‘মাছো কি করোনার ছুটিত গেইচে বাহে’
কথায় আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু গরীবের বেলায়ও কি তাই? এমন প্রশ্নটা জুড়ে দিলেন কাশেম আলী। করোনার দিনগুলোতেও থেমে নেই তার মাছ ধরা। বার বার জাল ছুড়লেও ধরা পড়ছে না মাছ। চোখে মুখে হতাশার সঙ্গে যেন মাছের প্রতি ক্ষোভ।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে রংপুর নগরীর খোকশা ঘাঘট নদীর পাড়ে মাছ ধরতে দেয়া যায় বৃদ্ধ কাশেম আলীকে।
একটু নিরাপদ দূরত্ব থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হলো- কী খবর, কতগুলো মাছ ধরা পড়লো? উত্তরে বললেন, ‘বাহে তামান দ্যাশোত ছুটি। মাইনষে বাইরোত বাইর হওচে না। কিন্তু মোরতো ঘরোত চাউল, ডাইল কিছুই নাই। প্যাটের ভোক (ক্ষুধা) তো করোনা মানে না। এপাকে বাইরোত ব্যারেয়া নদীত মাছো নাই। মনে হয়, মাছো করোনার ছুটিত গেইচে বাহে।’
কাশেম আলী জানালেন, পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। দুই ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তারা আলাদা থাকেন। বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে কোন রকমে দিনযাপন করছেন। আগে মাছ ধরে হাটে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালালেও বর্তমানে নদী, খালে-বিলে মাছ না থাকায় দুর্দিন চলছে তার।
করোনার সংক্রমণ রোধে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে একদিন ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান এই বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘মাছ ধরি, লেবারি করি সংসার চলে। কিন্তুক এ্যালা করোনার ভয়োত মাইনষে কামোতো নেয় না। একদিন কাম (কাজ) না পাইলে উপাস থাকা নাগে। সোগ কাম-কাজ বন্দো হয়া গেইছে। এ্যালাও কায়ওতো কিছু দেয় নাই।’
কাশেম আলীর মতো রংপুরের অসংখ্য দিনমজুর আর শ্রমজীবী মানুষের কপালে দুর্ভোগ আর দুর্দিনের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে মহামারি করোনার প্রভাবে। বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, খোকশা, করতোয়া, যমুনেশ্বরী নদী বিধৌত রংপুরের চরাঞ্চলগুলোতে নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছেন শ্রমজীবী ও দিনমজুর মানুষরা। কষ্টের কষাঘাতে হতাশ জেলে পরিবারগুলোও।
এদিকে এসব শ্রমজীবী, অসহায় ও দিনমজুর মানুষের জন্য সরকারি, বেসরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হলে অনেকের হাতেই এখনো পৌঁছায়নি কোনো খাদ্যসামগ্রী।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, রংপুর নগরীতে ১০ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ শ্রমজীবী। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানা যায়, জেলার আট উপজেলায় শ্রমজীবী, দিনমজুর পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা দেবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে রংপুর জেলায় ১৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় ৩০০ মেট্রিক টন চাল এবং চার লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।