বরিশালে বাড়ছে ডিজিটাল ব্যানার-সাইনবোর্ডের দাম
কাগজের পোস্টার ছাঁপা, কাপড় ও প্লেন শিট টিনের ওপর রঙের লেখা ব্যানার আর সাইনবোর্ডের জায়গা দখল করেছে ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রিন্ট ব্যানার-সাইনবোর্ড। বরিশালে প্রায় এক যুগ আগে ডিজিটাল প্রিন্টের কাজ শুরু হয়। শুরুতে প্রতি বর্গফুট পিভিসির প্রিন্ট মূল্য ছিলো ২০/২৫ টাকা ধরে। মাঝখানে মিডিয়ার সরবরাহ বেশি থাকায় এর দাম কমে প্রতি বর্গফুট পিভিসি প্রিন্ট দেয়া হত ১২/১৫ টাকায়। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন কারণে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও বাড়ছে ব্যানার-সাইনবোর্ড প্রিন্ট করার ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রীর দাম।
জানা গেছে, একযুগ আগে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে দুই একটি প্রিন্টিং মেশিন ছিল। পরে দিনে দিনে মানুষ ডিজিটাল ব্যানার-সাইনবোর্ডের প্রতি ঝুঁকে পড়ায় চাহিদার সঙ্গে বেড়েছে এসব প্রিন্টিং মেশিনের সংখ্যা। বরিশাল নগরীতে এখন প্রায় ১৩/১৪টি মেশিনে গড়ে প্রতিদিন চার/পাঁচ হাজার বর্গফুট পিভিসিতে ব্যানার-সাইনবোর্ড প্রিন্ট বের হচ্ছে। এছাড়াও প্রিন্ট হচ্ছে ভিনাইল,প্যানাপ্লেক্স, ফসটেড ও ইনজেক্ট মিডিয়ায়।
ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর বড়দিন উপলক্ষে জানুয়ারি মাসব্যাপী বার্ষিক ছুটি থাকায় সেখানে সকল ধরনের উৎপাদন, ফ্যাক্টরি ও কল-কারখানা বন্ধ থাকে। পরে ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় এর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও সম্প্রতি চীনে নোভেল করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী উৎপাদন, ফ্যাক্টরি ও এলসি বন্ধ হয়ে যায়। এতে চীন থেকে বাংলাদেশে ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে দেশে পূর্বের সীমিত মজুদ করা ডিজিটাল মিডিয়া সরবরাহ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছেন। তারপর আবার ডিজিটাল মিডিয়ার সৃজন (ডিসেম্বর-এপ্রিল) ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যানার প্রিন্ট কাজে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বর্তমানে পিভিসির ১০ ফুটের প্রতি রোল ৮/৯ হাজার টাকার পরির্বতে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪/১৫ হাজার টাকায়। একইহারে দাম বেড়েছে প্রতি ৪/৫ ফুটের ভিনাইল (স্টিকার) ৬/৭ হাজার টাকার রোল বিক্রি হচ্ছে ৯/১০ হাজার টাকায়। ফলে পিভিসি প্রতিবর্গ ফুট ১৮/২০ টাকায় প্রিন্ট দেয়া হচ্ছে।
ব্যানার করতে আসা আবু মুসা বার্তা২৪.কমকে বলেন, যে পিভিসি ১৩/১৪ টাকায় প্রিন্ট করত তা এখন ১৮ টাকায় করা লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক কাস্টমার কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
অ্যাপেল মিডিয়া সাইন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোঃ মাসুদ রানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ব্যবসার শুরুতে ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রিন্ট করে মোটামুটি ভালো ব্যবসা হতো। কিন্তু এখন বিভিন্ন কারণে এসব সামগ্রীর দাম দিনে দিনে বেড়েই চলছে। সর্বশেষ দাম বেড়েছে চীনে নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশ থেকে চীনে সকল পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধের কারণে। দাম বাড়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে পুরোনো কাস্টমারের কাছে প্রতি বর্গফুটে ২/৩ টাকা লোকসান দিয়ে ব্যবসা করা লাগছে। লোকসান জেনেও ব্যবসার ভবিষতের দিক তাকিয়ে এমনটাই করা হচ্ছে। দ্রুত পিভিসি, ভিনাইল, প্যানাসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম না কমালে আর রফতানি দ্রুত শুরু না হলে এই ব্যবসায় চরম ক্ষতি হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মিডিয়া জোনের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ফেরদাউস জামান মামুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবসাটি পুরোপুরি চায়না পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। সম্পতি চীনে চলমান নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রামণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চীন থেকে বাংলাদেশে ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী আমদানি বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশে পূর্বে ডিজিটাল মিডিয়া সামগ্রী মজুদ করা ছিলো তা দিয়েই এখন বেশি দামে প্রিন্ট চলছে। চীন থেকে দেশে ডিজিটাল মিডিয়া পণ্য আমদানি শুরু না হলে যেকোনো সময় স্টক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই সুযোগে আমদানিকারক একটি সিন্ডিকেট তাদের ইচ্ছে মতো মিডিয়ার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। যার প্রভাব পড়ছে বরিশালেও। শ্রীর্ঘই এর সমাধান না হলে সামনে মুজিব বর্ষে ব্যানার তৈরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।