১০ দফা দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমাবেশ
যৌন নিপীড়ন ও ভয়মুক্ত কাজের পরিবেশ, অটোমেশনের কারণে ছাঁটাই বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে সমাবেশ ও র্যালি করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।
শুক্রবার (৬ মার্চ) বিকেল ৪টায় আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস উপলক্ষে সমাবেশ ও সমাবেশ শেষে র্যালির আয়োজন করে সংগঠনটি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামা এবং নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, নারী সংহতি মান্দাইলের অন্যতম নেতা লিপি আক্তার ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতা ফাতেমা রহমান বিথী।
এছাড়াও স্থানীয়ভাবে বক্তব্য দেন, সহিদা সুলতানা, সাভার থানা কমিটির সম্পাদক সেলিনা আক্তার, থানা কমিটির সংগঠক রূপালী আক্তার, রাহেলা বেগম, শিল্পী রানি প্রমুখ।
তাসলিমা আখ্তার তার বক্তৃতায় বলেন, পত্রপত্রিকা এবং টিভিতে যেভাবে নারী দিবস পালন হয়, বিশেষভাবে মধ্যবিত্ত নারীর সাফল্যগাঁথা সামনে আসে, তাতে আসল ইতিহাস আড়ালে পড়ে। যে নারী পোশাক শ্রমিকরা ১৮৫৭ এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল তারাই বিস্মৃত হয়।
উল্লেখ্য, আটলান্টিকের ওপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরাই নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশ ও শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে। তাদের ওপর হামলা নির্যাতন ও গ্রেফতার নেমে আসে। এই আন্দোলনে পরের সালগুলোতে শ্রমিকরা কারখানার দাবির সাথে যুক্ত করে নারীর ভোটাধিকারের দাবি। ১৯০৯ সালে নিউইয়র্কে নারী দিবস পালন হয়।
এরই ধারাবহিকতায় ১৯১০ সালে কোপেন হেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন দুনিয়াব্যাপী নারীর সংগ্রাম এবং আন্দোলনের দিন হিসাবে দিবসটি পালনের আহবান জানান। এরপর থেকে নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
তাসলিমা আখ্তার বলেন, আজ এই একবিংশ শতকে যখন সারা দুনিয়ায় প্রযুক্তি এগুচ্ছে তখন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অন্যতম কারিগর নারী শ্রমিকদের দুর্ভোগ কমছে না। কম মজুরি কম পুষ্টির শ্রমিকরা প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন এবং সংগঠন করার অধিকারতো পাচ্ছেই না, বাড়ছে যৌননিপীড়ন ও নিরাপত্তাহীনতা। কারখানার ভেতর টার্গেট পূরণের জন্য অকথ্য ভাষায় শ্রমিকদের গালাগালি যৌন নিপীড়নেরই আওতাভুক্ত। এর বাইরে নানা ধরনের যৌন নিপীড়নের ভয়াবহতার খবর গবেষণায় উঠে আসছে। বিজিএমইএ সকল কারখানায় যৌননিপীড়ন প্রতিরোধে কমিটি আছে বলে দাবি করলেও এর কোন কার্যকর অস্তিত্ব শ্রমিকদের জানা নেই।
তিনি বলেন, কারখানার ভেতরে বাইরে কোথাও-ই নারী নিরাপদ নয়, যার নজির আশুলিয়া এবং কাফরুলে নিজ ঘরে শ্রমিকের গণধর্ষণ হওয়ার ঘটনায় টের পাওয়া যায়।
অবিলম্বে সকল কারখানায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী কার্যকর সেল গঠন করার দাবি জানান শ্রমিক নেতা তাসলিমা আখ্তার। একই সাথে নারীর নিরাপত্তায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতৃবৃন্দ পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের যৌন নিপীড়ন, ছাঁটাইয়ের পরিবর্তে প্রশিক্ষণ এবং নারী-পুরুষ শ্রমিকের পুষ্টি ও প্রাণ রক্ষার আন্দোলনে শ্রমিকদের আহ্বান জানান। এবং নিম্নোক্ত ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন—
১. সকল কারখানায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী কার্যকর সেল গঠন করতে হবে।
২. টার্গেটের দোহাইয়ে বা কোন অযুহাতে শ্রমিকদের অকথ্য গালাগালি বা নির্যাতন করা চলবে না।
৩. সকল কারখানায় সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও শ্রমিকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. কোন কারখানায় জবরদস্তিমূলক ওভার টাইম বা নাইট করানো যাবে না। ওভার টাইম বা নাইট না করলে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।
৫. শ্রমিকদের মেডিকেল লিভসহ প্রয়োজনীয় ছুটি দিতে হবে।
৬. অটোমেশনের কারণে ছাঁটাই নয়, ট্রেনিং ও নারী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
৭. সকল কারখানায় কার্যকর ডে কেয়ার থাকতে হবে।
৮. রাষ্ট্রীয় ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কম খরচে রন্ধনশালা, ক্যান্টিন ও লন্ড্রি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৯. কোন কারখানায় কেউ অসুস্থ হলে বা মারা গেলে তার যথাযথ তদন্ত করতে হবে এবং একজীবনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
১০. বাঁচার মতো মজুরি, প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন ও সংগঠন করার অধিকার কার্যকর থাকতে হবে।