প্রস্তুতি নেব, আতঙ্ক সৃষ্টি করব না: নরেন্দ্র মোদি
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আমরা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেব, কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টি করব না।
তিনি বলেন, সার্ক অঞ্চলে বিশ্বের পাঁচ ভাগের একভাগ মানুষ বাস করে। তারা সবাই খুব ঘনিষ্ঠভাবে বাস করে। করোনাভাইরাসের প্রাদর্ভাব মোকাবিলায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। ভাইরাস মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুতি নেব, তবে আতঙ্ক সৃষ্টি করব না।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভারত সরকারের নেওয়া সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ভারত ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিয়েছে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, ৬৬টি ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া এ ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সার্কভুক্ত দেশের সরকারপ্রধান ও প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
ভিডিও কনফারেন্সে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি বলেন, আমরা গরিব দেশ, আমাদের একসঙ্গে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে। এ সময় ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান আফগান রাষ্ট্রপতি।
এরপর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহম্মদ সোলি বলেন, একা কোনো দেশ এটিকে মোকাবিলা করতে পারবে না। মালদ্বীপে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে একজনেরও মৃত্যু হয়নি। সবাইকে সঙ্গরোধে (কোয়ারান্টাইনে) রাখা হয়েছে। অনেক মানুষ মালদ্বীপে বেড়াতে আসে। কেউ এসে অসুস্থ বোধ করলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংকট যে কোনো সময়ের চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, মালদ্বীপের অর্থনীতি পর্যটনখাতের ওপর নির্ভরশীল। এই সংকটের ফলে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। চীন ও ইউরোপের পর্যটক না আসায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মালদ্বীপ।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাভায়া রাজাপক্ষে বলেন, আমাদের অনেক মানুষ ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করেন। তাদের দেশে আসতে বাধা দিতে পারি না। তবে তারা এলে বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনে রাখা হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম কমিয়ে আনা হয়েছে। কেউ এখানে মারা যায়নি। তবে কিছু ইতালিয়ান পর্যটকের মারফতে কিছু সংক্রমণ হয়েছে। দেশে জাতীয় টাক্সফোর্স গঠন করা হয়েছে যে কোনো জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নেপালে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।
কনফারেন্সে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেন, ভুটানে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের সবাইকে সঙ্গরোধে (কোয়ারান্টাইনে) রাখা হয়েছে। ভুটানের রাজা সবসময় এ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন। আমাদের সবার জন্য এটি সংকট। কারণ, এই ভাইরাস কোনো ভূগোল মানে না। সবাই মিলে আমাদের সীমাবদ্ধ সম্পদের মধ্য দিয়ে এ সংকট উৎরাতে হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী জাফর মির্জা বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ মানুষ বাস করে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পাকিস্তান সজাগ আছে। আমরা এই সংকটে কোনো প্যানিক সৃষ্টি হতে দেইনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) একাধিক টুইট বার্তায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগ নিতে সার্কের সদস্য দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রোববার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানরা ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।