কিসের সামাজিক দূরত্ব! কিসের কী! চিরচেনা ছন্দেই ফিরেছে সাভার!



জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই কর্মস্থলে ফিরছেন অনেকে, ছবি: বার্তা২৪.কম

গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই কর্মস্থলে ফিরছেন অনেকে, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সকাল না হতেই আফরোজা বেগম খাবারের বাটি নিয়ে বেরিয়েছিলেন কর্মস্থলের উদ্দেশে। টেলিভিশনে দেখেছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা। ছুটির সময়টায় বাসাতেও সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন বারবার হাত ধুয়ে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে। যথাসম্ভব সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখতে চেষ্টা করেছেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে।

তবে রোববার (৫ এপ্রিল) সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হতেই খটকা লাগে আফরোজার। গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। গিজগিজে মানুষের ভিড়ে গায়ে গায়ে ধাক্কা লেগেছে অনেকের সাথে। বাসেও গাদাগাদি করে পুরনো অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যেতে হয়েছে কর্মস্থলে।

গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই কর্মস্থলে ফিরছেন অনেকে, ছবি: বার্তা২৪.কম

কেবল আফরোজা বেগম একা নন, তার মতো অনেককেই এ দৃশ্য দেখতে হয়েছে সাভারে। রোববার সকালে শহরের চেহারাটাই ছিল চিরচেনা। মনে হয়েছে কার্যত অঘোষিত লকডাউন ছেড়ে মুক্ত হয়েছে সাভার। পুরনো ছন্দে চলছিল যানবাহন। সড়কে গিজগিজে ভিড় ছিল তৈরি পোশাক শ্রমিকদের।

যে কারণে নোভেল করানোভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যেই সাভার ও আশুলিয়ায় ভেঙে পড়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থাপনা।

রোববার পূর্ব ঘোষণা দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা তাদের কারখানা খুলে দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত অধিকাংশ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলেও সাভারে কীভাবে পোশাক কারখানা চালু হলো, সে ব্যাপারেও কোনো হিসেব মেলাতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

কারখানায় ঢুকছেন শ্রমিকরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

এভাবে হাজার হাজার শ্রমিক একযোগে ঘর থেকে বেরিয়ে আসায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডক্টর আনোয়ারুল কাদির নাজিম নামের একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

তার মতে এমন পরিস্থিতি “বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর” মতো এতদিন কোনো মতে বজায় রাখা প্রচেষ্টাকে বিনষ্ট করে দিয়েছে।

যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কার নির্দেশে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো আবার খুলে দেয়া হলো সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি শিল্প মালিকরা।

সকাল থেকেই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে হাজার হাজার মানুষের বিচরণ দেখা যায়।

এদের অধিকাংশ ছিলেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক।

কারখানায় ঢুকছেন শ্রমিকরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

হাজার হাজার শ্রমিকের পদচারণার কারণে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে দেখা যায় সাভার ও আশুলিয়ার নগর জীবনে।

ব্যস্ততম ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দেখা গেছে অসংখ্য যানবাহন।

এসব যানবাহনে গাদাগাদি করে শ্রমিকরা কারখানা অভিমুখে রওনা হওয়ায় জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ঘরে থাকা মানুষদের মাঝে। কেউবা গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলের পথ ধরেছেন। সেখানেও দেখা গেছে গিজগিজে মানুষের ভিড়।

করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে বিভিন্ন পোশাক কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়ায় শ্রমিকদের বাড়ি থেকে বের করার ফলে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে
এবং মানুষকে ঘরে থাকার সরকারি আহ্বান কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

যে কারণে সকাল থেকেই সাভার এবং আশুলিয়ায় আইন অমান্য করার ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ৪ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হলেও অধিকাংশ শিল্প কারখানা খুলে দেয়ায় অঘোষিত লকডাউন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

যোগাযোগ করা হলে শিল্প-পুলিশের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিল্প মালিকরা কারখানা খোলা রেখেছেন। হাজার হাজার শ্রমিক কারখানার উদ্দেশে পথে নেমেছেন। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।

এদিকে সমগ্র বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে নাগরিকদের অনেককে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থাপনা আরও কঠোর করতে সাভারে সকাল ৭টা থেকে ১০টার পর নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যে যেভাবে পারছেন কর্মস্থলে ফিরছেন, ছবি: বার্তা২৪.কম

