পদ্মার জলরাশিতে নববধূকে খুঁজছেন স্বামী
সুইটি খাতুন পূর্ণিকে বধূ বেশে একদিন আগে নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান রুমন। কথা ছিল পরদিন শুক্রবার (৬ মার্চ) বৌভাত শেষে নববধূকে নিয়ে ফিরবেন শ্বশুরালয়ে। কিন্তু তাদের আর ফেরা হলো না। পথে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন সুইটি।
এদিকে ওই নৌকা ডুবির ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রুমন। তবে কিছুটা সুস্থ হয়েই ছুটে গেছেন পদ্মার পাড়ে। নৌকায় উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে বিস্তীর্ণ জলরাশিতে খুঁজে ফিরছেন নববধূ সুইটিকে। হোক না নিথর দেহ, তবুও আরও একবার দেখতে চান স্ত্রীর মুখ। যার সঙ্গে একদিনের সংসারে জমেছে বহু মায়া।
জানা গেছে, শুক্রবার (৬ মার্চ) ওই দুর্ঘটনার পর পাশে বালু তোলা ড্রেজারে উঠে প্রাণ বাঁচান রুমন। দুর্ঘটনার কবলে পড়ার সময় স্ত্রী সুইটি ছিল তার বোনদের সঙ্গে নৌকার একপাশে। অপরপাশে ছিলেন রুমন। চোখের ইশারায় হয়তো চলছিল নবদম্পতির খুনসুটি। যা মুহূর্তেই রূপ নিয়েছে আহাজারি আর আর্তনাদে।
দুপুর থেকে নৌকায় উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গেই রয়েছেন রুমন। সেখানে নৌকায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আর সুইটি একই নৌকায় পাশাপাশি বসা ছিলাম। বন্ধু ও ভাবিরা আমাদের নিয়ে মজা করছিল। কিছুটা লজ্জায় আমি সেখান থেকে সরে নৌকার অপরপাশে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আর ও (সুইটি) ছিল বোনদের সঙ্গে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কী যে হয়ে গেল! কোথায় গেল ও (সুইটি)। যদি শুনতাম ও বেঁচে আছে। তবে জানটায় শান্তি পাইতাম।’ পরক্ষণে বাস্তবতায় ফেরেন রুমন। বলেন, ‘আল্লাহ যদি ওরে বাঁচায়ে নাও রাখে, মরদেহটাও যদি পাইতাম। আরেকবার ওরে মনভরে দেখতাম।’
নৌকায় বর রুমনের সঙ্গে ছিলেন শ্যালক সিয়াম। তিনি কনে সুইটির মামাতো ভাই। সিয়াম বলেন, ‘নৌকা খাল থেকে নদীতে নামে ৬টার দিকে। তখন বাতাসের সঙ্গে স্রোতও ছিল। নৌকা কাঁপছিল। হঠাৎ সামনের নৗকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়, পানি উঠতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই নৌকা ডুবতে দেখে আমাদের নৌকা থেকেও চিৎকার করে সবাই। কেউ কেউ নৌকা থেকে পানিতে লাফ দেয়। তখন আমাদের নৌকাও ডুবে যায়।’
হতাহতদের পরিবার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) পদ্মার ওপারে পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের রুমন আলীর (২৬) সঙ্গে এপারের ডাঙেরহাট গ্রামের সুইটির (২০) বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুইটি শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন।
শুক্রবার (৬ মার্চ) কনেপক্ষ বরের বাড়ি থেকে নবদম্পতিকে আনতে যায়। সন্ধ্যার কিছু সময় আগে তারা বরের বাড়ি থেকে বের হয়ে দুটি নৌকায় করে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। পথিমধ্যে নগরীর শ্রীরামপুরের বিপরীতে নদীর মাঝামাঝি স্থানে নৌকা দুটি ডুবে যায়।
এ ঘটনায় শনিবার (৭ মার্চ) বিকেল ৬টা পর্যন্ত নববধূ সুইটিসহ নিখোঁজ রয়েছে ৪ জন। ৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন- কনের ফুপু মনি বেগম (৪২), দুলাভাই রতন আলী (৩২), কনের চাচাতো বোন মরিয়ম (৮) ও এখলাস হোসেন (২২) নামে এক যুবক। বাকি দুইজন বাবা-মেয়ে। তাদের নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।