তরের সীমান্তে হত্যা-ধরপাকড় বন্ধে বিএসএফ’র প্রতিশ্রুতি
পদ্মায় ইলিশ শিকারকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে গেল বছরের ১৭ অক্টোবর বিজিবি-বিএসএফ গুলি বিনিময়ে এক বিএসএফ সদস্য নিহত হয়। ঘটনার পর থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করে বিএসএফ। বিজিবিও পাল্টা নজরদারি বসিয়েছে সীমান্তে। ফলে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পর থেকে বিজিবি চেষ্টা করছিল দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হোক। গত ২১ জানুয়ারি শিবগঞ্জের শিংনগর সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সম্পর্ক সুদৃঢ় এবং সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। তবে সেই প্রতিশ্রুতির পরও থামছেই না সীমান্ত হত্যাকাণ্ড।
ঠিক সেই মূহুর্তে দ্বিতীয় দফায় রাজশাহী সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক থেকে দ্বিতীয় দফায় সীমান্তে হত্যা বন্ধের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএসএফ।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সোনাইকান্দি বিওপির ওপারে পদ্মার চরে বিএসএফ’র আয়োজনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিএসএফের বহরমপুর সেক্টরের ডিআইজি কুনাল মজুমদারের নেতৃত্বে ৩৫ ব্যাটেলিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন। আর বিজিবি’র পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন রাজশাহী সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল তুহিন মাসুদ।
বৈঠকে রাজশাহী অঞ্চলে বিএসএফ’র গুলিতে হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বলে বিএসএফ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, গেল একমাসে নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৯ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
বৈঠকে গত ৩১ জানুয়ারি পবা উপজেলার সোনাইকান্দি বিওপি এলাকার পদ্মা থেকে ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা করা হয়। বিএসএফ কমান্ডারকে বিজিবি কমান্ডার জানান, বাংলাদেশের ভেতরে পদ্মা নদীতে স্পীডবোট করে তেড়ে এসে তাদের ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার ফুটেজও দেখানো হয় বিএসএফকে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে জানান, বিএসএফ কর্মকর্তাদের কাছে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি- আইন অনুযায়ী কেউ ভুল করে ভারতীয় সীমানায় অনুপ্রবেশ করলে রেওয়াজ অনুযায়ী পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবির কাছে হস্তান্তরের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা হোক।
জবাবে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিএসএফ কমান্ডার কুনাল মজুমদার। বৈঠকে তিনি বিজিবি কর্মকর্তাদের বলেন, গরু চোরাকারবারিরা বিএসএফের বাধা উপেক্ষা করে ভারতে ঢুকে পড়ে। অনেক সময় জওয়ানদের ওপর হামলাও করে তারা। তখন বাধ্য হয়ে গুলি চালানো হয়। তবে আগামীতে বিএসএফ রাজশাহী ও রংপুরের সীমান্তে হত্যা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বিজিবি-১ ব্যাটালিয়ন সূত্র জানিয়েছে, বিজিবি চেষ্টা করছিল দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সম্প্রতি সীমান্তের উত্তেজনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। এ লক্ষ্যে গত ২১ জানুয়ারি শিবগঞ্জের শিংনগর সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সম্পর্ক সুদৃঢ় এবং সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ।
তবে ঘটনার পরদিন ২২ জানুয়ারি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা সীমান্তে ফের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিএসএফ’র গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হন। এর ঠিক পরের দিন ২৩ জানুয়ারি নওগাঁর পোরশা উপজেলার দুয়ারপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে তিনজন নিহত এবং আরও তিনজন আহত হন।
সবমিলিয়ে জানুয়ারি মাসেই উত্তরের সীমান্তে ৯ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশে ঢুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১২ জনকে। নিয়ম অনুযায়ী তাদের ফেরত না দিয়ে উল্টো মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে বিএসএফ।