অত সকালে কি দোকান খোলে? পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা বাজার নিয়ে এসে তা সাজাতে সাজাতে বেজে যায় ১০টা।

এ সময়সীমা ঘোষণায় নাগরিক বিড়ম্বনা যেখানে চরমে উঠেছে সেখানে তৈরি পোশাক কারখানার হাজার হাজার শ্রমিকের ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়াকে এক রকম প্রহসন বলেই মনে করছেন সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলা সাধারণ নাগরিকরা।

গাড়ির অপেক্ষায় অনেকে, ছবি: বার্তা২৪.কম

সরকারি সব আইন কি তাহলে আমাদের সাধারণ নাগরিকদের জন্য- এমন প্রশ্ন তুলে ফেসবুকে জামাল উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, কোন সাহসে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেয়া হলো? এভাবে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ার দায় কে নেবে?

জানি এর কোনো উত্তর নেই।

   

হিট অ্যালার্টেও স্কুল খুলল, গরমের ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা



রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
হিট অ্যালার্টেও স্কুল খুলল, গরমের ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

হিট অ্যালার্টেও স্কুল খুলল, গরমের ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদ ও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এক মাসের বেশি ছুটির পর আবারও খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে পাঠদান। পাঠদানের সময় সুচি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে নতুন সময়। তবে সে সময়েও তীব্র গরমের ঝুঁকিতে শিক্ষাথীরা।

অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত রুটিন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবে নতুন সময়ে অভ্যাস তৈরিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি পড়াশুনার সময় ও প্রাইভেট টিউশনের সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে। এ ছাড়া দেশের তাপ প্রবাহের প্রকোপে সকাল ৯ টার পরই বাইরের তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে যায়। ফলে নতুন সময় অনুযায়ী পাঠদানেও ঝুঁকির বাইরে নয় শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থাই উত্তম বলছেন তারা

ফার্মগেট বটমলী হোম বালিকা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ম্যারানো মেরিন। নিয়মিত সকাল ১০ টায় স্কুলে আসে সে। প্রাত্যহিক অভ্যাস অনুযায়ী সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা ও রেডি হয়ে আসেন। তবে নতুন নিয়মে নিজেকে প্রস্তুত করতে প্রায় ৩৫ মিনিট দেড়ি হয়ে এই শিক্ষার্থীর। স্বাভাবিক ভাবে ঘুম অপূর্ণ থাকায় মাথা ব্যথার সমস্যায় ও পড়েছে বলে জানান মেরিনের মা মেরিনো লিনা।


লিনা বলেন, আমাদের অভ্যাসগত কিছু দিক থাকে যা পরিবর্তন সম্ভব নয়৷ পরিবর্তন করলেও বেশ কিছু জটিলতা থাকে খাপ খেতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বেশি।

তিনি বলেন, সকাল ১০টা হলেই গরম আর সহ্য করা যায় না। বাচ্চাদের রক্ষার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা কোন ভাবেই তাদের উপকারে আসছে না। আবহাওয়া যতটা প্রখর হয়ে উঠেছে তাতে কোন ভাবেই সময় পরিবর্তন করে রক্ষা পাওয়া যাবেনা। এর জন্য অনলাইন ক্লাস চালু করা প্রয়োজন।

নাখাল পাড়া প্রাইমারি স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা আমেনা খাতুন বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাপপ্রবাহ টা বেশি থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির যে কথাটা আমরা বলছি তা ঠেকানোর উপায় তাদের ঘরে রাখা। এ ক্ষেত্রে তাপপ্রবাহ যতদিন থাকে ততদিন তাদের অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থাই শ্রেয় মনে হয় হয় আমাদের।


সিভিল অ্যাভিয়েশন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফ বলেন, সকালে নিয়মিত রুটিনে আমাদের একটা অভ্যাস হয়েছে। যেটা থেকে বের হয়ে নতুন সময় ঠিক রাখতে আজ কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে দুপুরের যে রোদ টা এটা থেকে মুক্তি মেলেনি। দেখছেন শরীর ঘেমে গেছে৷ এখন এমন অবস্থায় আমাদের অনলাইন ক্লাশ হলেই ভালো হতো

