রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলা, যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠা-নামাসহ বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট দীর্ঘ দিনের যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। ফলে যানজটের নিরসন ঘটিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ’র সদস্যরা।

এরই ধারাবহিকতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গত একদিনে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ১২৪১টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এসব মামলায় আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ৪৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৩২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাত-দিন কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। গতকাল শনিবার (২১ ডিসেম্বর) এক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ১২৪১টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এ সংক্রান্ত মামলায় ৪৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৩২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ডিএমপির এই কর্মকর্তা।

রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনের সমাধান খুঁজতে পুলিশ ও দেশের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরই ধারাবাহিকতায় যারা সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং আইন অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ট্রাফিক সিস্টেম বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনের সমাধান খুঁজতে পুলিশ ও দেশের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দেন তিনি।

জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির মাধ্যমে হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের ফেরত আনতে চায় সরকার।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

এর আগে, গত ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় অভিযুক্ত পলাতক সব আসামিকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে সরকার।

পরে ১২ নভেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা গণহত্যা, গুমসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এবং মামলার আসামি। তবে তিনি পালিয়ে গেছেন এবং বর্তমানে দেশের সীমানার বাইরে অবস্থান করছেন। এরকম একজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মাসিক ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই চিকিৎসা সেবা দেওয়া বন্ধ করে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানান তারা।

রোববার (২২ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ভেতরে দেশের সমস্ত প্রাইভেট পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা অবস্থান নিয়ে এই দাবি জানান। আন্দোলনকারী সকল ডাক্তাররা একত্রিত হলে হাসপাতালের বাহিরে অবস্থান নিবেন বলেও জানানো হয়।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ডাক্তারদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি এবং তার সহযোগী সংগঠন পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যসোসিয়েশন গত ২০২২ সাল থেকেই বেসরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকদের যৌক্তিক দাবি ভাতা বৃদ্ধির জন্য রাজপথে আন্দোলন করে আসছে।

নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা রেখে স্বাস্থ্যখাতের সকল স্টেকহোল্ডার যথাক্রমে বিসিপিএস, বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য শিক্ষা মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সচিব এবং সহকারী স্বাস্থ্য উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সায়েদুর রহমান সহ সকলের সাথে দেখা করি। সবাই ভাতা বৃদ্ধির দাবি কে যৌক্তিক বলেন এবং দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন বলে কথা দেন। ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় নথি যথার্থ ধাপ পার করে অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়। কিন্তু ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে নথিভুক্ত হয়ে পড়ে আছে। আমাদের প্রত্যাশা ক্রমে হতাশায় রূপান্তরিত হয় যখন নজরে আসে ভাতা বৃদ্ধির সেই গুরুত্বপূর্ণ নথিটি অর্থ ছাড়ের জন্য অনুমোদিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেনি। যার প্রতিবাদে গত ১৪ ডিসেম্বর আমরা ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি এর নেতৃত্বে শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করি এবং ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়।

পরদিন ১৫ ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস থেকে দুজন মুখপাত্র ডা. জাবির হোসেন এবং ডা. তানভীর আহমেদ, নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে ডা. আহাদ এবং ডা. আশরাফ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সারজিস আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে মিটিং করা হয়। আশ্বস্ত করা হয় সেদিনই এই নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অথচ আজ ২২ ডিসেম্বর এখন পর্যন্ত ভাতা বৃদ্ধির নথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়নি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গত স্বৈরাচার সরকারও কথা দিয়ে পরবর্তীতে কথা রাখেনি। বাংলাদেশের পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক সমাজ আর আশ্বাসে বিশ্বাস করবে না।

ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির নেতৃত্ব্যে সকল পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক বরাবরের মতো সকল নিয়মতান্ত্রিক ধাপ অতিক্রম করে চিকিৎসকদের অধিকার আদায়ে এবং যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে রাজপথে নামতে বাধ্য হচ্ছে।

দ্রুত ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা না হলে সারাদেশে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকগণের কর্মবিরতি পালন চলমান থাকবে।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ডা. ফিরোজ বলেন, আজ থেকে আমাদের কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কর্মবিরতি চলমান থাকবে।

তিনি বলেন, আমাদের এখন ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও ঠিকমতন আমাদের ভাতা দেয়া হয় না। কারোর পাঁচ মাসের ভাতা বাকি, কারোর সাত মাসের ভাতা বাকি। আমাদের এই যে টাকা ভাতা দেয়া হয় এই টাকা দিয়ে কিভাবে একটা সংসার চালানো সম্ভব। বর্তমান সময়ে একজন মানুষের খেয়ে পড়ে চলতে গেলেই তো ২৫ হাজার টাকা লাগে। আমাদের যে টাকা ভাতা দেয়া হয় সেই তুলনায় অমানবিক পরিশ্রম করা লাগে আমাদের। হাসপাতালের পুরো কাজটাই করে এই ট্রেইনি ডাক্তাররা। সুতরাং সবকিছু বিবেচনা করে সর্বনিম্ন হলেও আমাদের ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেয়া উচিত।

একজন রিকশা চালকের মাসে কিছু না হলেও ৩০ হাজার টাকা রোজগার করতে পারে। কিন্তু ডাক্তাররা পাচ্ছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। তাই আমাদের দাবি আমাদের ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে।

আন্দোলনকারী ডা. মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের দাবির বিষয়ে জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সমন্বয়ক সারজিস তিনি আমাদের দাবির বিষয়ে পজেটিভ। তিনিও কথা বলেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাতানো কাগজপত্র অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেখানে সেগুলো আটকে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্রের অনুমোদন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে গত ১৮ তারিখের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়কে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল। আমাদের এই আন্দোলন অনেক অগে থেকেই চলমান ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময় আমাদের আজকে হচ্ছে কালকে হচ্ছে বলে সময় দিয়ে কালক্ষেপণ করছে। অর্থ মন্ত্রণালয় কালক্ষেপণের প্রতিবাদে ও দ্রুত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করায় আমরা আজ থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। দেশের সমস্ত হাসপাতালের রেসিডেন্স, নন রেসিডেন্স এবং ট্রেইনি ডাক্তার যারা আছে সবাই কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। কেউ হাসপাতালে না গিয়ে সরাসরি আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন।

দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে যারা রেসিডেন্স, নন রেসিডেন্স এবং ট্রেইনি ডাক্তার আছে তাদের মূলত বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। এই টাকায় বর্তমান সময়ে কিছুই হয় না। যার কারণে আমরা ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে একত্রিত হয়েছি। অনেকদিন ধরে আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার, ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা ভাতা করা হয়েছে। আমরা আন্দোলন করলে দেখা যায় কয়েক বছর পর ২/৩/৪ হাজার টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আসলে ঢাকা শহরে থাকতে গেলে এই টাকায় কিছুই হয়না। তাই এবার আমাদের দাবি আদায়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করা হচ্ছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি ও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩০ কোটি ডলার পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকালে দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ ও মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১৭ ডিসেম্বর থেকে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে কাজ শুরু হয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, বেপজাসহ ৯টি প্রকল্পে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।