সরকারের নতুন সময় অনুযায়ী এক পালায় (শিফটে) পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। আর দুই পালায় বিদ্যালয়গুলোয় প্রথম পালা সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় পালা সকাল পৌনে ১০টা থেকে থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। 

শিফট পরিবর্তন করে কি শিশুদের গরম ও রোদ থেকে রক্ষা সম্ভব কিনা? এ প্রসঙ্গে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র তাপ প্রবাহে সব থেকে ঝুঁকিতে আছে শিশুরা।  অতিরিক্ত গরমে শিশুদের ডায়রিয়া,  নিউমোনিয়া, জন্ডিস পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া স্বাভাবিক ভাবে জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, কানে ইনফেকশন, টনসিলাইটিস ও নিউমোনিয়াও দেখা দিতে পারে। প্রখর রোদে ত্বকে ফোসকা পড়া, ত্বক বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, ফাঙ্গাসের সংক্রমণ, ঘামাচি ও চুলকানি দেখা দিতে পারে। ফলে রোদ থেকে শিশুদের রক্ষাতে ঘরে থাকার পরামর্শ সকলের।


চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমান তাপমাত্রা একদমই অস্বাভাবিক শিশুদের জন্য। এর ফলে নানা ভাবে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে শিশুদের রাখা জরুরি। এবং গরম থেকে বাঁচতে পারিবারিক ভাবে সচেতনতা বাড়ানোর উচিত। তাই শিফট পরিবর্তন নয়, শিশু সুরক্ষায় নিরাপদ স্থানই নিশ্চিত প্রয়োজন।

আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ও অ্যাসোসিয়েট সাইন্টিস্ট ফারহানা আফরোজ বলেন, দিন দিন তাপ প্রবাহ বেড়ে চলছে৷ ফলে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ বিশেষ করে শিশুরা অতিরিক্ত ঝুঁকিতে পড়ছে। ফলে শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, শিশুদের গরমের পাশাপাশি ধুলোবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। বাহিরের খাবার ও পানি পান জরা থেকে বিরত রাখতে হবে। তীব্র গরমে অস্বস্তি থেকে শিশুরা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে। সকল ঝুঁকি এড়াতে দিনের বেলায় ঘরে থাকাই শ্রেয়।

প্রসঙ্গত, ৩১ মার্চ থেকে দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত ২৮ দিন ধরে টানা তাপপ্রবাহ চলছে; যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটির পর আর স্কুল খোলেনি সরকার। অসহনীয় গরমের কারণে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

এই গরমে শিশুদের 'অতি উচ্চ ঝুঁকির' বিষয়টি স্মরণ করিয়ে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফও।

;

মিল্টনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য গণমাধ্যমকে জানান।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জানায়, জাতীয় দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানবসেবা পরম ধর্ম কিন্তু মানব সেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যাক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

সাংবিধানিক সংস্থাটি জানায়, অভিযুক্ত মিল্টন সমাদ্দার গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক মৃত্যু সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা মৃত লাশের শরীরে কাটাছেঁড়ার যে তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত মর্মে কমিশন মনে করে।

তাই অভিযোগের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দ্রুত কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতরকে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আগামী ৩০ মে কমিশনে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

;

লালমনিরহাটে মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী মোকছেদ আলীর (৫০) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে কি কারণে তিনি গলায় ফাঁস দিয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি।

রোববার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তিস্তা ব্যারাজ সংলগ্ন ময়নারচর এলাকার একটি গাছ থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত মোকছেদ আলী উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হামিদা বেগমের স্বামী।

এবিষয়ে গড্ডিমারী ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, রোববার দুপুরে গড্ডিমারী ইউনিয়নের তিস্তা ব্যারাজ সংলগ্ন ময়নার চর এলাকার একটি ভুট্টা ক্ষেতে এক কৃষক পানি দিচ্ছিলেন। তিনি ভুট্টা ক্ষেতের পাশের একটি গাছে মোকছেদ আলীর মরদেহটি ঝুলতে দেখে স্থানীয়দের খবর দেন। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। তিনি আরও বলেন, এ সময় তার পরনে লুঙ্গি ও শার্ট ছিল। সেই লুঙ্গির ভাজ থেকে একটি পূর্ণ ভর্তি বিষের বোতল ও শার্টের পকেট থেকে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।

এবিষয়ে জানতে গড্ডিমারী ইউপির সংরক্ষিত সদস্য ও নিহতের স্ত্রী হামিদা বেগমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুক্তা সরকার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কি কারণে তিনি গলায় ফাঁস দিয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি। এছাড়া এখন কিছু বলা যাচ্ছে না, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

এবিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো কিছু জানা যায়নি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

;

বরিশালে সাবান চুরির সাজানো মামলায় ৭ দিনের কারাভোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মাত্র একটি সাবান চুরির ঘটনায় সাজানো মামলায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও প্রধান আসামি হয়ে সাতদিন কারাভোগ করতে হয়েছে মোস্তফা কামালকে।

বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত মোজাফফর খলিফার ছেলে মোস্তফা কামালকে কারাগারে পাঠিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন বিরোধপূর্ণ জমিতে আদালতের দুই দফার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তড়িঘড়ি করে দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে মামলার বাদী আলমগীর হোসেন বলেন, সাবান চুরির ঘটনায় মারামারিটা মোস্তফা কামাল নাকি তার লোকজন দিয়ে করিয়েছেন। সে কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে। তবে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে মোস্তফাকে দেখিনি।

ওই মামলায় সাতদিন কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে রোববার সকালে মোস্তফা কামাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, যে মামলায় আমি হাজতবাস করেছি, সেই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। পুলিশ প্রশাসন এজাহার গ্রহণের আগে সরেজমিন তদন্ত করলে আমাকে কারাভোগ করতে হতো না।

মোস্তফা কামাল অভিযোগ করে বলেন, একই এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে জমিজমা দিয়ে অনেকদিন থেকেই আমার বিরোধ চলে আসছে।

ওই বিরোধের জের ধরে আমার জমি দখলের জন্য থানা পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে সাবান চুরির ঘটনায় সৃষ্ট মারধরের ঘটনায় আমাকে প্রধান আসামি করে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

সেই সাজানো মামলায় পুলিশ কোনো ধরনের তদন্ত না করেই গত ৯ এপ্রিল আমাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠায়।

১৫ এপ্রিল জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি (মোস্তফা কামাল) দেখতে পান, বোরহান উদ্দিন তার জমি দখল করে আদালতের দুই দফা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দ্রুতগতিতে ভবন নির্মাণ করে আসছেন।

জানা গেছে, ২৪ মার্চ নগরীর কাশিপুর আনসার অফিসের উল্টো দিকে নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিকেরা পাশের একটি পুকুরে গোসল করতে যান। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা রুবেলের রেখে যাওয়া সাবান শ্রমিকেরা নিয়ে যান। পরে রুবেল এসে সাবান খুঁজে না পেয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।

এসময় কয়েকজন শ্রমিক মিলে রুবেলকে মারধর করেন। খবর পেয়ে রুবেলের বাড়ির লোকজন এলে পাল্টাপাল্টি মারামারির ঘটনা ঘটে।

সাবান চুরি থেকে মারামারির ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বোরহান উদ্দিন শ্রমিক আলমগীরকে দিয়ে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করিয়েছেন। ওই মামলায় মোস্তফা কামালকে প্রধান আসামি করা হয়। পুলিশ মামলার অভিযোগের তদন্ত না করেই এজাহারভুক্ত করে ঈদের আগ মুহূর্তে মোস্তফাকে গ্রেফতার করে।

অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিন বলেন, জমিতে নিষেধাজ্ঞা আছে কি না সেটা দেখবে আদালত। মোস্তফা গংরা আমার নির্মাণাধীণ ভবনের শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়ে মালামাল নিয়ে গেছে। এ কারণে আমার শ্রমিক আলমগীর বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার বাদী আলমগীর হোসেন বলেন, মারামারিটা নাকি মোস্তফা কামালই তার লোকজন দিয়ে করিয়েছেন। সে কারণে তাকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এয়ারপোর্ট থানার এসআই (উপপরিদর্শক) সুমন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মামলা দায়েরের পর প্রধান আসামি মোস্তফা কামালকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। অন্যান্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাসুদ আলম চৌধুরী বলেন, তদন্ত শেষেই অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হেনস্তা হবে না।

;